ইপেপার । আজ সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় স্টেশনে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটি পেল মা-বাবা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৮৩৯ বার পড়া হয়েছে

20161003_143755

আফজালুল হক/আনিস বিশ্বাস: চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশনের যাত্রী ছাউনির পাশে পড়ে থাকা নবজাতকটি শেষ পর্যন্ত মা-বাবা পেল। পরম মমতায় বাদশা নামের এক দম্পতি এই শিশুটিকে পিতা-মাতার স্নেহে কোলে তুলে নিয়েছেন। এদিকে  বাচ্চাটার দুধ মা রহিমা খাতুন মিতা তার বাবু সোনাকে তারই আপন চাচা নিঃসন্তান দামুড়হুদা শহরের দশমী পাড়ার বাদশার কাছে তুলে দিতে পেরে নিশ্চিত হয়েছেন তার বাবু সোনা ভালই থাকবে সে, মা-বাবা পেল। যদি গত দুদিন কাছে রেখে নিজের বুকের দুধ খাওয়ে সুস্থ্য করে তুলে ছিল নবজাতক শিশুটিকে। কিন্তু মিতা যখনি ভাবছিল শিশুটিকে কারো কাছে দিয়ে দিতে হবে ঠিক তখুনি মিতার দু’চোখ লোনাজলে ভরে যাচ্ছিল এমনদৃশ্য বার বার চোখে পড়ছিল। সর্বশেষ তিনি নবজাতককে তার পছন্দের স্থানে রাখতে পেরে শান্তি পেয়েছেন বলে জানান। গত রবিবার দুপুরে  চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের উত্তর দিকের যাত্রী ছাউনিতে এই নবজাতককে একটি বাজারের ব্যাগের ভিতরে পুরে কে বা কারা ফেলে রেখে গেলে রেলওয়ে পুলিশ বাচ্চাটি উদ্ধার করে। গত রবিবার বেলা ১২টায় এক নবজাতক উদ্ধারের কথা কানে আসার সাথে সাথে এক বছর বয়সের এক সন্তানের জননী রহিমা খাতুন মিতা আর স্থীর থাকতে পারেনি তিনি ছুটে যান প্লাটফর্মের রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আদর-øেহ এবং মমতার চাঁদরে জড়িয়ে কোলে তুলে নেন এই নবজাতক শিশুটিকে। সবাইকে তাক লাগিয়ে শিশুটিকে নিজের হেফজতে নেন এবং নিজের বুকের দুধ পান করালে সবাই মিতার কাছে শিশুটিকে রাখতে বলে। রহিমা খাতুন মিতা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়। স্বামী মফিজুর রেলওয়ে পুলিশের কনষ্টেবল পদে চাকুরীর সুবাদে চুয়াডাঙ্গা রেল কলোনীর পশ্চিম দিকের কোয়ার্টারে থাকেন রহিমা খাতুন মিতা। সেখানেই নিয়ে আসেন শিশুটিকে এসেই নিজের ছেলেকে বুকের দুধ দেওয়ার আগে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়ে শান্ত করেন। বুকের দুধ পেয়ে থেমে যায় শিশুটির কান্না। এরপর শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মমতা মাখানো নিজের সন্তানের মত আদর যতœ। স্বামী মফিজুর ছুটে যান বাজারে নিয়ে আসেন নবজাতকের জিনিষপত্র। এমনকি মফিজ-মিতা দম্পতি এই শিশুটিকে নিয়ে সদর হাসপাতালে যান তার শারিরিক চেকাপ করাতে। ডাক্তারের  পরামর্শ মোতাবেক শুরু হয় সতর্কতামূলক যতœ। কয়েক ঘন্টার মধ্যে শুধু মফিজ-মিতা নয় পুরো রেল কলোনী আলো করে পেলে শিশুটি। মিতা কল্পনা করে শিশুটি নিজেই রাখবেন এবং কুড়িয়ে পাওয়া সাত দিনের মাথায় একটি আখিকা দিয়ে একটি সুন্দর নাম রাখবেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিতা নবজাতককে নিজের কাছে নিতে না পারলে বিভিন্ন ভাবে নিজেদের মধ্যে তাকে রেখেছেন এবং নবজাতকের নামও রাখা হবে বেশ ধুমধাম করে আকিকা দিয়ে। তবে তিনি বলেন মা হচ্ছে মাটি, মাটিতে গড়ালে যেমন মমতার পরশ লাগে, ঠিক তেমনি সামান্য দু’দিনে সোনা বাবু আমার অনেক আদরের আপনজন হয়ে গেছে। ঠিক একই কথা মিতার স্বামী মফিজের। তিনি বলেন যতদিন তিনি  বেঁেচ থাকবেন বাবু সোনার খোঁজ রাখবেন তার মঙ্গল কামনা করবেন। শেষ পর্যন্ত গতকাল সন্ধ্যায় রেলওয়ে কর্তুপক্ষ চুয়াডাঙ্গা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কাছে লিখিত হস্তান্তর করলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার বশির আহম্মেদ  শিশুটিকে খুলনা বেবি কেয়ার হোমে না দিয়ে আইনের সমস্থ প্রক্রিয়া শেষে দামুড়হুদা উপজেলা শহরের দশমী পাড়ার মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে সামসুল আলম বাদশার কাছে লালন-পালনসহ পূর্ণ অভিভাবকের দায়িত্ব দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশের এস আই মামুন রহমান জানান শেষ পর্যন্ত শিশুটি একটি নিশ্চিত আশ্রয় পেয়েছে তার মঙ্গলময় জীবন কামনা করছি বলেই তিনি চোখ মুছলেন এতেই বোঝা গেল মাত্র ২দিনে শিশুটি সবার প্রিয় হয়ে গিয়েছিলো। এদিকে গতকাল পর্যন্ত বাচ্চাটির খোঁজ নিতে কেউ আসেনি। তাছাড়া দামুড়হুদার বাদশা দম্পত্তি ছাড়াও এই কিউট বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে প্রায় ২০টি পরিবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে যারা নিঃসন্তান তাদের কাছে হস্তাস্তরের প্রক্রিয়াতে বাদশা দম্পতি বাচ্চাটার অভিভাবক বিবেচিত হন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লালন-পালনসহ পূর্ণ অভিভাবকের দায়িত্ব পেয়ে বাদশা দম্পতিতে মনে হলো সারা বিশ্ব জয় করে বাড়ী ফিরছে। তাদের ঠোটের কোনের হাসির ঝিলিক দেখে মনে হচ্ছিলো বিশ্বের সব থেকে সুখী দম্পতি তারা। উল্লেখ্য গতকাল বেলা ১২ টার দিকে চিত্রা এক্সপ্রেস চলে যাওয়ার পর যাত্রী ছাউনিতে বসে থাকা যাত্রীরা বাচ্চাটির কান্না শুনে রেলওয়ে পুলিশকে খবর দিলে জিআরপি ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মামুন ও কনষ্টেবল মুস্তাফিজুর রহমান মফিজ যাত্রী ছাউনী দেওয়ালের একপ্রান্তে বাজার করা সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরী ব্যাগ থেকে উদ্ধার করে। শিশুটি অভিভাবক পাওয়ার আগ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মামুনের সার্বিক তত্ত্ববধানে কনষ্টেবল মফিজ-মিতা দম্পতির কাছে ছিল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় স্টেশনে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটি পেল মা-বাবা

আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০১৬

20161003_143755

আফজালুল হক/আনিস বিশ্বাস: চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশনের যাত্রী ছাউনির পাশে পড়ে থাকা নবজাতকটি শেষ পর্যন্ত মা-বাবা পেল। পরম মমতায় বাদশা নামের এক দম্পতি এই শিশুটিকে পিতা-মাতার স্নেহে কোলে তুলে নিয়েছেন। এদিকে  বাচ্চাটার দুধ মা রহিমা খাতুন মিতা তার বাবু সোনাকে তারই আপন চাচা নিঃসন্তান দামুড়হুদা শহরের দশমী পাড়ার বাদশার কাছে তুলে দিতে পেরে নিশ্চিত হয়েছেন তার বাবু সোনা ভালই থাকবে সে, মা-বাবা পেল। যদি গত দুদিন কাছে রেখে নিজের বুকের দুধ খাওয়ে সুস্থ্য করে তুলে ছিল নবজাতক শিশুটিকে। কিন্তু মিতা যখনি ভাবছিল শিশুটিকে কারো কাছে দিয়ে দিতে হবে ঠিক তখুনি মিতার দু’চোখ লোনাজলে ভরে যাচ্ছিল এমনদৃশ্য বার বার চোখে পড়ছিল। সর্বশেষ তিনি নবজাতককে তার পছন্দের স্থানে রাখতে পেরে শান্তি পেয়েছেন বলে জানান। গত রবিবার দুপুরে  চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের উত্তর দিকের যাত্রী ছাউনিতে এই নবজাতককে একটি বাজারের ব্যাগের ভিতরে পুরে কে বা কারা ফেলে রেখে গেলে রেলওয়ে পুলিশ বাচ্চাটি উদ্ধার করে। গত রবিবার বেলা ১২টায় এক নবজাতক উদ্ধারের কথা কানে আসার সাথে সাথে এক বছর বয়সের এক সন্তানের জননী রহিমা খাতুন মিতা আর স্থীর থাকতে পারেনি তিনি ছুটে যান প্লাটফর্মের রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আদর-øেহ এবং মমতার চাঁদরে জড়িয়ে কোলে তুলে নেন এই নবজাতক শিশুটিকে। সবাইকে তাক লাগিয়ে শিশুটিকে নিজের হেফজতে নেন এবং নিজের বুকের দুধ পান করালে সবাই মিতার কাছে শিশুটিকে রাখতে বলে। রহিমা খাতুন মিতা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়। স্বামী মফিজুর রেলওয়ে পুলিশের কনষ্টেবল পদে চাকুরীর সুবাদে চুয়াডাঙ্গা রেল কলোনীর পশ্চিম দিকের কোয়ার্টারে থাকেন রহিমা খাতুন মিতা। সেখানেই নিয়ে আসেন শিশুটিকে এসেই নিজের ছেলেকে বুকের দুধ দেওয়ার আগে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়ে শান্ত করেন। বুকের দুধ পেয়ে থেমে যায় শিশুটির কান্না। এরপর শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মমতা মাখানো নিজের সন্তানের মত আদর যতœ। স্বামী মফিজুর ছুটে যান বাজারে নিয়ে আসেন নবজাতকের জিনিষপত্র। এমনকি মফিজ-মিতা দম্পতি এই শিশুটিকে নিয়ে সদর হাসপাতালে যান তার শারিরিক চেকাপ করাতে। ডাক্তারের  পরামর্শ মোতাবেক শুরু হয় সতর্কতামূলক যতœ। কয়েক ঘন্টার মধ্যে শুধু মফিজ-মিতা নয় পুরো রেল কলোনী আলো করে পেলে শিশুটি। মিতা কল্পনা করে শিশুটি নিজেই রাখবেন এবং কুড়িয়ে পাওয়া সাত দিনের মাথায় একটি আখিকা দিয়ে একটি সুন্দর নাম রাখবেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিতা নবজাতককে নিজের কাছে নিতে না পারলে বিভিন্ন ভাবে নিজেদের মধ্যে তাকে রেখেছেন এবং নবজাতকের নামও রাখা হবে বেশ ধুমধাম করে আকিকা দিয়ে। তবে তিনি বলেন মা হচ্ছে মাটি, মাটিতে গড়ালে যেমন মমতার পরশ লাগে, ঠিক তেমনি সামান্য দু’দিনে সোনা বাবু আমার অনেক আদরের আপনজন হয়ে গেছে। ঠিক একই কথা মিতার স্বামী মফিজের। তিনি বলেন যতদিন তিনি  বেঁেচ থাকবেন বাবু সোনার খোঁজ রাখবেন তার মঙ্গল কামনা করবেন। শেষ পর্যন্ত গতকাল সন্ধ্যায় রেলওয়ে কর্তুপক্ষ চুয়াডাঙ্গা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কাছে লিখিত হস্তান্তর করলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার বশির আহম্মেদ  শিশুটিকে খুলনা বেবি কেয়ার হোমে না দিয়ে আইনের সমস্থ প্রক্রিয়া শেষে দামুড়হুদা উপজেলা শহরের দশমী পাড়ার মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে সামসুল আলম বাদশার কাছে লালন-পালনসহ পূর্ণ অভিভাবকের দায়িত্ব দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশের এস আই মামুন রহমান জানান শেষ পর্যন্ত শিশুটি একটি নিশ্চিত আশ্রয় পেয়েছে তার মঙ্গলময় জীবন কামনা করছি বলেই তিনি চোখ মুছলেন এতেই বোঝা গেল মাত্র ২দিনে শিশুটি সবার প্রিয় হয়ে গিয়েছিলো। এদিকে গতকাল পর্যন্ত বাচ্চাটির খোঁজ নিতে কেউ আসেনি। তাছাড়া দামুড়হুদার বাদশা দম্পত্তি ছাড়াও এই কিউট বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে প্রায় ২০টি পরিবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে যারা নিঃসন্তান তাদের কাছে হস্তাস্তরের প্রক্রিয়াতে বাদশা দম্পতি বাচ্চাটার অভিভাবক বিবেচিত হন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লালন-পালনসহ পূর্ণ অভিভাবকের দায়িত্ব পেয়ে বাদশা দম্পতিতে মনে হলো সারা বিশ্ব জয় করে বাড়ী ফিরছে। তাদের ঠোটের কোনের হাসির ঝিলিক দেখে মনে হচ্ছিলো বিশ্বের সব থেকে সুখী দম্পতি তারা। উল্লেখ্য গতকাল বেলা ১২ টার দিকে চিত্রা এক্সপ্রেস চলে যাওয়ার পর যাত্রী ছাউনিতে বসে থাকা যাত্রীরা বাচ্চাটির কান্না শুনে রেলওয়ে পুলিশকে খবর দিলে জিআরপি ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মামুন ও কনষ্টেবল মুস্তাফিজুর রহমান মফিজ যাত্রী ছাউনী দেওয়ালের একপ্রান্তে বাজার করা সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরী ব্যাগ থেকে উদ্ধার করে। শিশুটি অভিভাবক পাওয়ার আগ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মামুনের সার্বিক তত্ত্ববধানে কনষ্টেবল মফিজ-মিতা দম্পতির কাছে ছিল।