মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এসএসসির প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
চুয়াডাঙ্গায় অনুপস্থিত ১৮৫ জন পরীক্ষার্থী, কেন্দ্রে কড়া নিরাপত্তা
- আপলোড টাইম : ০৮:২৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৮ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের এসএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা। গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে একযোগে মাধ্যমিক বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের এসএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা। গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে একযোগে মাধ্যমিক বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। জেলার কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা বা বহিষ্কারের খবর পাওয়া যায়নি। তবে জেলার চার উপজেলায় মোট ১৮৫ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল বলে জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা গেছে। তথ্য মতে, প্রথম দিনের পরীক্ষায় জেলার মোট ১১ হাজার ১৯৩ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে ১১ হাজার ৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। বাকি ১৮৫ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এর মধ্যে এসএসসি (সাধারণ) পরীক্ষায় মোট ৮ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৬৪৬ জন। অনুপস্থিত ১৩৩ জন। এসএসসি দাখিল (ভোকেশনাল) মোট ১ হাজার ৪২৯ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে উপস্থিত ছিল ১ হাজার ৪১৪ জন। অনুপস্থিত ১৫ জন। দাখিল পরীক্ষায় ৯৮৫ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিল ৯৪৮ জন। অনুপস্থিত ৩৭ জন।
এসএসসি/সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য জেলায় ৪টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা গ্রহণের সাথে সরাসরি জড়িত নয় এমন কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারছেন না। পরীক্ষার হলে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩২ থেকে ৪০ জনের জন্য ২ জন কক্ষ পরিদর্শক নিয়োজিত থাকছেন। প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে সিসি ক্যামেরা এবং প্রতিটি কক্ষে দেওয়াল ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ৬ ফুট বেঞ্চে ২ জন করে জেড আকারে পরীক্ষার্থী বসছে।
সরেজমিনে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো দেখা যায়, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিন থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ছিল কড়া নিরাপত্তা। যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা, অনিয়ম এড়াতে এবং প্রশ্নফাঁস রোধে সার্বক্ষণিক চারটি ভিজিলেন্স টিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট ও পুলিশ সদস্যরা মাঠে ছিলেন। সকালে চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। তিনি কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি কক্ষ পর্যবেক্ষণ করেন এবং সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রসঙ্গ কথায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও অত্যন্ত মানসম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষার্র্থীরা সাবলিলভাবে তাদের প্রশ্নের উত্তর লিখতে পেরেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ সকল প্রকার অনিয়ম রোধে সার্বক্ষণিক কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সুষ্ঠু সুন্দর নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছে। এডিসি, ইউএনওরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া উপজেলার ট্যাগ অফিসাররা দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা আশা করছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাগুলো আমরা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে সুষ্ঠু এবং নকলমুক্ত পরিবেশে চুয়াডাঙ্গার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সম্পন্ন করব।
মেহেরপুর:
যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সারা দেশের ন্যায় মেহেরপুর জেলাতে একযোগে পরীক্ষা শুরু হয়। জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার ৩টি উপজেলা থেকে এবার ৮ হাজার ৬৭৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় রয়েছেন ৬ হাজার ৯১৪, এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ১ হাজার ৫৬ এবং দাখিল পরীক্ষায় ৭০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এসএসসি পরীক্ষায় মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৪৯২ জন। গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩ হাজার ৫১০ জন এবং মুজিবনগর এর ৯১২ জন রয়েছে। এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মেহেরপুর সদর উপজেলা ৩০২, গাংনী উপজেলা ৪৮৪ এবং মুজিবনগর উপজেলায় ২৭০ জন রয়েছে।
এদিকে দাখিল পরীক্ষায় মেহেরপুর সদর ৪২৩ জন এবং গাংনী উপজেলায় ২৮০ জন রয়েছে। এসএসসি পরীক্ষায় মেহেরপুর জেলায় মোট ১৩ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৫৯, মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ৭৬৭ এবং আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৬৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
গাংনী উপজেলায় ৮টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫১০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১৭, গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ৬৮৩, বামুন্দি নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রীয় ৪৫৮ জন।যুগিরঘোপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৪৫, সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৮৮ , বামুন্দী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৮৪, বেতবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৮৯ এবং রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৪৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।
অপর দিকে মুজিবনগর উপজেলায় ২টি কেন্দ্রে ৯১২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে মুজিবনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬০৪ এবং দারিয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩০৮ জন রয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় মেহেরপুর জেলার ৩ কেন্দ্রে মোট ১ হাজার ১৫৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে মেহেরপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩০২ জন। এদিকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো খায়রুল ইসলাম মেহেরপুরের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহেও গতকাল শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের এসএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা। এদিকে জেলায় চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করেছে ছাত্রশিবির। পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রগুলোর নির্ধারিত দূরত্বে পরীক্ষার্থীদের মাঝে কলম, স্কেল, স্বচ্ছ ব্যাগ ও ফুল বিতরণ করেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া আগত অভিভাবকদের মাঝে খাবার পানি, ফার্স্ট এইড সেবা ও বিশ্রামের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে শিবির। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার সদর উপজেলার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ১২টি কেন্দ্রে এ হেল্প ডেস্ক চালু করেছে ঝিনাইদহ শহর শাখা ছাত্রশিবির।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর পাশে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে অস্থায়ী হেল্প ডেস্ক বসায় শহর শাখা ছাত্রশিবির। হেল্প ডেস্ক থেকে আগত পরীক্ষার্থীদের মাঝে কলম, স্কেল, স্বচ্ছ ব্যাগ ও ফুল বিতরণ করা হয়। এসময় পরীক্ষার্থীরাও শিবিরের হেল্প ডেস্ক থেকে সহায়তা নেন। এসব হেল্প ডেস্ক থেকে শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস, রুম নং সহ এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন শিবিরের নেতাকর্মীরা।
ঝিনাইদহ শহর শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মেহেদী হাসান রাজু বলেন, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুবিধার্থে ঝিনাইদহের ১২টি কেন্দ্রে আমরা হেল্প ডেস্ক চালু করেছি।