ইপেপার । আজ রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগে বাড়ছে ক্যান্সারসহ জটিল রোগীর সংখ্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০১৮
  • / ৮১৭ বার পড়া হয়েছে

এম এ মামুন: বর্তমানে বাতাসে-সীসা, পানিতে- আর্সেনিক, চাউলে-ক্যাডমিয়াম, মাছে-ফরমালিন, ফলে-কার্বাইড, ফলের রসে ও বিস্কুটে বিভিন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল-রং, মুরগীর মাংসে-ক্রোমিয়াম এবং সবজিতে কীটনাশকসহ, সকল খাদ্যেই এখন বিষ আর বিষ। শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পোকামাড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক। ফলে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত সবজি যখন বাজারে আসছে তখনও এতে থাক কীটনাশকের প্রবল উপস্থিতি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে শুধু বাজারজাতকালিন সময়েই নয়,রান্নাপরবর্তি সময়েও এই সবজিতে বিষের প্রভাব বিপদজনক মাত্রায় রয়ে যাচ্ছে। ফলে এই সবজি খেয়ে মানবদেহে বাসা বাধছে মরণব্যাধী ক্যান্সারসহ জটিল রোগ। চিকিৎসকদের মতে, ফসলে যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহারের এবং কীটনাশক প্রয়োগে উৎপাদিত সবজি খেয়ে মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছে – গ্যাসট্রিক, আলসার, হৃদরোগ, অন্ধত্ব, ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার এবং ¯œায়ুরোগসহ প্রভৃতি জটিল কঠিন রোগ। মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমেই অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। তাই বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশে বিষমুক্ত সবজি চাষে হাতে কলমে নারী পুরুষদের কে প্রশিক্ষণসহ উৎপাদনে সহযোগীতা করে আসছে। বর্তমানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষকরা এগিয়ে আসায় কৃষি বিভাগ বিষমুক্ত সবজি চাষ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা দেখছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলাসদরসহ চার উপজেলায় চলতি ২০১৬-১৭ উৎপাদন মৌসুমে আইপিএম, আইসিএম ও আইএফএম স্কুলের মাধ্যমে ১২শ’ কৃষক ও কৃষাণীকে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের উপর প্রশিক্ষণসহ এ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, ৭০ এর দশক থেকে এদেশে ফসল আবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয়ে আসছে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাটির স্বাস্থ্য নির্ভর করে মাটির মধ্যে বিদ্যমান পানি, বায়ু আর জৈব উপাদানের উপর। আর এসব করছে মাটির নিচে বসবাসরত অনুজীব সমষ্টির উপর। অপরিকল্পিত ভাবে রাসায়নিক সার, বালাইনাশক ও আগাছা নাশক ব্যবহারের ফলে এ অনুজীব ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাটির অনুজীব বা মাটির স্বাস্থ্য নয়, ধ্বংস হচ্ছে জীব বৈচিত্রসহ পরিবেশের। ফসলের জমিতে ক্রমাগত আগাছা নাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাসসহ ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে।
মাটির প্রাণ হচ্ছে জৈবসার। জৈব পদার্থ হারিয়ে মাটি অনুর্বর ও অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়ছে। মাটিতে ৫% জৈব পদার্থ থাকা দরকার কিন্তু মাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে জৈব পদার্থ রয়েছে শতকরা ০.৫ ও ১.০ ভাগ বা তারও কম। জমির আদর্শ খাদ্য হল গোবর সার, দেশের অনেক এলাকায় এই আদর্শ গোবর সার জমিতে প্রয়োগের পরিবর্তে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডেনর্মাকসহ অনেক উন্নত দেশে মাটির জৈব পদার্থ সংরক্ষণের জন্য জমিতে গোবরসার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। বলা হয় “সবার আগে জৈব সার তারপর অন্য সার” আমরা চলছি উল্টো পথে।
অপরদিকে, অপরিকল্পিত বালাই নাশক ব্যবহারের ফলে পোকা-মাকড়, রোগ-বালাইয়ের প্রাকৃতিক শত্রু বন্ধু পোকা ধবংস হচ্ছে। শত্রু পোকার বালাইনাশক সহনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কম ক্ষতিকারক নিম্ন প্রজাতির পোকা-মাকড় ক্ষতিকারক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করছে। ফসলে যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহার, ফলে ও মাছে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর ফলস্বরূপ মানবদেহে সৃষ্টি হচেছ- ব্লাড-ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, ব্্েরস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, কিডনী, ফুসফুস ক্যান্সার প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হচেছ মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী আজ অসহায় হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জন স্বাস্থের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে এক গবেষনা প্রবন্ধে বলা হয়েছে শুধুু মাত্র ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়বেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনী রোগের আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারিরীক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকালঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। যা এক কথায় ভয়াবহ (বাংলাদেশ প্রতিদিন-২৬ অক্টোবর’২০১৪)। বাতাসে- সীসা, পানিতে- আর্সেনিক, চাউলে- ক্যাডমিয়াম, মাছে- ফরমালিন, ফলে- কার্বাইড, ফলের রসে ও বিস্কুটে- বিভিন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল রং, সব্জীতে কীটনাশক, মুরগীর মাংসে- ক্রোমিয়াম সকল খাবারে বিষ আর বিষ।
সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি দেশের অনেক শিল্পাঞ্চল এলাকার উত্তম আবাদী জমি আজ পরিবেশ দূষণের মারাত্বক শিকার। কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য গিয়ে মিশছে নদী-নালা, খাল-বিলে। খাল-বিলের পানি ব্যবহৃত হচেছ জলাশয়ের আশেপাশের আবাদী জমিতে। আবাদী জমি হারাচ্ছে উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা। শিল্পের বর্জ্যরে মাধ্যমে এসব এলাকার মাটিতে জমা হচ্ছে ভারী ধাতব বস্তু (লেড, ক্যাডনিয়াম, ক্রোমিয়াম)। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ সব এলাকার উৎপাদিত চাউলে ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আইপিএম, আইসিএম বর্তমানে আইএফএম (ওঋগ) বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কাবের সদস্যদের প্রচার-প্রচারণা ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির ফলেই বালাইনাশকের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে।
তবে, আশার কথা হলো সারাদেশে যেখানে ২০০৮ সালে দেশে বালাইনাশক ব্যবহার হয়েছিল ৪৮ হাজার ৬৯০ মেঃ টন, ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮৮২ মেঃ টন। সারাদেশে আইপিএম, আইসিএম ক্লাবের বর্তমান সংখ্যা ১০ হাজার টি এবং প্রশিক্ষিত কৃষক কৃষাণীর সংখ্যা ৩ লাখ জন। আগামিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ২০ হাজার টি আইপিএম/আইএফএম ক্লাব স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে কীটনাশকের জুডিশিয়াল/পরিমিত ব্যবহার, পরিবেশ রক্ষায় কীটনাশকের পরিবর্তে সবজিতে ফেরোমেন ট্রাপ, ব্রাকন, ট্রাইকোগামা (উপকারী অনুজীব দ্বারা ক্ষতিকর পোকা দমন) ব্যবহার বৃদ্ধি করা, ধানের জমিতে পার্চিং করা ও ফল পাকানোতে প্রাকৃতিক পদ্বতি অবলন্বন করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো পরিহার এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাব সর্ম্পকে ব্যাপক প্রচারের কর্মূসূচী হাতে নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে, নিজেদের বাঁচার তাগিদেই কীটনাশমুক্ত বা বিষমুক্ত সবজি ও খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, কীনশাসক ব্যবহার করা সাক সবজি খেলে মানব দেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগে উৎপাদিত সবজি খেলে মানবদেহে অর্গানো ফসফরাস পয়জন (AORGANO PHOSPHORUS POISON জমা হতে থাকে। আর এই পয়জন দেহের কিডনি ও লিভার দিয়ে বের হয়। এর ফলে কিডনি ও লিভারের চরম ক্ষতি হতে পারে । পয়জনযুক্ত বা কীটনাশকদ্বারা উৎপাদিত শাক সবজি দীর্ঘদিন খেলে মানুষ তার জীবনী শক্তি হরাবে এক সময় কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে মারা যাবে। বিধায় বিষমুক্ত খাবারের উপর গুরুত্ব না দিলে মানুষ তার নিজের জীবন নিজেই ধ্বংশ করবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগে বাড়ছে ক্যান্সারসহ জটিল রোগীর সংখ্যা

আপলোড টাইম : ১০:৩৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০১৮

এম এ মামুন: বর্তমানে বাতাসে-সীসা, পানিতে- আর্সেনিক, চাউলে-ক্যাডমিয়াম, মাছে-ফরমালিন, ফলে-কার্বাইড, ফলের রসে ও বিস্কুটে বিভিন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল-রং, মুরগীর মাংসে-ক্রোমিয়াম এবং সবজিতে কীটনাশকসহ, সকল খাদ্যেই এখন বিষ আর বিষ। শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পোকামাড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক। ফলে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত সবজি যখন বাজারে আসছে তখনও এতে থাক কীটনাশকের প্রবল উপস্থিতি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে শুধু বাজারজাতকালিন সময়েই নয়,রান্নাপরবর্তি সময়েও এই সবজিতে বিষের প্রভাব বিপদজনক মাত্রায় রয়ে যাচ্ছে। ফলে এই সবজি খেয়ে মানবদেহে বাসা বাধছে মরণব্যাধী ক্যান্সারসহ জটিল রোগ। চিকিৎসকদের মতে, ফসলে যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহারের এবং কীটনাশক প্রয়োগে উৎপাদিত সবজি খেয়ে মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছে – গ্যাসট্রিক, আলসার, হৃদরোগ, অন্ধত্ব, ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার এবং ¯œায়ুরোগসহ প্রভৃতি জটিল কঠিন রোগ। মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমেই অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। তাই বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশে বিষমুক্ত সবজি চাষে হাতে কলমে নারী পুরুষদের কে প্রশিক্ষণসহ উৎপাদনে সহযোগীতা করে আসছে। বর্তমানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষকরা এগিয়ে আসায় কৃষি বিভাগ বিষমুক্ত সবজি চাষ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা দেখছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলাসদরসহ চার উপজেলায় চলতি ২০১৬-১৭ উৎপাদন মৌসুমে আইপিএম, আইসিএম ও আইএফএম স্কুলের মাধ্যমে ১২শ’ কৃষক ও কৃষাণীকে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের উপর প্রশিক্ষণসহ এ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, ৭০ এর দশক থেকে এদেশে ফসল আবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয়ে আসছে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাটির স্বাস্থ্য নির্ভর করে মাটির মধ্যে বিদ্যমান পানি, বায়ু আর জৈব উপাদানের উপর। আর এসব করছে মাটির নিচে বসবাসরত অনুজীব সমষ্টির উপর। অপরিকল্পিত ভাবে রাসায়নিক সার, বালাইনাশক ও আগাছা নাশক ব্যবহারের ফলে এ অনুজীব ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাটির অনুজীব বা মাটির স্বাস্থ্য নয়, ধ্বংস হচ্ছে জীব বৈচিত্রসহ পরিবেশের। ফসলের জমিতে ক্রমাগত আগাছা নাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাসসহ ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে।
মাটির প্রাণ হচ্ছে জৈবসার। জৈব পদার্থ হারিয়ে মাটি অনুর্বর ও অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়ছে। মাটিতে ৫% জৈব পদার্থ থাকা দরকার কিন্তু মাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে জৈব পদার্থ রয়েছে শতকরা ০.৫ ও ১.০ ভাগ বা তারও কম। জমির আদর্শ খাদ্য হল গোবর সার, দেশের অনেক এলাকায় এই আদর্শ গোবর সার জমিতে প্রয়োগের পরিবর্তে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডেনর্মাকসহ অনেক উন্নত দেশে মাটির জৈব পদার্থ সংরক্ষণের জন্য জমিতে গোবরসার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। বলা হয় “সবার আগে জৈব সার তারপর অন্য সার” আমরা চলছি উল্টো পথে।
অপরদিকে, অপরিকল্পিত বালাই নাশক ব্যবহারের ফলে পোকা-মাকড়, রোগ-বালাইয়ের প্রাকৃতিক শত্রু বন্ধু পোকা ধবংস হচ্ছে। শত্রু পোকার বালাইনাশক সহনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কম ক্ষতিকারক নিম্ন প্রজাতির পোকা-মাকড় ক্ষতিকারক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করছে। ফসলে যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহার, ফলে ও মাছে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর ফলস্বরূপ মানবদেহে সৃষ্টি হচেছ- ব্লাড-ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, ব্্েরস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, কিডনী, ফুসফুস ক্যান্সার প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হচেছ মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী আজ অসহায় হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জন স্বাস্থের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে এক গবেষনা প্রবন্ধে বলা হয়েছে শুধুু মাত্র ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়বেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনী রোগের আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারিরীক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকালঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। যা এক কথায় ভয়াবহ (বাংলাদেশ প্রতিদিন-২৬ অক্টোবর’২০১৪)। বাতাসে- সীসা, পানিতে- আর্সেনিক, চাউলে- ক্যাডমিয়াম, মাছে- ফরমালিন, ফলে- কার্বাইড, ফলের রসে ও বিস্কুটে- বিভিন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল রং, সব্জীতে কীটনাশক, মুরগীর মাংসে- ক্রোমিয়াম সকল খাবারে বিষ আর বিষ।
সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি দেশের অনেক শিল্পাঞ্চল এলাকার উত্তম আবাদী জমি আজ পরিবেশ দূষণের মারাত্বক শিকার। কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য গিয়ে মিশছে নদী-নালা, খাল-বিলে। খাল-বিলের পানি ব্যবহৃত হচেছ জলাশয়ের আশেপাশের আবাদী জমিতে। আবাদী জমি হারাচ্ছে উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা। শিল্পের বর্জ্যরে মাধ্যমে এসব এলাকার মাটিতে জমা হচ্ছে ভারী ধাতব বস্তু (লেড, ক্যাডনিয়াম, ক্রোমিয়াম)। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ সব এলাকার উৎপাদিত চাউলে ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আইপিএম, আইসিএম বর্তমানে আইএফএম (ওঋগ) বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কাবের সদস্যদের প্রচার-প্রচারণা ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির ফলেই বালাইনাশকের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে।
তবে, আশার কথা হলো সারাদেশে যেখানে ২০০৮ সালে দেশে বালাইনাশক ব্যবহার হয়েছিল ৪৮ হাজার ৬৯০ মেঃ টন, ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮৮২ মেঃ টন। সারাদেশে আইপিএম, আইসিএম ক্লাবের বর্তমান সংখ্যা ১০ হাজার টি এবং প্রশিক্ষিত কৃষক কৃষাণীর সংখ্যা ৩ লাখ জন। আগামিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ২০ হাজার টি আইপিএম/আইএফএম ক্লাব স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে কীটনাশকের জুডিশিয়াল/পরিমিত ব্যবহার, পরিবেশ রক্ষায় কীটনাশকের পরিবর্তে সবজিতে ফেরোমেন ট্রাপ, ব্রাকন, ট্রাইকোগামা (উপকারী অনুজীব দ্বারা ক্ষতিকর পোকা দমন) ব্যবহার বৃদ্ধি করা, ধানের জমিতে পার্চিং করা ও ফল পাকানোতে প্রাকৃতিক পদ্বতি অবলন্বন করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো পরিহার এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাব সর্ম্পকে ব্যাপক প্রচারের কর্মূসূচী হাতে নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে, নিজেদের বাঁচার তাগিদেই কীটনাশমুক্ত বা বিষমুক্ত সবজি ও খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, কীনশাসক ব্যবহার করা সাক সবজি খেলে মানব দেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগে উৎপাদিত সবজি খেলে মানবদেহে অর্গানো ফসফরাস পয়জন (AORGANO PHOSPHORUS POISON জমা হতে থাকে। আর এই পয়জন দেহের কিডনি ও লিভার দিয়ে বের হয়। এর ফলে কিডনি ও লিভারের চরম ক্ষতি হতে পারে । পয়জনযুক্ত বা কীটনাশকদ্বারা উৎপাদিত শাক সবজি দীর্ঘদিন খেলে মানুষ তার জীবনী শক্তি হরাবে এক সময় কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে মারা যাবে। বিধায় বিষমুক্ত খাবারের উপর গুরুত্ব না দিলে মানুষ তার নিজের জীবন নিজেই ধ্বংশ করবে।