ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার ভারতের; সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষণ নয়
- আপলোড টাইম : ০৮:১৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
- / ৩৫ বার পড়া হয়েছে
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের স্বাভাবিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। বলা চলে, এর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে। যদিও ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লির সাথে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু দিল্লি নিজের মিত্র শেখ হাসিনার পতন এখনো যে মেনে নিতে পারছে না। তার নমুনা ভারতের আচরণে স্পষ্ট। এর সর্বশেষ নজরি হলো- ভারতের বাংলাদেশের সাথে করা ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি একতরফাভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত। গণমাধ্যমের খবর, ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেছে দিল্লি। ফলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে স্থলপথে বাংলাদেশের পণ্য নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার সুযোগ আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও দেশটি বলছে, এ পদক্ষেপের কারণে নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভারতের এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক চিন্তাপ্রসূত। ভারতের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের অভিমত, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়ম না মেনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুব দুঃখজনক। তিনি বলেন, এখানে বাংলাদেশের লাভের কোনো প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের সাথে এ সুবিধার আওতায় নেপাল ও ভুটানের পণ্য পাঠানো দুটোই কম হতো। এখন ভারত একতরফাভাবে এ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়া। এতে বোঝা যায়, এটি রাজনৈতিক বিবেচনায় বাতিল করা হয়েছে। আবার বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে ভারত বার্তা দিতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উপযোগী নয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হলেও এ নিয়ে একটি সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে একটি সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এখন সিভিল অ্যাভিয়েশন ও বাংলাদেশ বিমানসহ অন্যান্য যেসব ক্যারিয়ার রয়েছে, সবাই মিলে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে- এ ক্ষেত্রে মালদ্বীপ, দুবাই, কলম্বো একটি নতুন হাব হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিলেন, সম্প্রতি ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ইতিবাচক মোড় নেবে। কিন্তু গত মঙ্গলবার ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা একতরফাভাবে প্রত্যাহার করায় ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক যে সহসা স্বাভাবিক হচ্ছে না তা সহজে অনুমান করা যায়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের উচিত ঢাকার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক দ্রুত পুনঃপ্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া। সেই সাথে দিল্লিকে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। বৃহৎ প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের বিদেশনীতিতে প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসতে বাধ্য। কিন্তু দিল্লির শাসকশ্রেণীর যে মনোজাগতিক গঠন; তাতে এই শুভ চিন্তা আশা করা দুরাশা বৈ কিছু নয়।