খাদ্যবান্ধন কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকা কেজিতে চাল : দেশে দুস্থ মানুষ থাকবে না
- আপলোড টাইম : ০১:০২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ৪২০ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: খাদ্যবান্ধব’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে কুড়িগ্রামের চিলমারী থানাহাট এ ইউ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক সুধী সমাবেশে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো মানুষ যেন দরিদ্র না থাকে। বাংলাদেশ উন্নত হবে, সমৃদ্ধ হবে- সে লক্ষ্যে আমরা এই কর্মসূচি চালু করেছি।’ ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এই স্লোগানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে হতদরিদ্রদের মাঝে বছরে সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে। হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবার মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- এই পাঁচ মাস এই সুবিধা পাবেন। কেজি ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি পর্যন্ত চাল কিনতে পারবেন তারা। নারী, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারীপ্রধান পরিবারকেই প্রাধান্য দেয়া হবে এ কর্মসূচিতে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রতি ৫০০ পরিবারের জন্য একজন করে ডিলার নিয়োগ দিচ্ছে। আর সুবিধাভোগী প্রত্যেক পরিবারকে দেয়া হচ্ছে একটি করে কার্ড। সেই কার্ড তুলে দিয়েই কর্মসূচির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাসিন্দা বাসন্তী রানী, ফাতেমা বেগম, হালিমা বেগম, জিয়ারা খাতুন, মালতী রায়, রশিদা, ফরিদউদ্দিন, আবদুল হক, আজিজুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, আবু বক্কর সিদ্দিক, খালেক উদ্দিন, আমজাদ হোসেন, মোস্তফা আলী, আবু জাফর সিদ্দিক ও আবদুল খালেকের হাতে কার্ড ও ৩০ কেজি চালের বস্তা তুলে দেন তিনি। এ সময় কয়েকজন নারীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখে হাত বুলিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা মানুষ কষ্টে থাকবে না, একটা মানুষ না খেয়ে থাকবে না, একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে না। বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি গেছে তাদেরটা তৈরি করে দেয়ার কথা বলেছি জেলা প্রশাসনকে।’ মানুষের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতি করি কাদের জন্য? আপনাদের জন্য। দেশের মানুষ যেন কষ্টে না থাকে সেজন্য।’ কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস জানায়, জেলায় মোট এক লাখ ২৫ হাজার ২৭৯টি পরিবার খাদ্যবান্ধব কার্ডের মাধ্যমে এ কর্মসূচির সুফল পাবে। এর মধ্যে চিলমারীর আট হাজার ২১টি দরিদ্র পরিবারকে এই কার্ড দেয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদরে ১৭ হাজার ৭২২টি, নাগেশ্বরীতে ২৪ হাজার ২০টি, ভুরুঙ্গামারীতে ১৩ হাজার ৯৮৫টি, ফুলবাড়ীতে নয় হাজার ২৯৮টি, রাজারহাটে ১০ হাজার ৬০২টি, উলিপুরে ২৪ হাজার ২০৮টি, রৌমারীতে ১২ হাজার ৬৮৫টি এবং রাজীবপুর উপজেলায় চার হাজার ৭৩৮টি কার্ড বিতরণ প্রক্রিয়াধীন। চাল বিক্রির জন্য জেলায় ২৪৭ জন সম্ভাব্য ডিলারের মধ্যে ১২৬ জনকে ইতোমধ্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটা প্রতিজ্ঞা ছিল, সুযোগ পেলে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করার জন্য কাজ করব। তাতে জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে। আমরা দুস্থদের সাহায্য দিচ্ছি। কিন্তু দুস্থ মানুষ দুস্থ থাকুন, সেটা আমরা আর চাই না। সেটা থেকে মুক্তি মিলছে এখন।’ কুড়িগ্রামসহ বৃহত্তর রংপুর এলাকায় উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, এ অঞ্চলে আর কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না, মঙ্গা হবে না, কেউ না খেয়ে দুঃখে কষ্টে থাকবে না। পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খাদ?্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এম বদরুদ্দোজা স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি জানান, সরকার প্রতি কিলোগ্রাম চালে ২৭ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সরকারকে এ কর্মসূচিতে মোট দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘হতদরিদ্রদের মাঝে বছরে পাঁচ মাস এ চাল দেয়া হবে। যখন কাজের একটু অভাব থাকে তখন।’ কোনোরকম ‘ভুলত্রুটি ছাড়া’ চালিয়ে নেয়া গেলে সামাজিক নিরাপত্তার এই নতুন কর্মসূচি সফল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সাংসদ একেএম মাইদুল ইসলাম বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ সফুরা বেগম, জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মনজু মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাফর আলী, চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস সরকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সকালে হেলিকপ্টারযুগে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। থানাহাট এ ইউ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার পর তিনি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।