চুয়াডাঙ্গা পুলিশের বিশেষ অভিযানে নিখোঁজ তানজিল ঝিনাইদহ থেকে উদ্ধার অপহরণ নাটক সাজানো তিন প্রতারক গ্রেফতার : নেয়া হবে আইনী ব্যবস্থা
- আপলোড টাইম : ০৮:২৯:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০১৬
- / ৪৫৬ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: আলমডাঙ্গার পোল বাগুন্দা গ্রামের ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর তানজিল অপহরণ নয় রাগ করে বাড়ী ছাড়ার ১০দিন পর পুলিশের বিশেষ অভিযানে উদ্ধার হয়েছে । সেই সাথে আটক হয়েছে অপহরণ নাটক সাজানোর তিন প্রতারক চক্রের সদস্য। তাদেরকে আজ আদালতে কাছে সোপর্দ করা হবে এবং নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা। নিজে থেকে আত্মগোপন করা কিশোর তানজিলকে গতকাল সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের ডাকবাংলা থেকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের বিশেষ টিম। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন আত্মগোপন করা তানজিল কে উদ্ধারের পর গতকাল রাত সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, যদিও গত ২২সেপ্টেম্বর তানজিল মা-বাবার উপর রাগ করে ঝিনাইদহের ডাকবাংলায় শাহাজাহানের চায়ের দোকানে কাজ করছিল। এদিকে তার বাবা নিখোঁজের কথা সংবাদ মাধ্যম ও পুলিশকে জানালে বিষয়টি টেলিভিশনে প্রচার হয়। টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন থেকে একটি চক্র তানজিলের বাবা মাকে মোবাইল ফোনে চাঁদা চেয়ে অপহরণের নাটক করে এবং মুক্তিপণ বাবদ মোটা অংকের টাকা দাবী করে। তবে চাঁদার টাকা দেওয়ার আগেই পুলিশ কিশোরটিকে ঝিনাইদহের ডাকবাংলা থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তিনি আরো জানান, প্রতারক চক্রটি গত ১০দিন ধরে যে মোবাইল নাম্বার থেকে চাঁদা দাবী করছিলো সেই সিম নাম্বারের মালিক আজানুরকে আটক করা হয়েছে। রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার ১সপ্তাহ পর তানজিলের বাবার কাছে অপহরণকারীরা ৫লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে অপহরণের ঘটনাটি সকলের সামনে চলে আসে। মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন স্বপরিবারে পালিয়ে গেলেও পুলিশ তার দূর সম্পর্কের চাচা ও মামাতো ভাইকে আটক করে তদন্ত চালিয়ে যায়। অবশেষে গতকাল তানজিলকে উদ্ধার সম্ভব হয়েছে এবং পুরো বিষয়টি সবার সামনে চলে এসেছে। উদ্ধারের আগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আমির আব্বাস, এসআই ইব্রাহীম, এসআই আশরাফ তানজিলকে উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের পোল বাগুন্দা গ্রামের চা’দোকানি সামারুল ইসলামের ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর ছেলে তানজির হোসেন গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে মা’র সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে আর বাড়ি আর ফেরেনি। পরিবারের দাবি- এলাকার অনেকেই কিশোর তানজির হোসেনকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে দেখেছেন। পার্শ্ববর্তী আইলহাঁস গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আজানুর হুজুরের সাথে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে বলে সে সময় অনেকে জানান। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তানজিরকে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবার বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তানজিরের পিতা বাদি হয়ে এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। এরই মধ্যে গত পরশু বৃহস্পতিবার অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইল ফোন থেকে তানজিলের বাপের মোবাইলফোনে রিং দিয়ে তানজিলকে অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করে। অজ্ঞাত ব্যক্তি সে সময় তানজিলের সাথে তার বাপের কথাও বলিয়ে দেয়। কথা বলার সময় তানজিল কান্নাকাটি করছিল বলে জানিয়েছে তার পরিবার। সে সময় অজ্ঞাত অপহরক তানজিলের মুক্তিপণ হিসেবে প্রথমে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। একজন দরিদ্র চা দোকানির পক্ষে এত মোটা অংকের টাকা দেওয়া অসম্ভব জানিয়ে কান্নাকাটির পর মুক্তিপণের পরিমাণ কিছুটা কমানো হয় এবং বলা হয় বিকাশে করতে। একই দিনে আরও কয়েকবার মোবাইলফোনে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে চক্রটি। শেষ পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবির পরিমাণ ১লাখ ৬০হাজারে এসে থিতু হয়। পুলিশ ও তানজিলের পরিবারসূত্রে জানা যায়, তানজিরের বাপের নিকট যে মোবাইলফোন থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়, পুলিশ সেই সিম ট্যাকিং করে জানতে পারেন-সিমটির মালিক আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুরের জনৈক ব্যক্তি, যিনি তানজিরদের গ্রাম লাগুয়া আইলহাসের আজানুর হুজুরের নানা শ্বশুর। আজানুর হুজুর (৩৪) আইলহাস গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। এলাকায় প্রতারক হুজুর নামেই তাকে চেনে। কয়েকদিন আগে আজানুর হুজুর তার নানা শ্বশুরের নিকট থেকে সিমটি চেয়ে নিয়ে সেই সিম দিয়ে এ মুক্তিপণ দাবি করেছে। এদিকে, অবস্থা বেগতিক জেনে আজানুর হুজুর স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা,আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহের ডাকবাংলা থেকে উদ্ধার করে তানজিলকে তার বাবা মার কাছে হস্তান্তর করলে প্রতারক চক্রের সব নাটক ভেস্তে যায়।