ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কোপানোর দায় স্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের জবানবন্দি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪০৬ বার পড়া হয়েছে

image_1683_258447সমীকরণ ডেস্ক: সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কোপানোর দায়ে স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম। বুধবার দুপুরে পুলিশ বদরুলকে হাসপাতাল থেকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। পরে দুপুর ২টার দিকে তাকে সিলেট মহানগর অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় বদরুল ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেন অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম উম্মে সরাবন তহুরা। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য, বদরুল জবানবন্দিতে বলেছেন যে তিনি খাদিজাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। খাদিজার বাড়িতেও তার যাতায়াত ছিল। ২০১০ সাল থেকে খাদিজার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। খাদিজাকে তিনি প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষোভে তিনি ওই দিন চাপাতি নিয়ে তাকে আক্রমণ করেছিলেন। ‘রাগের মাথায়’ ঘটনাটি ঘটেছে বলে তার ভাষ্য। জবানবন্দি শেষে বদরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মামলার তদন্ত-তদারকের দায়িত্বে থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ?’বদরুল সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছেন। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে তারা এ মামলার অভিযোগপত্র আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দিতে পারবেন।
জীবন নিয়ে আশঙ্কা: এদিকে খাদিজার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক রেজাউস সাত্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন। বুধবার চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেন, খাদিজার শারীরিক পরিস্থিতি আগের মতোই গুরুতর। তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আছেন। মাথায় কোপের কারণে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। মঙ্গলবার খাদিজার দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার হয় স্কয়ার হাসপাতালে। তখন চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেছিলেন, ‘আমরা খুব সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে রিসিভ করেছি। এখন ইলেকটিভ ভেন্টিলেশনে আছেন (লাইফ সাপোর্ট)। তার মাথায় ও দুই হাতে অসংখ্য কোপের ক্ষত। খুব জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ খাদিজা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত সোমবার পরীক্ষা দিতে সিলেটের এমসি কলেজে গিয়েছিলেন তিনি। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে খাদিজাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম (২৬)। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউ কেউ খাদিজাকে কোপানোর দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন। সেই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার নৃশংসতায় শিউরে উঠে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছে হাজারো মানুষ। কলেজছাত্র ও স্থানীয় জনতা রক্তাক্ত খাদিজাকে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে ঢাকায় আনেন স্বজনরা। মঙ্গলবার সকালে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার ঘটনায় খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বদরুলের বিরুদ্ধে সিলেটের শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সি বলেন, এ মামলায় বদরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

কোপানোর দায় স্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের জবানবন্দি

আপলোড টাইম : ১১:০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৬

image_1683_258447সমীকরণ ডেস্ক: সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কোপানোর দায়ে স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম। বুধবার দুপুরে পুলিশ বদরুলকে হাসপাতাল থেকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। পরে দুপুর ২টার দিকে তাকে সিলেট মহানগর অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় বদরুল ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেন অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম উম্মে সরাবন তহুরা। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য, বদরুল জবানবন্দিতে বলেছেন যে তিনি খাদিজাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। খাদিজার বাড়িতেও তার যাতায়াত ছিল। ২০১০ সাল থেকে খাদিজার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। খাদিজাকে তিনি প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষোভে তিনি ওই দিন চাপাতি নিয়ে তাকে আক্রমণ করেছিলেন। ‘রাগের মাথায়’ ঘটনাটি ঘটেছে বলে তার ভাষ্য। জবানবন্দি শেষে বদরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মামলার তদন্ত-তদারকের দায়িত্বে থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ?’বদরুল সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছেন। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে তারা এ মামলার অভিযোগপত্র আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দিতে পারবেন।
জীবন নিয়ে আশঙ্কা: এদিকে খাদিজার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক রেজাউস সাত্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন। বুধবার চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেন, খাদিজার শারীরিক পরিস্থিতি আগের মতোই গুরুতর। তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আছেন। মাথায় কোপের কারণে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। মঙ্গলবার খাদিজার দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার হয় স্কয়ার হাসপাতালে। তখন চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেছিলেন, ‘আমরা খুব সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে রিসিভ করেছি। এখন ইলেকটিভ ভেন্টিলেশনে আছেন (লাইফ সাপোর্ট)। তার মাথায় ও দুই হাতে অসংখ্য কোপের ক্ষত। খুব জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ খাদিজা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত সোমবার পরীক্ষা দিতে সিলেটের এমসি কলেজে গিয়েছিলেন তিনি। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে খাদিজাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম (২৬)। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউ কেউ খাদিজাকে কোপানোর দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন। সেই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার নৃশংসতায় শিউরে উঠে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছে হাজারো মানুষ। কলেজছাত্র ও স্থানীয় জনতা রক্তাক্ত খাদিজাকে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে ঢাকায় আনেন স্বজনরা। মঙ্গলবার সকালে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার ঘটনায় খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বদরুলের বিরুদ্ধে সিলেটের শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সি বলেন, এ মামলায় বদরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।