দেশে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে পাঁচ বছর আগে নারী ধূমপানকারীর হার ছিল ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে গিয়ে ৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে
- আপলোড টাইম : ১২:০৬:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০১৬
- / ৪২৮ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের উন্মুক্ত স্থানে ধূমপায়ী নারীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বস্তিসহ ঘনবসতিপূর্ণ নিম্নশ্রেণির মানুষ বসবাসকারী এলাকাগুলোতেও অসংখ্য নারী প্রকাশ্যে ও গোপনে ধূমপান করছেন। বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, নামিদামি রেস্তোরাঁসহ অবকাশ যাপন কেন্দ্রগুলোতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও ছিন্নমূল নারীদের ধূমপানের চিত্র এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
এদিকে বাংলাদেশে নারীদের অবাধ এই ধূমপানের চিত্র তামাক নিয়ে কাজ করা দেশীয় সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ক্রোয়েশিয়া ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথের এক প্রতিবেদনে নারী ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শীর্ষে স্থান দেয়া হয়েছে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশে নারী স্বাস্থ্য ক্রমেই ধ্বংসের মুখে পড়তে হবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
ধূমপানবিরোধী সংগঠন ক্যাম্পেইন ফর ক্লিন এয়ার ও বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি এবং ডাবিস্নউএইচও এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫ বছর আগে নারী ধূমপানকারীর হার ছিল ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে গিয়ে ৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বিড়ি সিগারেটের মাধ্যমে আগে যেখানে ধূমপান করতেন ১ দশমিক ৫ শতাংশ এখন তা বেড়ে ২.৬ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ ২ কোটিরও বেশি নারী তামাক ও ধূমপানে অভ্যস্ত। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, কেবল বিড়ি সিগারেটের মাধ্যমেই প্রায় ৬০ হাজার নারী ধূমপান করেন আর ধূমপান না করেও প্রায় ১ কোটি নারী পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে নারীদের ধূমপান নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক নারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৩.৩ শতাংশ (৪ কোটি ১৩ লাখ) নারী কোনো না কোনোভাবে তামাক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করছেন। আর এই বয়সের পুরুষদের মধ্যে ৪৭. ৭ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ১২ লাখ পুরুষ ধূমপান করছেন। শুধু মহিলাদের মধ্যেই ১.৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭ লাখ মহিলা ধূমপান করছেন। অন্যদিকে টোব্যাকো এটলাসের ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা ১.৮ শতাংশ এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা ১.১ শতাংশ। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে বাংলাদেশ ২০০৯ সালে একটি জরিপ চালায় উক্ত জরিপে দেখা যায়, ২৭.৯ শতাংশ নারী অর্থাৎ ১ কোটি ৩৪ লাখ নারী ধোঁয়াহীন বা চর্বণযোগ্য তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমান বিশ্বে প্রায় ২২ কোটি ধূমপায়ী নারী রয়েছেন। এর মধ্যে উচ্চবিত্ত নারীরা কেবল ফ্যাশন বা সামাজিক স্ট্যাটাসের কারণে ক্লাব, রেস্তোরাঁ, বার, পর্যটনকেন্দ্র বা পারিবারিক আসরে ধূমপান করেন। আর দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা নারীরা অনিচ্ছাকৃতভাবে ধূমপানে আসক্ত হন। তারা বলেন, পুরুষের তুলনায় নারী ধূমপায়ীর স্বাস্থ্য ও মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। এর জন্য পারিবারিক সচেতনতা, তামাক মুক্ত দিবস উৎযাপন, সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচি গ্রহণ ও আইন করে এসবের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা দরকার।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাজমা বেগম বলেন, প্রথমত ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নারী-পুরুষ সবাইকে সচেতন করতে হবে। তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট আইন করে তা মানতে বাধ্য করতে হবে। বাজারের বিক্রীত ইলেকট্রিক সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাতীয় পণ্য যত্রতত্র বিক্রির ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। আর এ বিষয়ে পরিবার থেকে রাষ্ট্র সবাইকে এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
তাবিনাজের সমন্বয়কারী সাইদা আক্তার বলেন, দেশে ধূমপানবিরোধী আইন থাকলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন নেই। তামাক ও নেশা জাতীয় পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে নজরদারির অভাব রয়েছে। বিশেষ করে আদিবাসী, গ্রামীণ, ভাসমান, কলকারখানা ও ইট ভাটায় কাজ করা নারীদের ধূমপানে ক্ষতির ব্যাপারে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এছাড়া তামাক, জর্দা, গুল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট আইন থাকলেও সেটা তারা মানছে না। এর জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা হাসপাতালের চিকিৎসক গাইনি অঙ্কলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম বলেন, সিগারেটে থাকা নিকোটিনের ফলে নারী সাধারণত সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হন, আবার জন্ম দিলেও সন্তান বিকলাঙ্গ বা অপুষ্টিতে ভোগে। অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে গর্ভবতী নারীর জরায়ু পানি ভেঙে যেতে পারে। সন্তান প্রসবের সময় অতিরিক্ত ক্ষরণ হতে পারে। ধূমপায়ী মায়ের সন্তান সাড়া জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাদের রক্তের শিরাতে অনেক সময় প্রসারণ বা সংকোচন দেখা দেয়। এছাড়াও এসব মায়েদের ফুসফুস ও জরায়ু মুখ ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।