ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন

সবার কণ্ঠে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে

নতুন আমেজে, নতুন আঙ্গিকে আনন্দ-উল্লাস, উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে। বাংলা নতুন বছরকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবার কণ্ঠে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার। এদিকে, বাংলা নববর্ষ-১৪৩২-কে বরণ করে নিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ছিল নানা আয়োজন।

চুয়াডাঙ্গা:
পহেলা বৈশাখে প্রভাতের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠলো পুরো জাতি। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে শুভ সম্ভাবনার নতুন দিন আনবার প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলো সংশয়বিনাশী চিত্ত। পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রভাতি অনুষ্ঠান। শুরু হলো বাঙালির বর্ষবরণ। যেমন ছায়ানট আর বাঙালির বর্ষবরণ এখন সমার্থক। তেমনি চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্যও থাকে কিছু আয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও মুকুল ফৌজ’র আয়োজন ছিল ভিন্ন, ঊষালগ্নে ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পর্ষদের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ভেসে এলো ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। তাদের গানের মধ্যদিয়েই যেন উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। শুভ দিনের প্রত্যাশায় মানুষের মনে গুনগুনিয়ে উঠলো ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’। স্বাগতম ১৪৩২, সুস্বাগত। প্রকৃতির নিয়মে আসে বৈশাখ। কিন্তু পহেলা বৈশাখ জাতির জীবনে আসে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয়ে উদ্যাপিত হলো এবারের নববর্ষ। পৃথিবীজুড়ে প্রতিটি বাঙালি গানে গানে আহ্বান জানায় সম্ভাবনাময় নতুন দিনকে। গানের পংক্তি উচ্চারণে তারা বর্জন করতে চাইছে জীবনে জড়িয়ে থাকা সকল পঙ্কিলতাকে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৮টায় শহরের চাঁদমারি মাঠে (ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) জাতীয় সংগীত ও বৈশাখ বরণের গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠান। আয়োজনে অংশ নেয় জেলার সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ, ব্যক্তি, পরিবার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরে চাঁদমারি মাঠ থেকে ডিসি অফিস, কোর্ট মোড়, হাসান চত্বর, কবরী রোড হয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মাঠ পর্যন্ত আয়োজিত হয় এক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সার্বজনীন শোভাযাত্রা। বাঙালি সংস্কৃতিকে রঙিন সাজে সজ্জিত করে অংশগ্রহণকারীরা বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যকে যেন ধারণ করে আনন্দ শোভাযাত্রায়। পরে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সামনের মুক্তমঞ্চ মাঠে ফিতা কেটে তিন দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক মেলার শুভ উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক ও অন্যান্য ছাত্র প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা জেলা রোভার স্কাউটস-এর সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী।

পৌর মুক্ত মঞ্চে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
বাংলা নববর্ষবরণ-১৪৩২ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিপরীতে পৌর মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। আনন্দ শোভাযাত্রা পরবর্তী ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সী আবু সাইফের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘অত্যন্ত ধন্যবাদ চুয়াডাঙ্গাবাসীকে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণ উপলক্ষে যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আপনারা দেখিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য। সবাই বলছেন, এর আগে কেউ এত বড় শোভাযাত্রা দেখেনি। আমি মনে করি, মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এই র‌্যালিটি সুন্দরভাবে উদ্যাপিত হবে এবং সবাই তা উপভোগ করবেন।’ এসময় উদ্বোধনকৃত তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় জেলা প্রশাসক সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

এসময় জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এই আনন্দ মিছিলে জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত ও বাঁধভাঙা অংশগ্রহণ, তা আমাকে অভিভূত করেছে। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো বাংলাদেশ একটি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। দেশের উন্নয়নে আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। আর বাংলাদেশ পুলিশ, তথা চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ, এই অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে পালন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী দলের মধ্য থেকে মূল্যায়নের মাধ্যমে ৩টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিতদের পুরস্কৃত করা হয়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীদের নাচ ও গানের মেতে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির নানা আয়োজন:
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আয়োজনে পহেলা বৈশাখে বৈশাখী উৎসব ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ চত্বরে আয়োজিত উৎসবে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ নববর্ষের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি কেবল একটি দিন উদ্যাপন নয়, বরং জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য, সৌহার্দ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিফলন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও বৈশাখী আনন্দ আয়োজন করেছি, যেখানে সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতির পাশাপাশি জনগণের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আবেগের সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সবসময় এই দেশের মানুষের পাশে আছে এবং থাকবে। এই আয়োজনকে সফল করে তোলার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। জেলা বিএনপির নেতা-কর্মী, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালোবাসায় আজকের দিনটি সত্যিকারের উৎসবে পরিণত হয়েছে।’

পরে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জেলা জাসাস-এর শিল্পীবৃন্দ। এরপরে সাহিত্য পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার শুরুতে ছিল বিশাল ৫৪ ফুট দীর্ঘ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এতে অংশ নেয় জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি, সদর থানা বিএনপি, জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, বিএডিসি শ্রমিক দল, রেলওয়ে শ্রমিক দল, মাক্রোকার শ্রমিকদলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।

শোভাযাত্রায় ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাটিকাটা কোদালের প্রতিকৃতি (ফিরোজ মাবুদের মাধ্যমে), গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি, ঐতিহাসিক লাঠিয়াল বাহিনী (কেদারগঞ্জ পাড়া), পালকি বাহক নবাব (খালিদ মাহমুদ মিল্টন), পোস্ট অফিসের রানার, রস বিক্রেতা, কামার, মাঝি, কুমার, নববধূর পালকি, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা, বাউল একতারা, বাংলার বধুর ঢেঁকি, জেলের জাল ফেলার অনবদ্য দৃশ্য প্রভৃতি। বৈচিত্র্যপূর্ণ সাজে সজ্জিত অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতি শোভাযাত্রায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
শোভাযাত্রাটি সাহিত্য পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে কোর্ট মোড়, ভি জে স্কুল, চৌরাস্তা মোড়, পৌরসভা মোড়, কবরী রোড, কলেজ রোড ঘুরে আবার সাহিত্য পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর শুরু হয় বৈশাখী উৎসবের মূল সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাউল সংগীত, লোকসংগীত, বৈশাখী গান পরিবেশনের পাশাপাশি আপ্যায়নের জন্য উপস্থিত সকলের মাঝে পরিবেশন করা হয় পান্তা ভাত, আলু ভর্তা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ এবং মহিলা দলের উদ্যোগে চটপটি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, সফিকুল ইসলাম পিটু, খালিদ মাহমুদ মিল্টন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপটন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফ উর নাহার রিনা, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, বাড়াদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সদস্যসচিব তোবারক হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝণ্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা পারভীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম.এ. তালহা, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন, সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাড. এম. শাহজাহান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মণ্টু, কৃষক দলের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাড. আ.স.ম. রউফ, ওলামা দলের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান, সদস্যসচিব মাওলানা আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মাহাবুল হক। এছাড়া জেলা ওলামা দলের সৌজন্যে সবার মাঝে লেবু গাছের চারা বিতরণ করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে এতে অংশগ্রহণকারী বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপি প্রথম স্থান, সদর থানা বিএনপি দ্বিতীয় স্থান এবং জেলা যুবদল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন।

চুয়াডাঙ্গা মুকুল ফৌজ’র বর্ষ বরণ:
‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ সুরে সুরে দীর্ঘ ২৯ বছরের ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মুকুল ফৌজ ও চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পর্ষদ। ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সকাল ছয়টা থেকে শিক্ষার্থীদের বৈশাখের আগমনী গান আর বাংলা নাচে মেতে ওঠে সকলে। পুরো আয়োজনজুড়ে মোহিত হয়ে ছিল আগত দর্শকশ্রোতা। সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুকুল ফৌজ’র প্রধান দরদী বোন রাশেদা হাসনুয়ারা বানু, আবৃত্তি পর্ষদের পরিচালক মনোয়ারা খুশি ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান।

চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের বাংলা নববর্ষবরণ:
পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ বেলা ১১টায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ কার্যালয়ে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ শীর্ষক আলোচনা সভা, স্বরচিত গল্প ও কবিতা পাঠ, নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি এবং সংগীত পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল মিষ্টিমুখ এবং শেষে প্রীতিভোজের ব্যবস্থা ছিল। পরিষদের সভাপতি ইকবাল আতাহার তাজের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন পরিষদের অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন এবং সহসভাপতি সরদার আলী হোসেন।
স্বরচিত লেখা পাঠ করেন ইদ্রিস মণ্ডল, আব্বাস উদ্দিন, লতিফা রহমান বনলতা, শওকত আলী বিশ্বাস, চিশতি এম.এ. হামিদ, মিম্মা সুলতানা মিতা, শহিদুল ইসলাম, গোলাম কবীর মুকুল, হেলাল হোসেন জোয়ার্দ্দার, খন্দকার রাবিয়া খাতুন রাবু, আবুল কালাম আজাদ এবং কাজল মাহমুদ। নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি করেন আকিব তৌফিক চৌধুরী ও নজির আহমেদ। সংগীত পরিবেশন করেন আদিল হোসেন, তুষার এবং আবুল কালাম আজাদ।

সরোজগঞ্জ:
চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে অন্যান্য স্থানের মতো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপন করা হয়েছে। বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আনন্দ ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রতিবছর এ দিনটি উদ্যাপন করা হয়। গতকাল সরোজগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, সরোজগঞ্জ তেঁতুল শেখ কলেজ, ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সরোজগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলমডাঙ্গা:
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ নানা আয়োজনে উদ্যাপন হয়েছে আলমডাঙ্গায়। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন ইউএনও শেখ মেহেদী ইসলাম। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ঘোড়ার গাড়ি, ঢাকঢোল ও বাঁশির শব্দে মুখর হয়ে শহরের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের স্টলে ইলিশ-পান্তা, আলুর চপ, কেক, খুরমা, বাতাসা, দা-বঁটি, হস্তশিল্পসহ নানা পণ্যের পসরা বসে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন কলাকেন্দ্র ও বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা। প্রথমদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেলা চলে। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিষ কুমার বসু, অধ্যক্ষ ড. মফিজুর রহমান, ডা. মাহমুদুল হক, শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, আইসিটি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সবেদ আলী, প্রেসক্লাব সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মণ্টু প্রমুখ।

দামুড়হুদা:
দামুড়হুদায় বৈশাখ বরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোভাযাত্রা উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক ঘুরে একই স্থানে শেষ হয়। ইউএনও তিথি মিত্র মেলার উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রায় পালকি, মহিষের গাড়ি, মুখোশ, ঢেঁকি, মাটির হাঁড়ি, বর-বউ সাজ, আদিবাসী প্রতিনিধি দলসহ নানা ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের শোভাযাত্রা বিশেষভাবে দৃষ্টি কাড়ে। শোভাযাত্রা শেষে পান্তা ভাত পরিবেশন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসফিকুর রহমান, অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন, কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নিপা, ওসি হুমায়ুন কবীর, প্রেসক্লাব সভাপতি শামসুজোহা পলাশসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

দর্শনা:
দর্শনায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নানা রঙে নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। সকাল ৮টা থেকে শহরজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন র‌্যালি ও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নববর্ষকে বরণ করে। দিনের কর্মসূচির সূচনা হয় সকাল সাড়ে ৭টায় ‘রাঙিয়ে এসো দিকদিক’ স্লোগানে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে শহিদ মিনারে বৈশাখী গানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এরপর সকাল ৮টায় দর্শনা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে বের হয় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি, যা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালিতে অংশ নেয় দর্শনা পৌরসভা, গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার, পূর্বরামনগর, পরাণপুর, শ্যামপুর ও শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।

এছাড়া অংশ নেন দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট, সদস্য নাহারুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা এনামুল হক শাহ মুকুল, সাবেক যুবদল সভাপতি ইকবাল হোসেনসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। মশিউর রহমান ও লৎফর রহমানের নেতৃত্বেও পৃথক র‌্যালি বের হয়। ওয়েভ ফাউন্ডেশনও আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সংগীতানুষ্ঠান। বিকেলে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে দর্শনা কলেজ মাঠের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। আবৃত্তিতে অংশ নেন কবিরুল হক লিপু, সানন্দিতা সাবি ও হাওয়া খাতুন। সংগীত পরিবেশন করেন বেতার শিল্পী মোস্তাক আহম্মেদ মনা, আনন্দধাম ও অনিবার্ণের শিল্পীরা। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি হাবিবুর রহমান বুলেট। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন দর্শনা সরকারি কলেজের ভিপি হারুন অর রশিদ, অনিবার্ণের অর্থ সম্পাদক কবিরুল হক লিপু, নির্বাহী সদস্য সাজ্জাদ হোসেন, আওয়াল হোসেন ও প্রভাষক মিল্টন কুমার সাহা।

উথলী:
জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংগঠন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। পহেলা বৈশাখের সকাল ১০টায় উথলী ডিগ্রি কলেজের আয়োজনে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উথলী বাসস্ট্যান্ড মোড় ও উথলী গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১১টায় উথলী ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তন হলরুমে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবিউল হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, জীবননগর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান, উথলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি অমিত খান এবং ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নাসিম হায়দার হিরক। আলোচনা সভায় কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভা শেষে শিক্ষার্থী ও অতিথিদের মিষ্টিমুখ করান কলেজ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে উথলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উথলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সেনেরহুদা জান্নাতুল খাদরা দাখিল মাদ্রাসা, সিংনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উথলী সূর্য তরুণ ক্লাব বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মেহেরপুর:
মেহেরপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও পান্তাভোজের মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ডিসি অফিসের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে জেলা কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, কৃষক-জেলের সাজে অংশ নেন নানা শ্রেণির মানুষ। সব ধর্মাবলম্বীর অংশগ্রহণে ছিল সম্প্রীতির চিত্র। উপস্থিত ছিলেন জেলা আহ্বায়ক জাবেদ মাসুদ মিলটন, সদস্যসচিব অ্যাড. কামরুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ মোহাম্মদসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠান শেষে পান্তাভোজের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ শেষ হয়। এদিকে, মেহেরপুর জেলা শিশু একাডেমির উদ্যোগে নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বেলা ১১টায় শহিদ শামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, ইউএনও খায়রুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাজী মূয়ীদুর রহমানসহ অন্যরা।

মুজিবনগর:
মুজিবনগরে বর্ষবরণে শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসবসহ নানা আয়োজন হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পলাশ মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে উপজেলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। অংশ নেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত, কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিবউদ্দীনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সংগঠনের সদস্যরা। পরে বিএনপির উদ্যোগে আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।

গাংনী:
নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্যাপন করা হয়েছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, বৈশাখের পহেলা সকালে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রীতম সাহা। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম সোনা, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ নিজ ব্যানারে অংশগ্রহণ করেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।

ঝিনাইদহ:
এক সময় গ্রামবাংলায় প্রচলিত নানা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সামনে রেখে এবার ঝিনাইদহে উদ্যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। পিচঢালা রাস্তায় গরুর গাড়ি, হাতে পলো ও জাল নিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য, আর শহরের উঁচু দালানের ফাঁকে ফাঁকে লাঠি খেলার পরিবেশ চোখে পড়েছে স্পষ্টভাবে। পহেলা বৈশাখের সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোভাযাত্রা নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন শহরে। সকাল ৮টায় শহিদ মিনার চত্বর থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হয় বৈশাখী শোভাযাত্রা। এতে বাদ্য-বাজনা ও গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা প্রতীকী উপকরণে অংশগ্রহণকারীরা উৎসবে মেতে ওঠেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয় পুরাতন ডিসি আদালত প্রাঙ্গণে। এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মনজুর মোর্শেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বকুল চন্দ্র কবিরাজ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষ এতে অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে একই স্থানে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অন্যদিকে, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে নববর্ষ উদ্যাপন করে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি। সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দলের সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদ লাঠি খেলার উদ্বোধন করেন। সাড়ে ১১টায় তারা বের করেন একটি বৈশাখী শোভাযাত্রা। এতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, প্রতীকী জেলে, কামার-কুমোর, বাউল-গায়েন রূপে সজ্জিত অংশগ্রহণকারীরা অংশ নেন। ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও সানাইয়ের সুরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে শহর। নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন। দলমত নির্বিশেষে প্রাণের উৎসবে মুখর ছিল শহর। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজন করে চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি, গ্রামীণ খেলাধুলা, পান্তা-ইলিশ উৎসবসহ বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান। জেলার অন্যান্য পাঁচ উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নেও নববর্ষ উদযাপনে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করা হয় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর উদ্যোগে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন

সবার কণ্ঠে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার

আপলোড টাইম : ০৮:০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

নতুন আমেজে, নতুন আঙ্গিকে আনন্দ-উল্লাস, উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে। বাংলা নতুন বছরকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবার কণ্ঠে নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার। এদিকে, বাংলা নববর্ষ-১৪৩২-কে বরণ করে নিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ছিল নানা আয়োজন।

চুয়াডাঙ্গা:
পহেলা বৈশাখে প্রভাতের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠলো পুরো জাতি। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে শুভ সম্ভাবনার নতুন দিন আনবার প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলো সংশয়বিনাশী চিত্ত। পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রভাতি অনুষ্ঠান। শুরু হলো বাঙালির বর্ষবরণ। যেমন ছায়ানট আর বাঙালির বর্ষবরণ এখন সমার্থক। তেমনি চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্যও থাকে কিছু আয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও মুকুল ফৌজ’র আয়োজন ছিল ভিন্ন, ঊষালগ্নে ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পর্ষদের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ভেসে এলো ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। তাদের গানের মধ্যদিয়েই যেন উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। শুভ দিনের প্রত্যাশায় মানুষের মনে গুনগুনিয়ে উঠলো ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’। স্বাগতম ১৪৩২, সুস্বাগত। প্রকৃতির নিয়মে আসে বৈশাখ। কিন্তু পহেলা বৈশাখ জাতির জীবনে আসে দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয়ে উদ্যাপিত হলো এবারের নববর্ষ। পৃথিবীজুড়ে প্রতিটি বাঙালি গানে গানে আহ্বান জানায় সম্ভাবনাময় নতুন দিনকে। গানের পংক্তি উচ্চারণে তারা বর্জন করতে চাইছে জীবনে জড়িয়ে থাকা সকল পঙ্কিলতাকে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৮টায় শহরের চাঁদমারি মাঠে (ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) জাতীয় সংগীত ও বৈশাখ বরণের গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠান। আয়োজনে অংশ নেয় জেলার সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ, ব্যক্তি, পরিবার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরে চাঁদমারি মাঠ থেকে ডিসি অফিস, কোর্ট মোড়, হাসান চত্বর, কবরী রোড হয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ মাঠ পর্যন্ত আয়োজিত হয় এক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সার্বজনীন শোভাযাত্রা। বাঙালি সংস্কৃতিকে রঙিন সাজে সজ্জিত করে অংশগ্রহণকারীরা বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যকে যেন ধারণ করে আনন্দ শোভাযাত্রায়। পরে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সামনের মুক্তমঞ্চ মাঠে ফিতা কেটে তিন দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক মেলার শুভ উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক ও অন্যান্য ছাত্র প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা জেলা রোভার স্কাউটস-এর সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী।

পৌর মুক্ত মঞ্চে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
বাংলা নববর্ষবরণ-১৪৩২ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিপরীতে পৌর মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। আনন্দ শোভাযাত্রা পরবর্তী ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সী আবু সাইফের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘অত্যন্ত ধন্যবাদ চুয়াডাঙ্গাবাসীকে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণ উপলক্ষে যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আপনারা দেখিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য। সবাই বলছেন, এর আগে কেউ এত বড় শোভাযাত্রা দেখেনি। আমি মনে করি, মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এই র‌্যালিটি সুন্দরভাবে উদ্যাপিত হবে এবং সবাই তা উপভোগ করবেন।’ এসময় উদ্বোধনকৃত তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় জেলা প্রশাসক সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

এসময় জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এই আনন্দ মিছিলে জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত ও বাঁধভাঙা অংশগ্রহণ, তা আমাকে অভিভূত করেছে। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো বাংলাদেশ একটি সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। দেশের উন্নয়নে আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। আর বাংলাদেশ পুলিশ, তথা চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ, এই অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে পালন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী দলের মধ্য থেকে মূল্যায়নের মাধ্যমে ৩টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিতদের পুরস্কৃত করা হয়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীদের নাচ ও গানের মেতে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির নানা আয়োজন:
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আয়োজনে পহেলা বৈশাখে বৈশাখী উৎসব ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ চত্বরে আয়োজিত উৎসবে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ নববর্ষের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি কেবল একটি দিন উদ্যাপন নয়, বরং জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য, সৌহার্দ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিফলন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও বৈশাখী আনন্দ আয়োজন করেছি, যেখানে সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতির পাশাপাশি জনগণের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আবেগের সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সবসময় এই দেশের মানুষের পাশে আছে এবং থাকবে। এই আয়োজনকে সফল করে তোলার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। জেলা বিএনপির নেতা-কর্মী, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালোবাসায় আজকের দিনটি সত্যিকারের উৎসবে পরিণত হয়েছে।’

পরে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জেলা জাসাস-এর শিল্পীবৃন্দ। এরপরে সাহিত্য পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার শুরুতে ছিল বিশাল ৫৪ ফুট দীর্ঘ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এতে অংশ নেয় জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি, সদর থানা বিএনপি, জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, বিএডিসি শ্রমিক দল, রেলওয়ে শ্রমিক দল, মাক্রোকার শ্রমিকদলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।

শোভাযাত্রায় ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাটিকাটা কোদালের প্রতিকৃতি (ফিরোজ মাবুদের মাধ্যমে), গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি, ঐতিহাসিক লাঠিয়াল বাহিনী (কেদারগঞ্জ পাড়া), পালকি বাহক নবাব (খালিদ মাহমুদ মিল্টন), পোস্ট অফিসের রানার, রস বিক্রেতা, কামার, মাঝি, কুমার, নববধূর পালকি, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা, বাউল একতারা, বাংলার বধুর ঢেঁকি, জেলের জাল ফেলার অনবদ্য দৃশ্য প্রভৃতি। বৈচিত্র্যপূর্ণ সাজে সজ্জিত অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতি শোভাযাত্রায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
শোভাযাত্রাটি সাহিত্য পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে কোর্ট মোড়, ভি জে স্কুল, চৌরাস্তা মোড়, পৌরসভা মোড়, কবরী রোড, কলেজ রোড ঘুরে আবার সাহিত্য পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর শুরু হয় বৈশাখী উৎসবের মূল সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাউল সংগীত, লোকসংগীত, বৈশাখী গান পরিবেশনের পাশাপাশি আপ্যায়নের জন্য উপস্থিত সকলের মাঝে পরিবেশন করা হয় পান্তা ভাত, আলু ভর্তা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ এবং মহিলা দলের উদ্যোগে চটপটি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, সফিকুল ইসলাম পিটু, খালিদ মাহমুদ মিল্টন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপটন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফ উর নাহার রিনা, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, বাড়াদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সদস্যসচিব তোবারক হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝণ্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা পারভীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম.এ. তালহা, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন, সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাড. এম. শাহজাহান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মণ্টু, কৃষক দলের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাড. আ.স.ম. রউফ, ওলামা দলের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান, সদস্যসচিব মাওলানা আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মাহাবুল হক। এছাড়া জেলা ওলামা দলের সৌজন্যে সবার মাঝে লেবু গাছের চারা বিতরণ করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে এতে অংশগ্রহণকারী বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপি প্রথম স্থান, সদর থানা বিএনপি দ্বিতীয় স্থান এবং জেলা যুবদল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন।

চুয়াডাঙ্গা মুকুল ফৌজ’র বর্ষ বরণ:
‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ সুরে সুরে দীর্ঘ ২৯ বছরের ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মুকুল ফৌজ ও চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পর্ষদ। ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সকাল ছয়টা থেকে শিক্ষার্থীদের বৈশাখের আগমনী গান আর বাংলা নাচে মেতে ওঠে সকলে। পুরো আয়োজনজুড়ে মোহিত হয়ে ছিল আগত দর্শকশ্রোতা। সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুকুল ফৌজ’র প্রধান দরদী বোন রাশেদা হাসনুয়ারা বানু, আবৃত্তি পর্ষদের পরিচালক মনোয়ারা খুশি ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান।

চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের বাংলা নববর্ষবরণ:
পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ বেলা ১১টায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ কার্যালয়ে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ শীর্ষক আলোচনা সভা, স্বরচিত গল্প ও কবিতা পাঠ, নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি এবং সংগীত পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল মিষ্টিমুখ এবং শেষে প্রীতিভোজের ব্যবস্থা ছিল। পরিষদের সভাপতি ইকবাল আতাহার তাজের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন পরিষদের অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন এবং সহসভাপতি সরদার আলী হোসেন।
স্বরচিত লেখা পাঠ করেন ইদ্রিস মণ্ডল, আব্বাস উদ্দিন, লতিফা রহমান বনলতা, শওকত আলী বিশ্বাস, চিশতি এম.এ. হামিদ, মিম্মা সুলতানা মিতা, শহিদুল ইসলাম, গোলাম কবীর মুকুল, হেলাল হোসেন জোয়ার্দ্দার, খন্দকার রাবিয়া খাতুন রাবু, আবুল কালাম আজাদ এবং কাজল মাহমুদ। নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি করেন আকিব তৌফিক চৌধুরী ও নজির আহমেদ। সংগীত পরিবেশন করেন আদিল হোসেন, তুষার এবং আবুল কালাম আজাদ।

সরোজগঞ্জ:
চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে অন্যান্য স্থানের মতো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপন করা হয়েছে। বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আনন্দ ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রতিবছর এ দিনটি উদ্যাপন করা হয়। গতকাল সরোজগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, সরোজগঞ্জ তেঁতুল শেখ কলেজ, ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সরোজগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলমডাঙ্গা:
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ নানা আয়োজনে উদ্যাপন হয়েছে আলমডাঙ্গায়। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন ইউএনও শেখ মেহেদী ইসলাম। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ঘোড়ার গাড়ি, ঢাকঢোল ও বাঁশির শব্দে মুখর হয়ে শহরের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের স্টলে ইলিশ-পান্তা, আলুর চপ, কেক, খুরমা, বাতাসা, দা-বঁটি, হস্তশিল্পসহ নানা পণ্যের পসরা বসে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন কলাকেন্দ্র ও বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা। প্রথমদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেলা চলে। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিষ কুমার বসু, অধ্যক্ষ ড. মফিজুর রহমান, ডা. মাহমুদুল হক, শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, আইসিটি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সবেদ আলী, প্রেসক্লাব সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মণ্টু প্রমুখ।

দামুড়হুদা:
দামুড়হুদায় বৈশাখ বরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোভাযাত্রা উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক ঘুরে একই স্থানে শেষ হয়। ইউএনও তিথি মিত্র মেলার উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রায় পালকি, মহিষের গাড়ি, মুখোশ, ঢেঁকি, মাটির হাঁড়ি, বর-বউ সাজ, আদিবাসী প্রতিনিধি দলসহ নানা ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের শোভাযাত্রা বিশেষভাবে দৃষ্টি কাড়ে। শোভাযাত্রা শেষে পান্তা ভাত পরিবেশন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসফিকুর রহমান, অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন, কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নিপা, ওসি হুমায়ুন কবীর, প্রেসক্লাব সভাপতি শামসুজোহা পলাশসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

দর্শনা:
দর্শনায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নানা রঙে নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। সকাল ৮টা থেকে শহরজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন র‌্যালি ও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নববর্ষকে বরণ করে। দিনের কর্মসূচির সূচনা হয় সকাল সাড়ে ৭টায় ‘রাঙিয়ে এসো দিকদিক’ স্লোগানে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে শহিদ মিনারে বৈশাখী গানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এরপর সকাল ৮টায় দর্শনা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে বের হয় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি, যা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালিতে অংশ নেয় দর্শনা পৌরসভা, গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার, পূর্বরামনগর, পরাণপুর, শ্যামপুর ও শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।

এছাড়া অংশ নেন দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট, সদস্য নাহারুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা এনামুল হক শাহ মুকুল, সাবেক যুবদল সভাপতি ইকবাল হোসেনসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। মশিউর রহমান ও লৎফর রহমানের নেতৃত্বেও পৃথক র‌্যালি বের হয়। ওয়েভ ফাউন্ডেশনও আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সংগীতানুষ্ঠান। বিকেলে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে দর্শনা কলেজ মাঠের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। আবৃত্তিতে অংশ নেন কবিরুল হক লিপু, সানন্দিতা সাবি ও হাওয়া খাতুন। সংগীত পরিবেশন করেন বেতার শিল্পী মোস্তাক আহম্মেদ মনা, আনন্দধাম ও অনিবার্ণের শিল্পীরা। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি হাবিবুর রহমান বুলেট। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন দর্শনা সরকারি কলেজের ভিপি হারুন অর রশিদ, অনিবার্ণের অর্থ সম্পাদক কবিরুল হক লিপু, নির্বাহী সদস্য সাজ্জাদ হোসেন, আওয়াল হোসেন ও প্রভাষক মিল্টন কুমার সাহা।

উথলী:
জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংগঠন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। পহেলা বৈশাখের সকাল ১০টায় উথলী ডিগ্রি কলেজের আয়োজনে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উথলী বাসস্ট্যান্ড মোড় ও উথলী গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১১টায় উথলী ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তন হলরুমে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবিউল হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, জীবননগর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান, উথলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি অমিত খান এবং ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নাসিম হায়দার হিরক। আলোচনা সভায় কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভা শেষে শিক্ষার্থী ও অতিথিদের মিষ্টিমুখ করান কলেজ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে উথলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উথলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সেনেরহুদা জান্নাতুল খাদরা দাখিল মাদ্রাসা, সিংনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উথলী সূর্য তরুণ ক্লাব বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মেহেরপুর:
মেহেরপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও পান্তাভোজের মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ডিসি অফিসের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে জেলা কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, কৃষক-জেলের সাজে অংশ নেন নানা শ্রেণির মানুষ। সব ধর্মাবলম্বীর অংশগ্রহণে ছিল সম্প্রীতির চিত্র। উপস্থিত ছিলেন জেলা আহ্বায়ক জাবেদ মাসুদ মিলটন, সদস্যসচিব অ্যাড. কামরুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ মোহাম্মদসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠান শেষে পান্তাভোজের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ শেষ হয়। এদিকে, মেহেরপুর জেলা শিশু একাডেমির উদ্যোগে নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বেলা ১১টায় শহিদ শামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, ইউএনও খায়রুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাজী মূয়ীদুর রহমানসহ অন্যরা।

মুজিবনগর:
মুজিবনগরে বর্ষবরণে শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসবসহ নানা আয়োজন হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পলাশ মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে উপজেলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। অংশ নেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত, কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিবউদ্দীনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সংগঠনের সদস্যরা। পরে বিএনপির উদ্যোগে আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।

গাংনী:
নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্যাপন করা হয়েছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, বৈশাখের পহেলা সকালে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রীতম সাহা। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম সোনা, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ নিজ ব্যানারে অংশগ্রহণ করেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।

ঝিনাইদহ:
এক সময় গ্রামবাংলায় প্রচলিত নানা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সামনে রেখে এবার ঝিনাইদহে উদ্যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। পিচঢালা রাস্তায় গরুর গাড়ি, হাতে পলো ও জাল নিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য, আর শহরের উঁচু দালানের ফাঁকে ফাঁকে লাঠি খেলার পরিবেশ চোখে পড়েছে স্পষ্টভাবে। পহেলা বৈশাখের সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোভাযাত্রা নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন শহরে। সকাল ৮টায় শহিদ মিনার চত্বর থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হয় বৈশাখী শোভাযাত্রা। এতে বাদ্য-বাজনা ও গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা প্রতীকী উপকরণে অংশগ্রহণকারীরা উৎসবে মেতে ওঠেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয় পুরাতন ডিসি আদালত প্রাঙ্গণে। এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মনজুর মোর্শেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বকুল চন্দ্র কবিরাজ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষ এতে অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে একই স্থানে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অন্যদিকে, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে নববর্ষ উদ্যাপন করে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি। সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দলের সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদ লাঠি খেলার উদ্বোধন করেন। সাড়ে ১১টায় তারা বের করেন একটি বৈশাখী শোভাযাত্রা। এতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, প্রতীকী জেলে, কামার-কুমোর, বাউল-গায়েন রূপে সজ্জিত অংশগ্রহণকারীরা অংশ নেন। ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও সানাইয়ের সুরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে শহর। নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন। দলমত নির্বিশেষে প্রাণের উৎসবে মুখর ছিল শহর। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজন করে চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি, গ্রামীণ খেলাধুলা, পান্তা-ইলিশ উৎসবসহ বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান। জেলার অন্যান্য পাঁচ উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নেও নববর্ষ উদযাপনে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করা হয় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর উদ্যোগে।