ইপেপার । আজ সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫৭ ভাগ মামলায় হেরে যায় দুদক কার্যকর তদন্ত ও অনুসন্ধানে দুর্বলতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৩৫:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৪৫৯ বার পড়া হয়েছে

32828_dudok

সমীকরণ ডেস্ক: দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিনিয়তই চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলাও করছে। চলছে গ্রেপ্তার অভিযানও। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন বেশির ভাগ অভিযুক্ত। দালিলিক প্রমাণের দুষ্প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন কারণে নিজেদের দায়ের করা ৫৭ ভাগ মামলায় হেরে যায় সংস্থাটি। সম্প্রতি দুদকের করা একটি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত দুদকের দায়ের করা মামলার মধ্যে ১১৪৬টি মামলার বিচারকার্য সম্পাদন হয়েছে। এরমধ্যে পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়া ৬৫২টি মামলার আসামি খালাস পেয়েছে, যা বিচার সম্পাদন হওয়া মামলার ৫৭ ভাগ। এছাড়া শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে ৪৯৪টি মামলার আসামি। পরিসংখ্যন অনুযায়ী ২০০৯ ও ২০১০ সালে অর্ধেকের বেশি মামলার রায় দুদকের পক্ষে গেলেও পরবর্তী বছরগুলোর চিত্র ভিন্ন। পরের ৬ বছরে অর্ধেকের বেশি মামলায় হেরে যায় সংস্থাটি। পরিসংখ্যন বলছে, ২০০৯ সালে দুদকের দায়ের করা ১১১টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এরমধ্যে ৪৩টি মামলার আসামি খালাস পেয়েছেন, বাকি ৬৮ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০১০ সালে ১৭৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এরমধ্যে ৭৭টি মামলার আসামি খালাস পেয়েছেন, বাকি ১০২টি মামলার আসামির সাজা হয়। এরপর ২০১১ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ৬৯টি মামলার মধ্যে ৫৫টিতেই হেরে গিয়েছিল দুদক। যা এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন রেকর্ড। ২০১২ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৩২টি মামলার মধ্যে ৯০টি, ২০১৩ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৮৩টি মামলার মধ্যে ১১৬টি, ২০১৪ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৮৬টি ও ২০১৫ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৮৮টি মামলার মধ্যে ১১৯টি মামলায় হেরে যায় দুদক। এসব মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোর রায় দুদকের পক্ষে যাওয়ায় সাজার মুখোমুখি হয়েছেন আসামিরা। এছাড়া ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুদকের দায়ের ১২৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যেও ৬৬টি মামলা হেরে যায় সংস্থাটি।
তদন্ত ও অনুসন্ধানের দুর্বলতা, আইনি লড়াইয়ে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে এই পরিণতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দুদকের সাবেক আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, তদন্তে কিছু ত্রুটি থাকায় অনেকে মামলার রায় দুদকের বিপক্ষে যায়। তবে হেরে যাওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই  অনেকে বছরের পুরনো মামলা, তাই সেগুলোর প্রমানাদী জোগাড়েও কিছুটা দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে। তবে দুদক সূত্রের দাবি, হেরে যাওয়া মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালাতে যাচ্ছে সংস্থাটি। সেখান থেকে বেশকিছু মামলায় নিজেদের পক্ষে রায় পাচ্ছে দুদক। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, বেশির ভাগ মামলায় হেরে যাচ্ছি কথাটা ঠিক নয়। তাছাড়া এখন হাইকোর্ট থেকে ৯০ ভাগ মামলায় বিচারিক আদালতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। যে মামলাগুলোতে আমরা হেরে যাচ্ছি, সেখানেও আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই। আমরা আবার হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল করছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মামলায় হেরে যাওয়া প্রসঙ্গে দুদক সচিব মুস্তাফা কামাল বলছেন, বিষয়টি দুদকের নজরে রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো এই পরিস্থিতি আমাদের নজরে রয়েছে। দ্বিতীয় কথা হলো, এর থেকে উত্তরণের জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলছি। তারা যেন আমাদের কথা আদালতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন। সঠিক আলামত সঠিকভাবে প্রদর্শন করেন। তবে সম্প্রতি দুদকের করা মামলাগুলোর মধ্যে আসামিদের সাজার হার বেড়েছে বড়ে বলে জানান দুদক সচিব। এই ধারা অব্যাহত রাখতে চোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে দুদকের পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার ৫-এর ১ অধ্যায়ে নিজস্ব মূল্যায়নে বলা হয়েছে, দুদকে স্থায়ী বিচার পরিচালনা ব্যবস্থার অভাব বিদ্যমান রয়েছে। কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যগুলো হারিয়ে যায়। ফলে মামলা প্রমাণে অনেক জটিলতায় পড়তে হয়। উপযুক্ত আদালতে দুর্নীতির মামলাগুলো কার্যকরভাবে উপস্থাপন ও আলামত প্রদর্শনে ব্যর্থ হতে হয়। প্যানেলের আইনজীবী যারা দুদকের হয়ে কাজ করেন, তাদেরও যথেষ্ট প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া বিশেষ আদালত, বিচার পরিচালনা ইউনিট ও দুদক-এর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবও রয়েছে। ফলে মামলাগুলোর সঠিকভাবে বিচার হয় না। অপরদিকে এ মামলাগুলোর বিচার সঠিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এবং আধুনিক সফটওয়ার ও সিসি টিভি এবং কম্পিউটারের প্রমাণও আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়।
সূত্র জানায়, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মোটা দাগে কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে একটি স্থায়ী বিচার পরিচালনা বিভাগ (প্রসিকিউশন ইউনিট) প্রতিষ্ঠা করা। যা আলামত নিরাপদে সংরক্ষণ, বিচারাধীন মামলা পরিচালনা এবং দুদক ও সংশ্লিষ্ট স্টক হোল্ডারের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ সুনিশ্চিত করবে। এছাড়া বিচার প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য আরো কার্যকরী প্রযুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও দুদক সূত্র জানায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

৫৭ ভাগ মামলায় হেরে যায় দুদক কার্যকর তদন্ত ও অনুসন্ধানে দুর্বলতা

আপলোড টাইম : ১২:৩৫:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

32828_dudok

সমীকরণ ডেস্ক: দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিনিয়তই চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলাও করছে। চলছে গ্রেপ্তার অভিযানও। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন বেশির ভাগ অভিযুক্ত। দালিলিক প্রমাণের দুষ্প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন কারণে নিজেদের দায়ের করা ৫৭ ভাগ মামলায় হেরে যায় সংস্থাটি। সম্প্রতি দুদকের করা একটি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত দুদকের দায়ের করা মামলার মধ্যে ১১৪৬টি মামলার বিচারকার্য সম্পাদন হয়েছে। এরমধ্যে পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়া ৬৫২টি মামলার আসামি খালাস পেয়েছে, যা বিচার সম্পাদন হওয়া মামলার ৫৭ ভাগ। এছাড়া শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে ৪৯৪টি মামলার আসামি। পরিসংখ্যন অনুযায়ী ২০০৯ ও ২০১০ সালে অর্ধেকের বেশি মামলার রায় দুদকের পক্ষে গেলেও পরবর্তী বছরগুলোর চিত্র ভিন্ন। পরের ৬ বছরে অর্ধেকের বেশি মামলায় হেরে যায় সংস্থাটি। পরিসংখ্যন বলছে, ২০০৯ সালে দুদকের দায়ের করা ১১১টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এরমধ্যে ৪৩টি মামলার আসামি খালাস পেয়েছেন, বাকি ৬৮ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০১০ সালে ১৭৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এরমধ্যে ৭৭টি মামলার আসামি খালাস পেয়েছেন, বাকি ১০২টি মামলার আসামির সাজা হয়। এরপর ২০১১ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ৬৯টি মামলার মধ্যে ৫৫টিতেই হেরে গিয়েছিল দুদক। যা এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন রেকর্ড। ২০১২ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৩২টি মামলার মধ্যে ৯০টি, ২০১৩ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৮৩টি মামলার মধ্যে ১১৬টি, ২০১৪ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৮৬টি ও ২০১৫ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ১৮৮টি মামলার মধ্যে ১১৯টি মামলায় হেরে যায় দুদক। এসব মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোর রায় দুদকের পক্ষে যাওয়ায় সাজার মুখোমুখি হয়েছেন আসামিরা। এছাড়া ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুদকের দায়ের ১২৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যেও ৬৬টি মামলা হেরে যায় সংস্থাটি।
তদন্ত ও অনুসন্ধানের দুর্বলতা, আইনি লড়াইয়ে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে এই পরিণতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দুদকের সাবেক আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, তদন্তে কিছু ত্রুটি থাকায় অনেকে মামলার রায় দুদকের বিপক্ষে যায়। তবে হেরে যাওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই  অনেকে বছরের পুরনো মামলা, তাই সেগুলোর প্রমানাদী জোগাড়েও কিছুটা দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে। তবে দুদক সূত্রের দাবি, হেরে যাওয়া মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালাতে যাচ্ছে সংস্থাটি। সেখান থেকে বেশকিছু মামলায় নিজেদের পক্ষে রায় পাচ্ছে দুদক। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, বেশির ভাগ মামলায় হেরে যাচ্ছি কথাটা ঠিক নয়। তাছাড়া এখন হাইকোর্ট থেকে ৯০ ভাগ মামলায় বিচারিক আদালতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। যে মামলাগুলোতে আমরা হেরে যাচ্ছি, সেখানেও আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই। আমরা আবার হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল করছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মামলায় হেরে যাওয়া প্রসঙ্গে দুদক সচিব মুস্তাফা কামাল বলছেন, বিষয়টি দুদকের নজরে রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো এই পরিস্থিতি আমাদের নজরে রয়েছে। দ্বিতীয় কথা হলো, এর থেকে উত্তরণের জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলছি। তারা যেন আমাদের কথা আদালতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন। সঠিক আলামত সঠিকভাবে প্রদর্শন করেন। তবে সম্প্রতি দুদকের করা মামলাগুলোর মধ্যে আসামিদের সাজার হার বেড়েছে বড়ে বলে জানান দুদক সচিব। এই ধারা অব্যাহত রাখতে চোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে দুদকের পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার ৫-এর ১ অধ্যায়ে নিজস্ব মূল্যায়নে বলা হয়েছে, দুদকে স্থায়ী বিচার পরিচালনা ব্যবস্থার অভাব বিদ্যমান রয়েছে। কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যগুলো হারিয়ে যায়। ফলে মামলা প্রমাণে অনেক জটিলতায় পড়তে হয়। উপযুক্ত আদালতে দুর্নীতির মামলাগুলো কার্যকরভাবে উপস্থাপন ও আলামত প্রদর্শনে ব্যর্থ হতে হয়। প্যানেলের আইনজীবী যারা দুদকের হয়ে কাজ করেন, তাদেরও যথেষ্ট প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া বিশেষ আদালত, বিচার পরিচালনা ইউনিট ও দুদক-এর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবও রয়েছে। ফলে মামলাগুলোর সঠিকভাবে বিচার হয় না। অপরদিকে এ মামলাগুলোর বিচার সঠিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এবং আধুনিক সফটওয়ার ও সিসি টিভি এবং কম্পিউটারের প্রমাণও আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়।
সূত্র জানায়, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মোটা দাগে কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে একটি স্থায়ী বিচার পরিচালনা বিভাগ (প্রসিকিউশন ইউনিট) প্রতিষ্ঠা করা। যা আলামত নিরাপদে সংরক্ষণ, বিচারাধীন মামলা পরিচালনা এবং দুদক ও সংশ্লিষ্ট স্টক হোল্ডারের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ সুনিশ্চিত করবে। এছাড়া বিচার প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য আরো কার্যকরী প্রযুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও দুদক সূত্র জানায়।