সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন বিজিবি অধিনায়ক
- আপলোড টাইম : ১০:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৮
- / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে
সীমান্ত অপরাধ দমনে ৬-বিজিবি’র নানা উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষের জীবনের চেয়ে মুল্যবান কিছু হতে পারে না। আমাদের দেশের কোন নাগরিক অবৈধ পধে ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে ভারতীয় বিএসএফ’র হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করবে- এটা কাম্য নয়। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যাতায়াতে রাষ্ট্র স্বীকৃত বৈধপথ রয়েছে। নির্দিষ্ট সেই পথ ব্যাতিরেকে ভারতীয় গরু বা অন্যকোন পণ্যের চোরাচালান কাজে অবৈধ পথে ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে কোন বাংলাদেশী নাগরিকের জীবন যেন বিপন্ন না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ নজরদারি চলছে। সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে কোন নাগরিক নিহত হলে দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই সীমান্ত হত্যা বন্ধে সীমান্তের শুন্যরেখায় সাধারনের যাতায়াত বন্ধে সীমান্তবর্তী এলাকার নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ান সদর দপ্তরে বিজিবি দিবসে মধ্যহ্ন ভোজ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে এক অ-আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভায় এ কথাগুলো বলছিলেন ৬-বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়ন পরিচালক লে. কর্ণেল ইমাম হাসান।
তিনি আরো বলেন, এতদাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কিত ধারণা কম। এখানকার অনেকেই চোরাচালানকে অপরাধ মনে করেন না। এরা অনেকেই চোরাচালানকে মনে করেন ব্যবসা। তাই এইসব এলাকার মানুষকে আইনি সচেতন করে তুলতে জনসচেতনতামূলক মতবিনিময় সভাসহ প্রচলিত আইনের প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে। মাদক চোরাচালান রোধে জনপ্রতিনিধি, সামাজিক নেতৃত্ব ও ধর্মীয় ব্যাক্তিত্বদের সমন্বয়ে জন সম্পৃক্ততার কাজ চলছে। এসব উদ্যোগ গ্রহণে কিছু সুফল পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত হত্যার কোন ঘটনা যেমন ঘটেনি, তেমনি মাদক ও চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও অনেকটা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
৬-বিজিবি অধিনায়ক আরো জানালেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমেই তাঁর ব্যাটালিয়ন অধিন ২০টি বিওপি ও একটি আইসিপিতে কর্মরত সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। যেসব বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সত্যতা মিলেছে; তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক সকল সদস্যের কাছে সতর্ক বার্তা পৌছে দেন। প্রাথমিক ভাবে ঘর শাসনের পর ব্যাটালিয়নের সীমানাধীন ১১৫ কি.মি. সীমান্ত ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি দেখতে পান সীমান্তবর্তী গ্রাম হাট বাজারে কিছু দোকান এই শীতে অনেক রাত অবধি খোলা থাকলেও দোকানগুলোয় নামমাত্র কয়েকজন ছাড়া আর কোন খরিদ্দার নেই। তিনি ভাবলেন শীত কালে রাত ৯টা মানে অনেক রাত। এ সময় শহরের অধিকাংশ দোকান-পাট যেখানে বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তায় কমে আসে লোক চলাচল; সেখানে এই অজোপাড়ায় এত রাতে দোকান খোলা! তাও আবার খরিদ্দারের নেই কোন উপস্থিতি! এতে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি গোপণে এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন মূলত এই দোকানগুলোয় বসে থাকা মানুষগুলো কেউ চোরাকারবারী, কেউবা এর সহযোগী লাইনম্যান। এরা দোকানে বসে রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষায় থাকে; বিজিবি’র গতিবিধির উপর নজর রাখে। গ্রামের পরিবেশ একটু নিস্তব্ধ হলে এরা সীমান্তের দিকে যায় এবং চোরাচালানের মালামাল পাচার করে। তাই তিনি গ্রামবাসীদের বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানালেন, ‘শীতকালে রাত ৯টার পরে কোন দোকান খোলা নয়, বিনা প্রয়োজনে অযথা রাস্তায় ঘোরঘুরিও নয়।’ সীমান্ত পরিদর্শনকালে তিনি আরো লক্ষ্য করেন, সীমান্তের শূন্য রেখায় নজরদারি ও টহল কাজে বিজিবি’র চলাচলে কোন সুনির্দিষ্ট রাস্তা নেই। ফলে শূন্যরেখা সংলগ্ন কৃষকের জমির ফসলের মধ্যেদিয়েই বিজিবিকে যাতায়াত করতে হয়। এতে করে কষ্টের আবাদী ফসল যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি বিজিবি’র টহল কাজে চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি এও লক্ষ্য করলেন সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে দেড়’শ গজ পর্যন্ত নোম্যন্স ল্যান্ডের মধ্যকার জমিতে কৃষকেরা তিন ফুটের অধিক উচ্চতার ফসল যেমন- আখ, পাট, ভুট্টাসহ উচু মাচায় সবজি চাষ করায় শূন্যরেখা পর্যন্ত বিজিবি’র নজরদারিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। গোপনে তথ্য পেলেন অনেক ক্ষেত্রে চোরাকারবারীরা ওই সব জমির মালিক ও কৃষককে তিন ফুটের অধিক উচ্চতার ফসল আবাদে প্রলুব্ধ করে থাকেন। এ সব জমিতে তিন ফুটের অধিক উচ্চতার ফসল আবাদ হলে বিজিবি’র নজর এড়াতে উচু ফসলের আড়ালে চোরাচালানের মালামাল ও নিজেকে লুকিয়ে রাখা সহজ হয়। বিধায় চোরাকারবারীরা এ কাজে সংশ্লিষ্ট কৃষককে প্রলুব্ধ করে থাকে। তাই তিনি জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সামাজিক নেতৃত্ব ও ধর্মীয় ব্যাক্তিত্বদের সমন্বয়ে বিজিবি’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভাগুলোয় চোরাচালান প্রতিরোধে জনসাধারণকে সহযোগিতার আহ্বান জানালেন। কষ্টে আবাদকৃত কৃষকের ফসলের ক্ষতি এড়াতে শূন্যরেখা বরাবর বিজিবি’র চলাচলে তিনফুট রাস্তা চাইলেন; শূন্যরেখা থেকে দেড়’শ গজের মধ্যে তিনফুটের অধিক উচ্চতার কোন ফসল আবাদ না করতে অনুরোধ করলেন।
স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে লে. কর্ণেল ইমাম হাসান বললেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে এখানে এসেছি; আবার সরকারি নির্দেশে অন্য কোথাও চলে যাবো। আপনারা যারা স্থানীয় নাগরিক তারা থাকবেন। আপনার পরিবার সন্তানেরা থাকবেন। মাদক ও চোরাচালান সমাজের ক্যান্সার। মাদক ও চোরাচালান রোধে আপনারা যদি এগিয়ে না আসেন তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনারাই। তাই চোরাচালান রোধে তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। বিজিবি’র কোন সদস্যের বিরুদ্ধেও যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে সে সম্পর্কেও সরাসরি আমাকে তথ্য দিন। আমি ছাড়া কেউ জানবে না। অভিযোগ তথ্য সঠিক হলে দৃশ্যমান শাস্তি দেখতে পাবেন। প্রথম দিকে জমির মালিকেরা কিছুটা ইতস্ততা করলেও ৬-বিজিবি অধিনায়কের বক্তব্যের পর তাঁর আন্তরিক সদিচ্ছায় আস্থা রেখে স্থানীয়রা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাদের সহযোগিতায় শূন্যরেখা সংলগ্ন তিনফুট রাস্তা নির্মাণ ইতিমধ্যেই ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। নোম্যন্সল্যান্ডে তিনফুট উচ্চতার ফসল আবাদেও কৃষকেরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে চোরাচালানরোধে সীমান্তে নজরদারি সহজ হওয়ায় কমে এসেছে সীমান্ত অপরাধ। তাই সীমান্ত অপরাধ দমনে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে সহযোগিতা চাইলেন সাংবাদিকসহ গণমাধ্যমের।