সন্ত্রাসী অর্থায়নে ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশ
- আপলোড টাইম : ১২:১০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ৩৬৩ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিংয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে সোমবার। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি) বৈঠকে এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। কোনো কারণে কালো তালিকাভুক্ত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বড় ধাক্কার আশংকা করা হচ্ছে। বৈঠকে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপের ওপর একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে এপিজি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও একটি অ্যাকশন প্ল্যান বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ১১টি মানদণ্ড সূচক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যদি কোনো দেশ ৯ বা এর অধিক মানদণ্ডে ‘নিম্ন ও মধ্যম মানে’ থাকে, তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপভুক্ত (আইসিআরজি) হবে। এ হিসাবে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, কোনো দেশ জঙ্গি, সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ করতে না পারলে প্রথমে ওই দেশকে এপিজি ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ওই দেশকে কালো তালিকায় নেয়া হয়। এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আগ্রহ হারায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ভালো করছে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতিও ভালো। এপিজির বৈঠকে এর সঠিক মূল্যায়ন হবে। জানা গেছে, আজ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগোতে শুরু হচ্ছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) ১৯তম বার্ষিক সভা। ২৩ জুলাই ঢাকায় এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এ বৈঠক স্থগিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং বিভাগের সচিব শহিদুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করছে। সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এপিজির বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সভায় অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় যাবে কিনা, তা নির্ধারিত হবে। দেশের মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা জানতে গত বছরের ১১-২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করে এপিজি। পরে এপিজি একটি খসড়া মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটি আমেরিকায় অনুষ্ঠেয় এপিজির বার্ষিক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এতে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) ৪০টি সুপারিশের বিপরীতে ১৪টিতে পার্শিয়ালি কমপ্লায়েন্ট (পিসি), ২০টিতে লার্জলি কমপ্লায়েন্ট (এলসি) এবং ৬টিতে কমপ্লায়েন্ট (সি) রেটিং দেয়া হয়েছে। এ রেটিংগুলো উন্নত দেশের সমতুল্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা উন্নত দেশগুলো থেকেও ভালো। কিন্তু সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার ১১টি মানদণ্ডের মধ্যে দ্রুত অগ্রগতি সূচক পেয়েছে (আইও) ১টি। আর ৬টি সূচকে ‘মধ্যমান’ এবং ৪টিতে ‘নিম্নুমানের’ রেটিং দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ভালো হয়েছে শুধু প্রযুক্তিগত দিকগুলো। কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপের সূচক প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে মানি লন্ডারিং আইনকে আরও শক্তিশালী করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে কিছু কাজের অগ্রগতি হয়েছে। সম্প্রতি বাতিল হওয়া ঢাকায় এপিজির সম্মেলনে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের কাজের চূড়ান্ত মূল্যায়ন হওয়ার কথা। আমরা আশাবাদী ছিলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ফলাফলের। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওই সম্মেলনের আগে গুলশানে জঙ্গি হামলাসহ পরবর্তী ঘটনার কারণে বাংলাদেশ এখন নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, মানব পাচার, স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক ব্যবসা ও ব্যাংকিং জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং হচ্ছে- এমন আগাম আভাস দিয়েছে এপিজি। তবে বাংলাদেশ যাতে ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হয়ে সে জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দুটি কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটি সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্তে সহায়তা ও মনিটরিং করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হবে ওই বৈঠকে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ নিয়ে ২০০৮ সালে এ ধরনের মূল্যায়ন করা হয়েছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমে খুব বেশি সফলতা দেখাতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশকে কালো তালিকার আগের ধাপ ‘ধূসর’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তী নানা উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর সেখান থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসে। ২০০৮ সালের পর এবার সেই একই ধরনের মূল্যায়নের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।