ইপেপার । আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমারীপূজায় নারীত্বের বন্দনা আজ মহানবমী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:০৯:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৬৭৭ বার পড়া হয়েছে

e545

সমীকরণ ডেস্ক: শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহানবমী। রামায়ণ যুগের অবতার রামচন্দ্র লংকা অধিপতি রাবণ বধের পর নবমী তিথিতে এক’শ আটটি নীল পদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। তাই আজকের এই মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে এক’শ আটটি নীলপদ্মে দুর্গা পূজিত হবেন। ধর্মের গ্লানি ও অধর্ম রোধ, সাধুদের রক্ষা, অসুর বধ এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতি বছর দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা ভক্তদের মধ্যে আবির্ভূত হন। একটি মাত্র রাত পড়ে মা দুর্গা আবার ফিরে যাবেন। আজ সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ১০ সেকেন্ডের মধ্যে দেবী দুর্গার মহানবমী কল্পরম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা প্রশস্তা। পূজা শেষে দুপুর ১১টা থেকে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি প্রদান শুরু করবেন। দুপুরে অঞ্জলি প্রদান শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ১০৮টি নীলপদ্ম, অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে সব পূজাম-পে নবমী বিহিত পূজা সম্পন্ন হবে। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহূতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেলপাতা, আমকাঠ ও ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ সম্পন্ন করা হবে। সনাতন ধর্ম মতে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। মহানবমীতে ভক্তরা মায়ের কাছে দেশ, জাতি ও বিশ্বের সকল জীবের মঙ্গল কামনায় আশীর্বাদ চাইবেন। মহাষ্টমী পালিত: শারদীয় দুর্গাপূজার তৃতীয় দিনে রোববার মহাষ্টমী পালিত হয়। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মধ্যে দেবী দুর্গার মহাষ্টম্যাদি কল্পরম্ভ ও মহাষ্টমী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে মহাষ্টমীর সূচনা হয়। দিনভর পূজাম-পগুলোতে অগণিত ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। রাজধানীর সব মন্দিরেই ভক্তরা কয়েক দফায় অঞ্জলি প্রদান করেন। পূজা অর্চনা শেষে দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। দেবী দুর্গা মহাষ্টমীতে নবরূপে ধরায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত দেবীকে নানা উপাচারে আরাধনা করে সব অনাচার আর সংকট মোচন এবং বিশ্ববাসীর শান্তির জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে পুরোহিত ও ভক্তরা প্রার্থনা করেন। সন্ধ্যায় সন্ধিপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ‘মহাষ্টমী’। এদিন রাজধানীর প্রতিটি পূজামণ্ডপে ভক্তদের পদচারণে মুখোর ছিল। শান্তি ও শক্তি রূপে দেবী দুর্গার দর্শন ও আশীর্বাদ পেতে হাজার হাজার ভক্তের ঢল নামে। নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পূজাম-পে প্রবেশ করতে দেখা যায়। রোগ-শোক থেকে মুক্তি, সুখী-সমৃদ্ধ জীবন পেতে এবং দুর্দশা লাঘবকারী দেবীর আশীর্বাদ নিতে পূজাম-পগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়ে পূজাম-পগুলো মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মহাষ্টমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল কুমারী পূজা। সৃষ্টি-স্থিতি-লয়থএই ত্রিবিধ শক্তি বীজ আকারে কুমারীতে ‘নিহিত’, সেই বিশ্বাস থেকেই দেবী দুর্গার কুমারীরূপের আরাধনা করেন ভক্তরা। নারীত্বের বন্দনায় আবারও ধ্বনিত হয়, ‘নারী ভোগ্যা নয়, পূজ্যা’। সারাদেশে রামকৃষ্ণ মিশনের মতো ঢাকার গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে রোববার সকালে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠে সকাল ১১টায় শুরু হয় কুমারি পূজা। তবে ভক্তদের ভিড় ছিল আরও আগে থেকে। এবারের কুমারীর নাম সর্বাণী ভট্টাচার্য বিদ্যা। সে এসেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার আউপাড়া থেকে। নারায়ণ ভট্টাচার্য ও অনিতা ভট্টাচার্যের মেয়ে সর্বাণী আউপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। যোগিনীতন্য, কুলার্বতন্য, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহস্রনাম, তন্যসার, প্রাতোষিনী, পুরোহিত দর্পণথহিন্দু শাস্ত্রের এসব ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি ও মাহাত্ম্য বিশদভাবে রয়েছে। তন্ত্রসার মতে, ‘১ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত; তাদের অবশ্যিই ঋতুমতি হওয়া চলবে না।’ মেরুতন্ত্রে বলা আছে, ‘সর্বকামনা সিদ্ধির জন্য ব্রাহ্মণ কন্যা, যশোলাভের জন্য ক্ষত্রিয় কন্যা, ধনলাভের জন্য বৈশ্য কন্যা ও পুত্র লাভের জন্য শূদ্রকুল জাত কন্যা কুমারী পূজার জন্য যোগ্য।’ ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুর মঠে কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে এ পূজা চলে আসছে। নববস্ত্র পরিহিতা হয়ে কুমারী দেবী আসেন বিল্বপত্র, পুষ্পাসনে আসীন হয়ে। তার হাতে ফুল, কপালে লাল সিঁদুর এবং পায়ে আলতা। যেহেতু কুমারির বয়স সাত, তাই তার নামকরণ হয়েছে মালিনী। পূজা শেষে বিদ্যা বলে, ‘জগতের সকলের কল্যাণ হোক, সেটাই আমার প্রার্থনা। জগতের সকলের মঙ্গল হোক, সকলে সুখে শান্তিতে থাকুক।’ এর আগে সকাল সাড়ে ৬টায় মহাষ্টমী পূজা শুরু হয়। পূজা পরিচালনা করেন প্রধান পরিচালক গুণেশ চৈতন্য। তন্ত্রধারক ছিলেন মহারাজ তিরাত্মানন্দ। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশ্বানন্দ কুমারী পূজার মাহাত্ম্য বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের নারীদের ওপর অত্যাচার যেন কম হয়, সেজন্য আমরা কুমারী রূপে মায়ের আরাধনা করেছি। আমাদের সকলের মধ্য থেকে আসুরিক ভাব দমন এবং একই সঙ্গে দৈবশক্তি তথা মাতৃশক্তি জাগরিত হোক এটাই মূল কথা।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কুমারীপূজায় নারীত্বের বন্দনা আজ মহানবমী

আপলোড টাইম : ০১:০৯:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬

e545

সমীকরণ ডেস্ক: শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহানবমী। রামায়ণ যুগের অবতার রামচন্দ্র লংকা অধিপতি রাবণ বধের পর নবমী তিথিতে এক’শ আটটি নীল পদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। তাই আজকের এই মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে এক’শ আটটি নীলপদ্মে দুর্গা পূজিত হবেন। ধর্মের গ্লানি ও অধর্ম রোধ, সাধুদের রক্ষা, অসুর বধ এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতি বছর দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা ভক্তদের মধ্যে আবির্ভূত হন। একটি মাত্র রাত পড়ে মা দুর্গা আবার ফিরে যাবেন। আজ সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ১০ সেকেন্ডের মধ্যে দেবী দুর্গার মহানবমী কল্পরম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা প্রশস্তা। পূজা শেষে দুপুর ১১টা থেকে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি প্রদান শুরু করবেন। দুপুরে অঞ্জলি প্রদান শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ১০৮টি নীলপদ্ম, অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে সব পূজাম-পে নবমী বিহিত পূজা সম্পন্ন হবে। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহূতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেলপাতা, আমকাঠ ও ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ সম্পন্ন করা হবে। সনাতন ধর্ম মতে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। মহানবমীতে ভক্তরা মায়ের কাছে দেশ, জাতি ও বিশ্বের সকল জীবের মঙ্গল কামনায় আশীর্বাদ চাইবেন। মহাষ্টমী পালিত: শারদীয় দুর্গাপূজার তৃতীয় দিনে রোববার মহাষ্টমী পালিত হয়। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মধ্যে দেবী দুর্গার মহাষ্টম্যাদি কল্পরম্ভ ও মহাষ্টমী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে মহাষ্টমীর সূচনা হয়। দিনভর পূজাম-পগুলোতে অগণিত ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। রাজধানীর সব মন্দিরেই ভক্তরা কয়েক দফায় অঞ্জলি প্রদান করেন। পূজা অর্চনা শেষে দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। দেবী দুর্গা মহাষ্টমীতে নবরূপে ধরায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত দেবীকে নানা উপাচারে আরাধনা করে সব অনাচার আর সংকট মোচন এবং বিশ্ববাসীর শান্তির জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে পুরোহিত ও ভক্তরা প্রার্থনা করেন। সন্ধ্যায় সন্ধিপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ‘মহাষ্টমী’। এদিন রাজধানীর প্রতিটি পূজামণ্ডপে ভক্তদের পদচারণে মুখোর ছিল। শান্তি ও শক্তি রূপে দেবী দুর্গার দর্শন ও আশীর্বাদ পেতে হাজার হাজার ভক্তের ঢল নামে। নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পূজাম-পে প্রবেশ করতে দেখা যায়। রোগ-শোক থেকে মুক্তি, সুখী-সমৃদ্ধ জীবন পেতে এবং দুর্দশা লাঘবকারী দেবীর আশীর্বাদ নিতে পূজাম-পগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়ে পূজাম-পগুলো মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মহাষ্টমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল কুমারী পূজা। সৃষ্টি-স্থিতি-লয়থএই ত্রিবিধ শক্তি বীজ আকারে কুমারীতে ‘নিহিত’, সেই বিশ্বাস থেকেই দেবী দুর্গার কুমারীরূপের আরাধনা করেন ভক্তরা। নারীত্বের বন্দনায় আবারও ধ্বনিত হয়, ‘নারী ভোগ্যা নয়, পূজ্যা’। সারাদেশে রামকৃষ্ণ মিশনের মতো ঢাকার গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে রোববার সকালে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠে সকাল ১১টায় শুরু হয় কুমারি পূজা। তবে ভক্তদের ভিড় ছিল আরও আগে থেকে। এবারের কুমারীর নাম সর্বাণী ভট্টাচার্য বিদ্যা। সে এসেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার আউপাড়া থেকে। নারায়ণ ভট্টাচার্য ও অনিতা ভট্টাচার্যের মেয়ে সর্বাণী আউপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। যোগিনীতন্য, কুলার্বতন্য, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহস্রনাম, তন্যসার, প্রাতোষিনী, পুরোহিত দর্পণথহিন্দু শাস্ত্রের এসব ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি ও মাহাত্ম্য বিশদভাবে রয়েছে। তন্ত্রসার মতে, ‘১ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত; তাদের অবশ্যিই ঋতুমতি হওয়া চলবে না।’ মেরুতন্ত্রে বলা আছে, ‘সর্বকামনা সিদ্ধির জন্য ব্রাহ্মণ কন্যা, যশোলাভের জন্য ক্ষত্রিয় কন্যা, ধনলাভের জন্য বৈশ্য কন্যা ও পুত্র লাভের জন্য শূদ্রকুল জাত কন্যা কুমারী পূজার জন্য যোগ্য।’ ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুর মঠে কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে এ পূজা চলে আসছে। নববস্ত্র পরিহিতা হয়ে কুমারী দেবী আসেন বিল্বপত্র, পুষ্পাসনে আসীন হয়ে। তার হাতে ফুল, কপালে লাল সিঁদুর এবং পায়ে আলতা। যেহেতু কুমারির বয়স সাত, তাই তার নামকরণ হয়েছে মালিনী। পূজা শেষে বিদ্যা বলে, ‘জগতের সকলের কল্যাণ হোক, সেটাই আমার প্রার্থনা। জগতের সকলের মঙ্গল হোক, সকলে সুখে শান্তিতে থাকুক।’ এর আগে সকাল সাড়ে ৬টায় মহাষ্টমী পূজা শুরু হয়। পূজা পরিচালনা করেন প্রধান পরিচালক গুণেশ চৈতন্য। তন্ত্রধারক ছিলেন মহারাজ তিরাত্মানন্দ। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশ্বানন্দ কুমারী পূজার মাহাত্ম্য বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের নারীদের ওপর অত্যাচার যেন কম হয়, সেজন্য আমরা কুমারী রূপে মায়ের আরাধনা করেছি। আমাদের সকলের মধ্য থেকে আসুরিক ভাব দমন এবং একই সঙ্গে দৈবশক্তি তথা মাতৃশক্তি জাগরিত হোক এটাই মূল কথা।’