ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইসি গঠনে সরকার আলোচনায় আসবে আশা বিএনপির

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪২:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪২৬ বার পড়া হয়েছে

BNP-shamsuzzaman-dudu-pic-01-288x330

সমীকরণ ডেস্ক: নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো ‘ইতিবাচক’ সাড়া না পেলেও ‘আশা হারায়নি’ বিএনপি। সঙ্কট সমাধানে সরকার অবশ্যই একসময় আলোচনায় বসবে বলে আশা দলটির। রোববার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এসব কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি ভূমিকা রাখতে চায়, আলোচনা চায়থ বিএনপির এই আগ্রহের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী হবে? বিকালে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন চায়? তারা কি এমন কমিশন চায়, যারা এক কোটির বেশি ভুয়া ভোটার তালিকায় আনবে। বর্তমান কমিশন তো এটা করেনি। তাদের (বিএনপি) পরামর্শ নিলে তো যারা ভুয়া ভোটার তালিকা করে দেবে, এমন কমিশন করতে হবে? প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের স্বপক্ষের দল। তাই আশা হারায় না। অব্যাহতভাবেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন, তিনি আলোচনায় আসবেন। কারণ, তার পিতা (শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তানের শেষ জামানায় বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একক নেতা হওয়ার পরেও তৎকালীন পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনা করে সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করেছেন, যদিও সেটি হয়নি। সেই জাতীয় নেতার কথা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান। আলোচনার টেবিল হচ্ছে সমস্যা সমাধানের সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ইসি গঠন নিয়ে বিএনপির আলোচনার আহ্বান তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করলেও ভবিষ্যতে একটু শান্তভাবে চিন্তা করলে তাদের কথায় সাড়া দেবেন, আলোচনায় বসবেন। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রতিবাদে গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে অনুষ্ঠেয় প্রতিবাদ সভায় পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন দুদু। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আগে থেকে পুলিশের অনুমতি নেয়া হয়েছিল। পুলিশ মৌখিক অনুমতিও দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে নেতাকর্মীরা যখন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে গেছেন তখন বাধা দেয়া হয়েছে, তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এ সময় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভয়েজ অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র আছে, কথা বলার সুযোগ আছে। বিএনপি সেটি বিশ্বাস করতে চেয়েছে। কিন্তু এখন মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা বাংলাদেশে আপাতত নেই, সংগঠন করার স্বাধীনতা নেই, সভা-সেমিনার করার স্বাধীনতা নেই। সরকার গায়ের জোরে লাঠিয়াল বাহিনীর মাধ্যমে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার পালন করতে দেয় না। এটা হতে পারে না। এর সুরাহা হওয়া উচিত। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি ঘোষিত থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিলে বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মিছিলে বাধা দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দুদু। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ। এর আগে গতকাল সকালে নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দুদু প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাসী যেকোনো রাজনৈতিক দল একাধিকবার ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশা করতেই পারে। যারা দাবি করে তারা অনেক উন্নয়ন করেছে ও দেশকে সমৃদ্ধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে বিদেশে অনেক জায়গায় অনেক সমর্থন পেয়েছে বলে দাবি করেন। এই কথাগুলো যদি সত্য হয় তাহলে তারা জনগণের মাঝে একটি ভীত রচনা করতে পেরেছে বলে ধরে নেয়া যায়। তাহলে সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে সমস্যা কোথায়? নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা তো আগে ছিল। এই ব্যবস্থার জন্য বিএনপির মতো আওয়ামী লীগও একসময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সে জন্য একটার্ম কেনো জনগণ চাইলে তারা একাধিকবার ক্ষমতায় থাকতেই পারে। কিন্তু তারা যে ব্যবস্থা ও ভঙ্গিতে ক্ষমতায় আছে তা যথাযথ নয় বলে জনগণ মনে করে। বিএনপিও মনে করে এই পথটা ঠিক না। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে বিএনপির সংলাপের ডাকে সরকার সাড়া না দিলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, গণতন্ত্র মানেই আলোচনা, সমঝোতা ও আপস। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই এই কথাগুলো বারবার বলা হচ্ছে। বিএনপি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আলোচনায় সাড়া না দেয়। যাতে ক্ষমতাসীনদের দিয়ে নিরপক্ষে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ব্যবস্থাটা করানো যায় সে ব্যাপারে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব। দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের লেশমাত্র নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। সাভার পৌর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলমকে ‘হত্যার’ নিন্দা জানিয়ে শামসুজ্জামান অভিযোগ করেন, বন্দুকযুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একধরনের নেশা ও রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে অব্যাহতভাবে হত্যা করছে। আসকের হিসাবে, গত নয় মাসে দেশে ১৭৮ জনকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা করে সরকার দেশের সব বিরুদ্ধ মতকে দমনে বেপরোয়া। তারা শুধু বিএনপিই নয়, সরকারের সমালোচনা করার জন্য নাগরিক সমাজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যেমন: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ। গণমাধ্যমও সরকারি রোষানলের বাইরে নয়। যারাই সরকারের অপশাসন, দুঃশাসন, দুর্নীতির সমালোচনা করছে, সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের নাজেহাল করছে। শামসুজ্জামান অভিযোগ করেন, দেশে এখন গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের লেশমাত্র নেই। মৌলিক ও মানবাধিকার আগেই ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইন-আদালতও শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ছাড়াও দেশের কোনো মানুষই এখন নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ইসি গঠনে সরকার আলোচনায় আসবে আশা বিএনপির

আপলোড টাইম : ১০:৪২:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০১৬

BNP-shamsuzzaman-dudu-pic-01-288x330

সমীকরণ ডেস্ক: নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো ‘ইতিবাচক’ সাড়া না পেলেও ‘আশা হারায়নি’ বিএনপি। সঙ্কট সমাধানে সরকার অবশ্যই একসময় আলোচনায় বসবে বলে আশা দলটির। রোববার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এসব কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি ভূমিকা রাখতে চায়, আলোচনা চায়থ বিএনপির এই আগ্রহের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী হবে? বিকালে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন চায়? তারা কি এমন কমিশন চায়, যারা এক কোটির বেশি ভুয়া ভোটার তালিকায় আনবে। বর্তমান কমিশন তো এটা করেনি। তাদের (বিএনপি) পরামর্শ নিলে তো যারা ভুয়া ভোটার তালিকা করে দেবে, এমন কমিশন করতে হবে? প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের স্বপক্ষের দল। তাই আশা হারায় না। অব্যাহতভাবেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন, তিনি আলোচনায় আসবেন। কারণ, তার পিতা (শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তানের শেষ জামানায় বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একক নেতা হওয়ার পরেও তৎকালীন পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনা করে সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করেছেন, যদিও সেটি হয়নি। সেই জাতীয় নেতার কথা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান। আলোচনার টেবিল হচ্ছে সমস্যা সমাধানের সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ইসি গঠন নিয়ে বিএনপির আলোচনার আহ্বান তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করলেও ভবিষ্যতে একটু শান্তভাবে চিন্তা করলে তাদের কথায় সাড়া দেবেন, আলোচনায় বসবেন। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রতিবাদে গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে অনুষ্ঠেয় প্রতিবাদ সভায় পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন দুদু। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আগে থেকে পুলিশের অনুমতি নেয়া হয়েছিল। পুলিশ মৌখিক অনুমতিও দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে নেতাকর্মীরা যখন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে গেছেন তখন বাধা দেয়া হয়েছে, তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এ সময় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভয়েজ অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র আছে, কথা বলার সুযোগ আছে। বিএনপি সেটি বিশ্বাস করতে চেয়েছে। কিন্তু এখন মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা বাংলাদেশে আপাতত নেই, সংগঠন করার স্বাধীনতা নেই, সভা-সেমিনার করার স্বাধীনতা নেই। সরকার গায়ের জোরে লাঠিয়াল বাহিনীর মাধ্যমে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার পালন করতে দেয় না। এটা হতে পারে না। এর সুরাহা হওয়া উচিত। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি ঘোষিত থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিলে বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মিছিলে বাধা দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দুদু। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ। এর আগে গতকাল সকালে নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দুদু প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাসী যেকোনো রাজনৈতিক দল একাধিকবার ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশা করতেই পারে। যারা দাবি করে তারা অনেক উন্নয়ন করেছে ও দেশকে সমৃদ্ধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে বিদেশে অনেক জায়গায় অনেক সমর্থন পেয়েছে বলে দাবি করেন। এই কথাগুলো যদি সত্য হয় তাহলে তারা জনগণের মাঝে একটি ভীত রচনা করতে পেরেছে বলে ধরে নেয়া যায়। তাহলে সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে সমস্যা কোথায়? নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা তো আগে ছিল। এই ব্যবস্থার জন্য বিএনপির মতো আওয়ামী লীগও একসময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সে জন্য একটার্ম কেনো জনগণ চাইলে তারা একাধিকবার ক্ষমতায় থাকতেই পারে। কিন্তু তারা যে ব্যবস্থা ও ভঙ্গিতে ক্ষমতায় আছে তা যথাযথ নয় বলে জনগণ মনে করে। বিএনপিও মনে করে এই পথটা ঠিক না। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে বিএনপির সংলাপের ডাকে সরকার সাড়া না দিলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, গণতন্ত্র মানেই আলোচনা, সমঝোতা ও আপস। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই এই কথাগুলো বারবার বলা হচ্ছে। বিএনপি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আলোচনায় সাড়া না দেয়। যাতে ক্ষমতাসীনদের দিয়ে নিরপক্ষে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ব্যবস্থাটা করানো যায় সে ব্যাপারে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব। দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের লেশমাত্র নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। সাভার পৌর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলমকে ‘হত্যার’ নিন্দা জানিয়ে শামসুজ্জামান অভিযোগ করেন, বন্দুকযুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একধরনের নেশা ও রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে অব্যাহতভাবে হত্যা করছে। আসকের হিসাবে, গত নয় মাসে দেশে ১৭৮ জনকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা করে সরকার দেশের সব বিরুদ্ধ মতকে দমনে বেপরোয়া। তারা শুধু বিএনপিই নয়, সরকারের সমালোচনা করার জন্য নাগরিক সমাজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যেমন: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ। গণমাধ্যমও সরকারি রোষানলের বাইরে নয়। যারাই সরকারের অপশাসন, দুঃশাসন, দুর্নীতির সমালোচনা করছে, সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের নাজেহাল করছে। শামসুজ্জামান অভিযোগ করেন, দেশে এখন গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের লেশমাত্র নেই। মৌলিক ও মানবাধিকার আগেই ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইন-আদালতও শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ছাড়াও দেশের কোনো মানুষই এখন নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না।