পুরোদমে ব্যস্ত এখন তিতুদহের কামারপাড়াগুলো
- আপলোড টাইম : ০১:০৪:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ৪৮৬ বার পড়া হয়েছে
তিতুদহ থেকে আকিমুল ইসলাম: আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। উৎসবমূখর পরিবেশে সারাদেশে উদযাপন করা হবে মুসলমানদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদুল আজহা। আর এই ঈদ মানে ধর্মীয় নির্দেশনায় পশু কোরবানী করা। আর এই পশু জবাই ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দা ছুরি ধামাসহ অন্যান্য উপকরন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। আর এসব যন্ত্রপাতি শান দেওয়া নতুনভাবে তৈরি করার জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কমার। কোরবানির পশুহাটে চলছে পশু ক্রয়- বিক্রয়ের প্রস্তুতি পাশাপাশি দা ছুরি ধামা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হতে দেখা যাচ্ছে গৃহস্থদের। কোরবানদাতা পরিবারের সদস্যরা কিংবা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কসাইরা নিজেদের চাহিদামতো দা ছুরি চাকু ধামা কুড়াল বঁটি জোগাড় করতে ছুটছে কামারদের কাছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউপির বিভিন্ন এলাকার হাটবাজার তথা ছোট বড় সব হাটের সর্বত্রই এখন কামারদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন তারা দা ছুরি চাকু কুড়াল কাঠারি বঁটিসহ ধারালো বিভিন্ন সামগ্রী। কেউবা অডার্রকৃত আর কেউবা নিজের লোহা দিয়েই তৈরি করে পাইকারি দরে বিক্রি করছেন। তবে এসব তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এখনো। পুরনো নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়িয়ে লোহা থেকে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। কামাররা জানান এ পেশায় অধিক পরিশ্রম। আর শ্রম অনুযায়ী তারা এর যথাযথ মূল্য পান না। কারন বাজারে লোহার বাজারদর বেশি। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের মূল্যের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে যদি কামাররা তাদের লোহার ধারালো সামগ্রী তৈরি পেশাজীবীরাও মূল্যয়ন পেতেন বলে তারা মনে করেন। জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে তারা এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন। সারা বছর পরিবারে ও কৃষি জমিতে ব্যবহারের প্রয়োজনে অনেকে এসে তা তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোরবানির পশুর জন্য বেশি প্রয়োজন মনে হওয়ায় সবাই এখন ছুটছে কামারশালায়। আর এতেই এই মাসে জমজমাট হয়ে ওঠে কামারপাড়া। তিতুদহের খাড়াগোদার কামার পল্লীর কামার প্রদীপ কর্মকার বলেন এবারের ঈদে চাহিদামতো দিনে রাতে ২০থেকে ৩০টি কাজে গড়ে প্রতিদিন একেক জন কামার খরচ বাদে ৭শত থেকে ১হাজার টাকা আয় করেন। আবার, তিতুদহ ইউনিয়নের গড়াইটুপি গ্রামের বিমল কর্মকার জানান একটি বড় দা ৩কেজি লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৪শত টাকা, ১কেজি লোহার ১টি কোড়াল ২০০ থেকে ২২০ টাকা বড় ছোরা ওজন মতে ৩ থেকে সাড়ে ৫ শত টাকা। পশুকুড়াল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে লোহা গ্রাহকের হলে সেক্ষেত্রে শধু তৈরি ও শান বাবদ এসব সামগ্রীর প্রতিপিস ৫০ থেকে ১৫০ টাকা গ্রহন করা হয়। কামারদের সাথে কথা বলে জানাযায়, ঈদে যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্য সময় হয় না। তাই ঈদের আগে এ পেশাজীবীদের সচ্ছল হওয়ার মোক্ষম সময়। একারনে অনেকে মজুুদ করে ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করছেন। অনেকে জীর্ণ শীর্ণ শরীর নিয়েও একটু সুখের আশায় কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রি তত বেশি হবে বলে জানান তারা। ঈদুল আজহার ওয়াজিব পশু জবাই করা। আর জবাই করার অন্যতম উপাদান এসব পণ্য। সারা বছর তৈরিকৃত এসব পণ্য যত বিক্রি হয় তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদ মৌসুমে। তাই সামান্য লাভে বিক্রি করছি। সব মিলে ভালোই আছেন তিতুদহের কামার শিল্পরা। আবার খাড়াগোদার দিনু কর্মকার বলেন সারা বছর আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে। কিন্তুু ঈদে অনেকেই পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি চাপাতি চাকু কিনতে আসেন। আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথাই রেখে আগে থেকে বেশ কিছু জিনিস বানিয়ে রাখি। অনেকে আবার কোরবানির জন্য এসব ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি বাড়ি ও কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত সকল প্রকার সামগ্রী কিনে নিয়ে যায়। দিনু কর্মকার আরও বলে আগে অন্য হাটবাজারে প্রতিদিন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় হতো। ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে গিয়ে এখন প্রতিদিন ৭শ থেকে ১হাজার আয় হয়। হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকার কারনে নতুন কাজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কামাররা। তিনি আরও বলেন কর্মীদের এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।