ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাদিজার বাবার আর্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:০৭:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

khadiza_27262_1476003379

সমীকরণ ডেস্ক: সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। স্বজনরা আশা করছেন, খাদিজা সুস্থ হয়ে উঠবে। তার চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন বাবা মাসুক মিয়া। তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত নিজেরাই চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছেন। সরকারের তরফে চিকিৎসা খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি এসেছে। এ সহযোগিতা যেন দ্রুতই করা হয়। সঙ্গে আলাপচারিতায় মাসুক মিয়া জানিয়েছেন, মেয়ের ওপর বর্বর হামলার খবর পেয়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি চান না আরো কোনো পিতা এমন পরিস্থিতির শিকার হোক। নার্গিসের ওপর বর্বর হামলার খবর পেয়ে ৫ই অক্টোবর বিকালে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ ফ্লাইটে জেদ্দা থেকে ঢাকায় ফিরেন তিনি। দেশে ফেরার আগে মক্কায় গিয়ে মেয়ের জন্য দোয়া করেছেন। মাসুক মিয়া বলেন, সিলেট পুণ্যভূমি। এখানকার মানুষ অনেক সভ্য, ভদ্র। এখানে বদরুলের মতো একটা কুলাঙ্গার জন্ম নিতে পারে তা মানুষ ভাবতেও পারে না। কিন্তু যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে আরো অনেক মানুষ ছিল। তারা তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিলে আমার মেয়ের হয়তো এই অবস্থা হতো না। তারা ভিডিও না  করে মেয়েকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারতেন। তবে যারা নার্গিসকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাসুক মিয়া বলেন, ইমরান নামের এক সাধারণ ছাত্র আমার মেয়েকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে গেছে। নার্গিসের রক্তে তার শার্ট-প্যান্ট লাল হয়ে গেছে। আল্লাহর কৃপায় ও ওসমানী মেডিকেল এবং স্কয়ারের ডাক্তারদের চিকিৎসার কারণেই মেয়েটি এখন সুস্থ হয়ে উঠছে। সবার দোয়া ও আল্লাহর রহমতে হয়তো সুস্থ হয়ে উঠবে। বদরুল সম্পর্কে নার্গিসের পিতা বলেন, বদরুল কে তা জানতাম না। শুনেছি বেশ আগে সে দুই মাস আমার বাড়িতে লজিং ছিল। পরে আমরা সন্তানরা তার আচরণ টের পেয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ওই ছেলে এরকম কাণ্ড করবে তা কেউ কল্পনা করেনি। আমি দেশের বাইরে থাকি। যে কারণে সন্তানদের নিয়ে চিন্তায় থাকি। আমার মেয়ে লেখাপড়া করতো। তার আসা-যাওয়ার জন্য একটা সিএনজি অটোরিকশা আছে। আমার ভাই তাকে কলেজে নিয়ে যেত, নিয়ে আসতো। তারপরও এই ঘটনা ঘটে গেল। মাসুক মিয়া বলেন, শুধু আমার মেয়েকে কুপিয়েছে এজন্য না। এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে। এভাবে যেন আর কোনো নার্গিসকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যেতে না হয়। তাই বদরুলের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কথা বলেছেন। দলীয়ভাবে কাউকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না তিনি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীরা আমার মেয়ের খোঁজ নিচ্ছেন। তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাই আশা করি বদরুলের কঠোর শাস্তি হবে। তবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। নার্গিসের চিকিৎসার ব্যয় সম্পর্কে মাসুক মিয়া বলেন, একজন মন্ত্রী মিডিয়ায় বলেছেন চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ খোঁজ নেননি। আমরা নিজেরাই চিকিৎসার ব্যয় বহন করছি। পুরো বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে, স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ও অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর মির্জা নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, খাদিজা আক্তার নার্গিসের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। আমরা তাকে নিয়ে সম্ভাবনা দেখছি। তবে আরো কিছুদিন না গেলে এর চেয়ে বেশি বলা যাবে না বলে জানান তিনি। তার আগে শনিবারে নার্গিসের চিকিৎসক ডা. রেজাউস সাত্তার জানিয়েছেন, খাদিজা কনসাস নয়। তবে তার উন্নতি হয়েছে। তাকে ব্যথা দিলে সে রেসপন্স করছে। ব্যথা দিয়ে দেখেছি, তাকাচ্ছে, ডান হাত ও পা নাড়াচ্ছে। গত ৩রা অক্টোবর বিকালে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর হামলা চালায় শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। কলেজ ক্যাম্পাসের পুকুরপাড়ে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খাদিজাকে গুরুতর আহত করে সে। পরে হামলাকারী বদরুলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। বদরুল এখন কারাগারে রয়েছে। এদিকে বদরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে সিলেটে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

খাদিজার বাবার আর্তি

আপলোড টাইম : ০১:০৭:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬

khadiza_27262_1476003379

সমীকরণ ডেস্ক: সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। স্বজনরা আশা করছেন, খাদিজা সুস্থ হয়ে উঠবে। তার চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন বাবা মাসুক মিয়া। তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত নিজেরাই চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছেন। সরকারের তরফে চিকিৎসা খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি এসেছে। এ সহযোগিতা যেন দ্রুতই করা হয়। সঙ্গে আলাপচারিতায় মাসুক মিয়া জানিয়েছেন, মেয়ের ওপর বর্বর হামলার খবর পেয়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি চান না আরো কোনো পিতা এমন পরিস্থিতির শিকার হোক। নার্গিসের ওপর বর্বর হামলার খবর পেয়ে ৫ই অক্টোবর বিকালে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ ফ্লাইটে জেদ্দা থেকে ঢাকায় ফিরেন তিনি। দেশে ফেরার আগে মক্কায় গিয়ে মেয়ের জন্য দোয়া করেছেন। মাসুক মিয়া বলেন, সিলেট পুণ্যভূমি। এখানকার মানুষ অনেক সভ্য, ভদ্র। এখানে বদরুলের মতো একটা কুলাঙ্গার জন্ম নিতে পারে তা মানুষ ভাবতেও পারে না। কিন্তু যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে আরো অনেক মানুষ ছিল। তারা তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিলে আমার মেয়ের হয়তো এই অবস্থা হতো না। তারা ভিডিও না  করে মেয়েকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারতেন। তবে যারা নার্গিসকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাসুক মিয়া বলেন, ইমরান নামের এক সাধারণ ছাত্র আমার মেয়েকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে গেছে। নার্গিসের রক্তে তার শার্ট-প্যান্ট লাল হয়ে গেছে। আল্লাহর কৃপায় ও ওসমানী মেডিকেল এবং স্কয়ারের ডাক্তারদের চিকিৎসার কারণেই মেয়েটি এখন সুস্থ হয়ে উঠছে। সবার দোয়া ও আল্লাহর রহমতে হয়তো সুস্থ হয়ে উঠবে। বদরুল সম্পর্কে নার্গিসের পিতা বলেন, বদরুল কে তা জানতাম না। শুনেছি বেশ আগে সে দুই মাস আমার বাড়িতে লজিং ছিল। পরে আমরা সন্তানরা তার আচরণ টের পেয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ওই ছেলে এরকম কাণ্ড করবে তা কেউ কল্পনা করেনি। আমি দেশের বাইরে থাকি। যে কারণে সন্তানদের নিয়ে চিন্তায় থাকি। আমার মেয়ে লেখাপড়া করতো। তার আসা-যাওয়ার জন্য একটা সিএনজি অটোরিকশা আছে। আমার ভাই তাকে কলেজে নিয়ে যেত, নিয়ে আসতো। তারপরও এই ঘটনা ঘটে গেল। মাসুক মিয়া বলেন, শুধু আমার মেয়েকে কুপিয়েছে এজন্য না। এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে। এভাবে যেন আর কোনো নার্গিসকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যেতে না হয়। তাই বদরুলের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কথা বলেছেন। দলীয়ভাবে কাউকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না তিনি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীরা আমার মেয়ের খোঁজ নিচ্ছেন। তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাই আশা করি বদরুলের কঠোর শাস্তি হবে। তবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। নার্গিসের চিকিৎসার ব্যয় সম্পর্কে মাসুক মিয়া বলেন, একজন মন্ত্রী মিডিয়ায় বলেছেন চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ খোঁজ নেননি। আমরা নিজেরাই চিকিৎসার ব্যয় বহন করছি। পুরো বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে, স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ও অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর মির্জা নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, খাদিজা আক্তার নার্গিসের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। আমরা তাকে নিয়ে সম্ভাবনা দেখছি। তবে আরো কিছুদিন না গেলে এর চেয়ে বেশি বলা যাবে না বলে জানান তিনি। তার আগে শনিবারে নার্গিসের চিকিৎসক ডা. রেজাউস সাত্তার জানিয়েছেন, খাদিজা কনসাস নয়। তবে তার উন্নতি হয়েছে। তাকে ব্যথা দিলে সে রেসপন্স করছে। ব্যথা দিয়ে দেখেছি, তাকাচ্ছে, ডান হাত ও পা নাড়াচ্ছে। গত ৩রা অক্টোবর বিকালে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর হামলা চালায় শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। কলেজ ক্যাম্পাসের পুকুরপাড়ে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খাদিজাকে গুরুতর আহত করে সে। পরে হামলাকারী বদরুলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। বদরুল এখন কারাগারে রয়েছে। এদিকে বদরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে সিলেটে।