ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কালীগঞ্জ বাফার গুদামের সার লোপটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস! নেওয়া হয়নি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:২৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৭৭১ বার পড়া হয়েছে

sdsd

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বিসিআইসির বাফার গুদাম থেকে সার লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই সার লোপাটের সাথে বাফার গুদামের তৎকালীন ইনচার্জসহ কতিপয় কর্মচারী ও পরিবগন ঠিকাদার জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আসলে কত কোটি টাকার সার লোপাট হয়েছে তা নিয়ে নানা সন্দেহ দানা বেধে উঠেছে। সরকারী হিসেবে ৫৪৭ মেট্রিক টন সারের হিসেব না মেলার কথা বলা হলেও লোপাটের পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বাফার গুদামের ইনচার্জ মাসুদ রানা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বস্তা গুনলে আরও ৪/৫’শ মেট্রিক টন সার কমতে পারে। তার এই হিসেবে সঠিক হলে সর্বমোট ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার লোপাটের ঘটনা ঘটতে পারে। যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ (সরকারী মূল্যে) টাকার বেশী। একটি সংঘবদ্ধ  চক্র কৌশলে সার বিক্রি করে বিপুল অংকের এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।  প্রাথমিক তদন্তে  ১ কোটি  ৮৬ লাখ টাকা মূল্যের ৫৪৭ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, গত ১৮ মে বিসিআইসির অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক (বিপনন) মঞ্জুর রেজার নেতৃত্বে ৪ সদস্যর একটি তদন্ত দল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার গুদামে মওজুত ইউরিয়া সার বাস্তব গননা ও ওজন করেন। এ সময় ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়ে । যার সরকারী মূল্য প্রায় ১কোটি  ৭৬ লাখ টাকা। সুত্র মতে বর্তমান মওজুত (১৮ সেপ্টম্বর পর্যন্ত) ৫৩২৭ মেট্রিক টন । এর মধ্যে ৪৫,৫৬০ বস্তায় (২২৭৮ মেট্রিক টন) ব্যবহার অনুপযোগী কম ওজনের সার রয়েছে। বর্তমান গুদাম ইনচার্জ বলেছেন, সঠিক ভাবে ওজন করা হলে অন্তত আরও ৪ থেকে ৫”শ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়বে। এর আগে ২০০৯ সালের দিকে ২১৩ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার খাতা কলমে থাকলেও গুদামে নেই  মর্মে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছেন। এদিকে অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসে আরও লোমহর্ষক খবর। প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০০৯ সাল থেকে গুদাম থেকে পরিকল্পিত ভাবে সার গায়েব হতে থাকে। সে সময় সার কেলেঙ্কারী সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ হয়। ২১৩ মেট্রিকটন  গায়েব করার খবর সে সময় ফাঁস হয় পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জুন মাস পর্যন্ত আত্মসাৎ করা হয় আরও ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মিট্রিক টন সার। প্রাপ্ত তথ্য মতে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ওই সময়ে আবুল কালাম আজাদ (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় কর্মরত), ফজর আলী (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় হিসাব বিভাগে কর্মরত), জালাল উদ্দিন ও একাউন্টস বিভাগের জিয়াউর রহমান অত্র স্টেশনে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে লোমহর্ষক সার কেলেঙ্কারীর এ ঘটনা ঘটে। জানা যায় বিসিআইসি’র উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ বিষয়টি টের পেয়ে ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর সারা দেশের ২৪ টি বাফার গুদামে সংরক্ষিত ইউরিয়া সার বাস্তব গননার জন্য প্রতি জেলায় একজন করে নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে ৪ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়। অজ্ঞাত কারনে ওই কমিটি তাদের কার্যক্রম করতে পারেনি। এতে সংঘবদ্ধ চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং পরিকল্পতি ভাবে সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে থাকে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায় চলতি বছরের ১৮ মে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ কালীগঞ্জ  বাফার গুদামের মজুদ নিরীক্ষন করেন। এ সময় ফাঁস হয়ে পড়ে প্রকৃত আত্মসাতের খবর।  অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কতিপয় পরিবহন ঠিকারদার প্রতিষ্ঠান ও চিহ্নিত কয়েক জন অসৎ সার ডিলার চক্রটির সাথে জড়িত। ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় নিয়োগ করা ২১৫ জন তালিকাভুক্ত সার ডিলার রয়েছেন। এরা অত্র গুদাম থেকে সার সরবরাহ নিয়ে থাকেন। ডিলারদের অভিযোগ ঘুষ না দিলে নিন্মমানের জমাট বাধা সার দেয়া হয় তাদের। সেই সাথে সারের বস্তায় ওজন কম দেয়া হয়। সুত্র মতে ডিলাদের কাছে প্রতিবস্তা ইউরিয়া সারের দাম নেয়া হয় মাত্র ৭০০ টাকা। তৃণমুলে সেই সার সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিটন ইউরিয়ার মূল্য কমপক্ষে ৩৪ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতিটন সারের সরকার কুড়ি হাজার টাকার বেশী করে ভুর্তুকি দিয়ে থাকে। এই রিপোর্ট লেখার সময় ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক ও জেলা সার বরাদ্দ কমিটির সভাপতি মো: মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি শক্ত কমিটি গঠন করার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী শাহনাজ পারভিন অফিসার গুদাম পরিদর্শন করেছেন বলে জেলা প্রশাসক জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

কালীগঞ্জ বাফার গুদামের সার লোপটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস! নেওয়া হয়নি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা!

আপলোড টাইম : ১২:২৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

sdsd

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বিসিআইসির বাফার গুদাম থেকে সার লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই সার লোপাটের সাথে বাফার গুদামের তৎকালীন ইনচার্জসহ কতিপয় কর্মচারী ও পরিবগন ঠিকাদার জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আসলে কত কোটি টাকার সার লোপাট হয়েছে তা নিয়ে নানা সন্দেহ দানা বেধে উঠেছে। সরকারী হিসেবে ৫৪৭ মেট্রিক টন সারের হিসেব না মেলার কথা বলা হলেও লোপাটের পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বাফার গুদামের ইনচার্জ মাসুদ রানা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বস্তা গুনলে আরও ৪/৫’শ মেট্রিক টন সার কমতে পারে। তার এই হিসেবে সঠিক হলে সর্বমোট ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার লোপাটের ঘটনা ঘটতে পারে। যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ (সরকারী মূল্যে) টাকার বেশী। একটি সংঘবদ্ধ  চক্র কৌশলে সার বিক্রি করে বিপুল অংকের এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।  প্রাথমিক তদন্তে  ১ কোটি  ৮৬ লাখ টাকা মূল্যের ৫৪৭ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, গত ১৮ মে বিসিআইসির অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক (বিপনন) মঞ্জুর রেজার নেতৃত্বে ৪ সদস্যর একটি তদন্ত দল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার গুদামে মওজুত ইউরিয়া সার বাস্তব গননা ও ওজন করেন। এ সময় ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়ে । যার সরকারী মূল্য প্রায় ১কোটি  ৭৬ লাখ টাকা। সুত্র মতে বর্তমান মওজুত (১৮ সেপ্টম্বর পর্যন্ত) ৫৩২৭ মেট্রিক টন । এর মধ্যে ৪৫,৫৬০ বস্তায় (২২৭৮ মেট্রিক টন) ব্যবহার অনুপযোগী কম ওজনের সার রয়েছে। বর্তমান গুদাম ইনচার্জ বলেছেন, সঠিক ভাবে ওজন করা হলে অন্তত আরও ৪ থেকে ৫”শ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়বে। এর আগে ২০০৯ সালের দিকে ২১৩ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার খাতা কলমে থাকলেও গুদামে নেই  মর্মে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছেন। এদিকে অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসে আরও লোমহর্ষক খবর। প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০০৯ সাল থেকে গুদাম থেকে পরিকল্পিত ভাবে সার গায়েব হতে থাকে। সে সময় সার কেলেঙ্কারী সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ হয়। ২১৩ মেট্রিকটন  গায়েব করার খবর সে সময় ফাঁস হয় পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জুন মাস পর্যন্ত আত্মসাৎ করা হয় আরও ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মিট্রিক টন সার। প্রাপ্ত তথ্য মতে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ওই সময়ে আবুল কালাম আজাদ (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় কর্মরত), ফজর আলী (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় হিসাব বিভাগে কর্মরত), জালাল উদ্দিন ও একাউন্টস বিভাগের জিয়াউর রহমান অত্র স্টেশনে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে লোমহর্ষক সার কেলেঙ্কারীর এ ঘটনা ঘটে। জানা যায় বিসিআইসি’র উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ বিষয়টি টের পেয়ে ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর সারা দেশের ২৪ টি বাফার গুদামে সংরক্ষিত ইউরিয়া সার বাস্তব গননার জন্য প্রতি জেলায় একজন করে নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে ৪ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়। অজ্ঞাত কারনে ওই কমিটি তাদের কার্যক্রম করতে পারেনি। এতে সংঘবদ্ধ চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং পরিকল্পতি ভাবে সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে থাকে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায় চলতি বছরের ১৮ মে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ কালীগঞ্জ  বাফার গুদামের মজুদ নিরীক্ষন করেন। এ সময় ফাঁস হয়ে পড়ে প্রকৃত আত্মসাতের খবর।  অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কতিপয় পরিবহন ঠিকারদার প্রতিষ্ঠান ও চিহ্নিত কয়েক জন অসৎ সার ডিলার চক্রটির সাথে জড়িত। ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় নিয়োগ করা ২১৫ জন তালিকাভুক্ত সার ডিলার রয়েছেন। এরা অত্র গুদাম থেকে সার সরবরাহ নিয়ে থাকেন। ডিলারদের অভিযোগ ঘুষ না দিলে নিন্মমানের জমাট বাধা সার দেয়া হয় তাদের। সেই সাথে সারের বস্তায় ওজন কম দেয়া হয়। সুত্র মতে ডিলাদের কাছে প্রতিবস্তা ইউরিয়া সারের দাম নেয়া হয় মাত্র ৭০০ টাকা। তৃণমুলে সেই সার সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিটন ইউরিয়ার মূল্য কমপক্ষে ৩৪ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতিটন সারের সরকার কুড়ি হাজার টাকার বেশী করে ভুর্তুকি দিয়ে থাকে। এই রিপোর্ট লেখার সময় ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক ও জেলা সার বরাদ্দ কমিটির সভাপতি মো: মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি শক্ত কমিটি গঠন করার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী শাহনাজ পারভিন অফিসার গুদাম পরিদর্শন করেছেন বলে জেলা প্রশাসক জানান।