ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

পদার্থ নোবেল পেলেন ৩ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:০৪:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪১৪ বার পড়া হয়েছে

1475581344

সমীকরণ ডেস্ক: পদার্থের কটি অবস্থা? প্রশ্ন করলে কচিকাঁচারাও হাত তুলবে। উত্তরটি তো আসলে খুব সহজ। অবস্থা তিনটি কঠিন, তরল এবং বাষ্প। কিন্তু পদার্থবিদদের প্রশ্নটি করলে মুচকি হাসবেন। না তিনটি নয়, তারা জানাবেন, অতি উচ্চ তাপে, অতি শীতল অবস্থায় বা অতি তীব্র চৌম্বকক্ষেত্রে পদার্থের নানা বিচিত্র অবস্থা তৈরি হয়, যেমন সুপার কন্ডাক্টর বা সুপার ফ্লুইড। সৃষ্টি হয় নানা বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিবর্তন হয় ধাপে ধাপে। গণিতের টোপোলজি শাখাকে ব্যবহার করে এই ধাপে ধাপে পরিবর্তনের (ফেজ ট্রানজিশন) চরিত্র ব্যাখ্যা করেছেন ডেভিড জে থাওলেস, ডানকান হ্যালডেন ও মাইকেল কোস্টারলিৎজ। ২০১৬-এর নোবেল পুরস্কার তাদের সেই কাজেরই স্বীকৃতি দিল। এ বাবদ ৮০ লাখ সুইস ক্রোনার বা সাত লাখ ১৮ হাজার ডলারের অর্ধেক পাবেন থৌলেস। বাকিটা ভাগ করে নেবেন হ্যালডেন এবং কোস্টেরলিৎজ। জন্ম সূত্রে তিনজনই ব্রিটেনের নাগরিক। তবে কর্ম সূত্রে তিনজনই এখন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। সাধারণত পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের সময় বাধা বা রোধ তৈরি হয়। কিন্তু সেই পদার্থকে অতি শীতল অবস্থায় নিয়ে গেলে অনেক সময় সেই বাধা উধাও হয়ে যায়। তৈরি হয় সুপার কন্ডাক্টর। ১৯৩০-এর দশকে রাশিয়ার পদার্থবিদ পিওতর কাপিতসা হিলিয়াম গ্যাসকে অতি শীতল অবস্থায় নিয়ে গেলেন (-২৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দেখলেন তা হামাগুঁডি দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। কারণ, ওই উষ্ণতায় সান্দ্রতা (ভিসকোসিটি) শূন্য হয়ে গেছে। এই কাজ ১৯৭৮-এ কাপিতসাকে নোবেল এনে দেয়। কিন্তু পদার্থের এই বিচিত্র আচরণ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি ছিল। তারা মনে করতেন, তাপমাত্রার এই বিপুল হেরফেরে পদার্থের মধ্যে শৃঙ্খল নষ্ট হয়ে যায়। আর যদি কোনো শৃঙ্খলই না থাকে, তা হলে অবস্থার পরিবর্তন (ফেজ ট্রানজিশন) কী করে বোঝা যাবে। ১৯৭০-এর দশকে থৌলেস আর কোস্টেরলিৎজ এই ভাবনাকেই চ্যালেঞ্জ করবেন বলে ঠিক করেন। তাও খেলার ছলে, ব্রিটেনের বার্মিংহামের এক আড্ডায়। আর এই কাজে ব্যবহার করেন গণিতের টোপোলজি শাখাটিকে।। এই শাখায় কোনো পদার্থের অবস্থার তখনই পরিবর্তন হয় যখন পদার্থে থাকা গর্তের সংখ্যা পরিবর্তন হয়। গর্তের সংখ্যা পরিবর্তন না হলে যে কোনো আকারে পদার্থটি একই অবস্থায় রয়েছে। অতি শীতল অবস্থায় দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রে পদার্থের মধ্যে ছোট ছোট ভর্টিসেস তৈরি হয়। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়লে এই ভর্টিসেসগুলো পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। একে পদার্থবিদ্যার ভাষায় বলে ফেজ ট্রানজিশন। ১৯৮০-র দশকে থৌলেস ও হ্যালডেন পদার্থের বিভিন্ন অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন নিয়ে কাজ শুরু করেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল তত্ত্বের এই বিষয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা অতি শীতল অবস্থায় বা খুব শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকা পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহন নিয়ে নতুন তত্ত্বের হদিস দিলেন। এর সঙ্গেই পদার্থবিদ্যার নতুন পথ খুলে গেল। তারা দেখালেন কীভাবে পদার্থের এই বিচিত্র বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যেও গণিতের প্রয়োগ করে শৃঙ্খলের সন্ধান করা যায়। এই তিনজনের কাজ ফলিত পদার্থবিদ্যা ও প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি। বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং নতুন সুপার কন্ডাক্টর তৈরিতে। বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। যে কম্পিউটার আজকের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সুপার কম্পিউটারের থেকেও অনেক শক্তিশালী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

পদার্থ নোবেল পেলেন ৩ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী

আপলোড টাইম : ০২:০৪:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০১৬

1475581344

সমীকরণ ডেস্ক: পদার্থের কটি অবস্থা? প্রশ্ন করলে কচিকাঁচারাও হাত তুলবে। উত্তরটি তো আসলে খুব সহজ। অবস্থা তিনটি কঠিন, তরল এবং বাষ্প। কিন্তু পদার্থবিদদের প্রশ্নটি করলে মুচকি হাসবেন। না তিনটি নয়, তারা জানাবেন, অতি উচ্চ তাপে, অতি শীতল অবস্থায় বা অতি তীব্র চৌম্বকক্ষেত্রে পদার্থের নানা বিচিত্র অবস্থা তৈরি হয়, যেমন সুপার কন্ডাক্টর বা সুপার ফ্লুইড। সৃষ্টি হয় নানা বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিবর্তন হয় ধাপে ধাপে। গণিতের টোপোলজি শাখাকে ব্যবহার করে এই ধাপে ধাপে পরিবর্তনের (ফেজ ট্রানজিশন) চরিত্র ব্যাখ্যা করেছেন ডেভিড জে থাওলেস, ডানকান হ্যালডেন ও মাইকেল কোস্টারলিৎজ। ২০১৬-এর নোবেল পুরস্কার তাদের সেই কাজেরই স্বীকৃতি দিল। এ বাবদ ৮০ লাখ সুইস ক্রোনার বা সাত লাখ ১৮ হাজার ডলারের অর্ধেক পাবেন থৌলেস। বাকিটা ভাগ করে নেবেন হ্যালডেন এবং কোস্টেরলিৎজ। জন্ম সূত্রে তিনজনই ব্রিটেনের নাগরিক। তবে কর্ম সূত্রে তিনজনই এখন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। সাধারণত পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের সময় বাধা বা রোধ তৈরি হয়। কিন্তু সেই পদার্থকে অতি শীতল অবস্থায় নিয়ে গেলে অনেক সময় সেই বাধা উধাও হয়ে যায়। তৈরি হয় সুপার কন্ডাক্টর। ১৯৩০-এর দশকে রাশিয়ার পদার্থবিদ পিওতর কাপিতসা হিলিয়াম গ্যাসকে অতি শীতল অবস্থায় নিয়ে গেলেন (-২৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দেখলেন তা হামাগুঁডি দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। কারণ, ওই উষ্ণতায় সান্দ্রতা (ভিসকোসিটি) শূন্য হয়ে গেছে। এই কাজ ১৯৭৮-এ কাপিতসাকে নোবেল এনে দেয়। কিন্তু পদার্থের এই বিচিত্র আচরণ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি ছিল। তারা মনে করতেন, তাপমাত্রার এই বিপুল হেরফেরে পদার্থের মধ্যে শৃঙ্খল নষ্ট হয়ে যায়। আর যদি কোনো শৃঙ্খলই না থাকে, তা হলে অবস্থার পরিবর্তন (ফেজ ট্রানজিশন) কী করে বোঝা যাবে। ১৯৭০-এর দশকে থৌলেস আর কোস্টেরলিৎজ এই ভাবনাকেই চ্যালেঞ্জ করবেন বলে ঠিক করেন। তাও খেলার ছলে, ব্রিটেনের বার্মিংহামের এক আড্ডায়। আর এই কাজে ব্যবহার করেন গণিতের টোপোলজি শাখাটিকে।। এই শাখায় কোনো পদার্থের অবস্থার তখনই পরিবর্তন হয় যখন পদার্থে থাকা গর্তের সংখ্যা পরিবর্তন হয়। গর্তের সংখ্যা পরিবর্তন না হলে যে কোনো আকারে পদার্থটি একই অবস্থায় রয়েছে। অতি শীতল অবস্থায় দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রে পদার্থের মধ্যে ছোট ছোট ভর্টিসেস তৈরি হয়। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়লে এই ভর্টিসেসগুলো পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। একে পদার্থবিদ্যার ভাষায় বলে ফেজ ট্রানজিশন। ১৯৮০-র দশকে থৌলেস ও হ্যালডেন পদার্থের বিভিন্ন অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন নিয়ে কাজ শুরু করেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল তত্ত্বের এই বিষয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা অতি শীতল অবস্থায় বা খুব শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকা পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহন নিয়ে নতুন তত্ত্বের হদিস দিলেন। এর সঙ্গেই পদার্থবিদ্যার নতুন পথ খুলে গেল। তারা দেখালেন কীভাবে পদার্থের এই বিচিত্র বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যেও গণিতের প্রয়োগ করে শৃঙ্খলের সন্ধান করা যায়। এই তিনজনের কাজ ফলিত পদার্থবিদ্যা ও প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি। বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং নতুন সুপার কন্ডাক্টর তৈরিতে। বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। যে কম্পিউটার আজকের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সুপার কম্পিউটারের থেকেও অনেক শক্তিশালী।