চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যাস্ত শিল্পীরা দেবী দূর্গাকে ভিটেই তুলতে প্রতিমার শরীরে শেষ আঁচড়
- আপলোড টাইম : ০১:১১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ১২২৭ বার পড়া হয়েছে
আনিস বিশ্বাস ও মেহের আমজাদ: আশ্বিনের কাশফুলে সেজেছে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। এ যেন দেবী দূর্গার আগমনি বার্তা বহন করছে। এবার দেবী দূর্গা আসবে ঘটকে (ঘোড়া) চড়ে। এমন বার্তা নিয়ে দেবী দূর্গাকে ভিটেই তুলতে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন শিল্পী কারিগরেরা। শারদীয় দূর্গোৎসবকে ঘিরে শেষ মূহুর্তে কেউ কাদা-মাটির তৈরী প্রতিমার শরীরে মাটির শেষ আঁচড় দিতে ব্যাস্তআবার কেউ রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমাকে মনের মত করে ফুটিয়ে তোলার কাজটি ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। আর্থিক দৈন্যতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এবারে পূজা মন্ডপের সংখ্যা যেমন কমেছে তেমনি পূজা উৎসব পালন নিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে রয়েছে উৎকণ্ঠা আর আশংকা। তাইতো নির্বিঘেœ সার্বজনীন দূর্গা উৎসব পালনে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে তিন স্তরের পুলিশি নিরাপত্তা বলয়। চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলার
প্রায় শ’খানেক মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। গতবছর এর সংখ্যা ছিলো ৯৬টি। এছাড়া মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় এবারে ৩৪ টি মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৫৪। কারিগরদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দুর্গতিনাশীনি দেবী দূর্গা এবং তার সঙ্গীয় লক্ষী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক ও অনিষ্টকারী অশুর সহ বিভিন্ন দেবদেবীর মুর্তি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরে মহালয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে এবারের মূলপর্ব শুরু হবে আগামী ৭ অক্টোবর। ১১ অক্টোবর শুভ বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসব। বাহ্যিক ও আত্মীক অসুর নিধন করে শুভশক্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছরে পালিত হয় এই শারদীয় দূর্গোৎসব। এই দুই জেলার সনাতন ধর্মালম্বীদের বেশিরভাগ মানুষের আর্থীক দৈন্যতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে জেলায় এবার কমেছে পূজামন্ডপের সংখ্যা। দূর্গাপূজা ঘিরে একসময় ব্যাপক আয়োজন চোখে পড়লেও এখন ব্যাপকভাবে উৎসবের এই আয়োজন চোখে পড়েনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতীমা তৈরীসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বেড়েছে কয়েকগুন। আশঙ্কার কথা ভেবে পুরোহিত মালাকাররা আসতে চাইনা। তাই প্রতিমা তৈরীর সংখ্যা ও আকার কমছে। গতবছর থেকে সরকারী বরাদ্দও কমেছে। সেকারণে এবার অনেকেই পূজামন্ডপ তৈরী করতে পারেনি। চলতি বছরে মন্ডপের সংখ্যা কমলেও স্বল্প সাধ্যের মধ্যেই উৎসব আয়োজনের ঘাটতি নেই। এবারের পূঁজাকে সার্বজনীন
উৎসবে রূপ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীদের সকলকে নিয়ে আনন্দ করতে চাই। অসুর বিনাসী দেবীর এই আগমন উপলক্ষে সাধ্যমত আয়োজন সম্পন্ন করার প্রাণান্তর চেষ্টা হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষেরা। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার কুন্ডু সমীকরণ প্রতিবেদককে জানান, গতবারের তুলনায় এবার মন্ডবের সংখ্যা বেড়েছে তবে সবার মাঝে একটা অজানা আশংকা কাজ করছে। গত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলা ও পুরোহিতদের উপর হামলার ঘটনা এই আশংকার সৃষ্টি করেছে। তবে বর্তমান সরকারের শক্তহাতে জঙ্গি দমন আমাদের সাহসী করে তুলেছে বলেও তিনি জানান। এছাড়া মেহেরপুর জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ বোস সমীকরণ প্রতিবেদককে জানান, একটা মন্ডপে একাধিক পুরোহিত মালাকার লাগে। এবার তারা আসতে চাইছে না। পূঁজা তৈরীর প্রতিটি জিনিষের দাম বেড়েছে। বেড়েছে খরচ। তারপর দেখা দিয়েছে নানা ধরনের আতঙ্ক। সবমিলিয়ে এবার পূঁজা উদযাপন করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিমা তৈরি কারিগররা জানান, পূজা মন্ডপ কমায় অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন প্রতিমা কারিগররা। তারপরও পূণ্য লাভের আসায় বাপ দাদার এ পেশা ধরে রেখেছেন কারিগররা। এবার বাইরের শিল্পীরা পূঁজা তৈরীর কাজে
আসতে ভয় পাচ্ছে। তাই কারিগর শিল্পীর সঙ্কটও রয়েছে এবারের পূঁজায়। মেহেরপুর কালী মন্দিরের পূরোহিত, তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বছরে দেবী দূর্গা পৃথিবীতে আগমন করবেন ঘটকে, গমন করবেন ঘটকে। ভাল বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে আসছেন। ফলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলার উন্নতি হবে। দেশ ভরে উঠবে সম্পদে। মেহেরপুর পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান জানান, পূজাকে শান্তিপূর্ণ সার্বজনীন ও উৎসবমূখর করতে পুলিশ তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। এছাড়াও পুজাকে ঘিরে পুলিশের রয়েছে নানা পরিকল্পনা। অন্যন্য বারের চেয়ে এবার নিরাপত্তা ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারী বারানো হয়েছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তবে চুয়াডাঙ্গাতে পূজা উৎসব পালন নিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের জেলা পুলিশের কোন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।