ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আলমডাঙ্গায় গ্রেপ্তার পিয়ালের পরিবারের সংবাদ সম্মেলনে নির্দোষ দাবি

ছাত্রদলের কোনো পদে নেই জানালো জেলা ছাত্রদল

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:৫২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ২৭ মামলার আসামি পিয়াল মাহমুদ ওরফে সাদ্দামকে (৩২) নির্দোষ দাবি করেছে তার পরিবার। পিয়ালের পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই দাবি করা হয়। এছাড়া পিয়াল মাহমুদ ওরফে সাদ্দাম ছাত্রদলের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, কলেজ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কোনো পর্যায়েই কোনো পদে নেই বলে জানিয়েছে জেলা ছাত্রদল।
পিয়াল মাহমুদের মা ফজিলা খাতুনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিয়ালের মেজ বোন রেশমা খাতুন ও স্ত্রী আসমা খাতুন। এসময় পিয়ালের দুই শিশুসন্তান দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রোদেলা খাতুন (৮) ও দুই বছর বয়সী আব্রাহাম এবং বড় বোন লিপি খাতুন ও ছোট বোন জেসমিন খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
পিয়ালের স্বজনদের দাবি, ২৭টি মামলার মধ্যে ২৪টিই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ শাসনামলের। ছাত্রদলের রাজনীতি করায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আওয়ামী লীগ এসব মামলা করেছিল। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হক ৮ এপ্রিল একই দিনে সাজানো ঘটনায় নতুন করে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। স্বজনদের দাবি, ‘মিথ্যা ও সাজানো’ মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা পিয়াল মাহমুদকে অবিলম্বে জামিনে মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে আনা হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। এ জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পিয়ালের মা ফজিলা খাতুন বলেন, ৭ এপ্রিল রাতে পিয়াল আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের হাড়গাড়ী বিলে মাছ চাষের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান, এসআই সামছুল হকসহ পুলিশের অন্য সদস্যরা পিয়ালকে বিল থেকে ধরে নিয়ে আসেন। পরে তারা পিয়ালের চোখ ও মুখ বেঁধে আলমডাঙ্গা থানার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ান। স্বজনদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে থানা কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বিলের অন্য লোকজনের কাছ থেকে ফজিলা খাতুন জানতে পারেন, তার ছেলেকে পুলিশ যখন ধরে আনে, তখন তার কাছে মাছ বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, গলায় রুপার চেইন ও হাতে একটি ব্রেসলেট ছিল।
ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় আলমডাঙ্গা থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ পিয়ালের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয় না এবং সকাল সাড়ে ১০টায় পিয়ালকে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় আলমডাঙ্গা থানা থেকে আদালতে নেয়া হয়। যার প্রমাণ পিয়ালের শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন বিদ্যমান। ফজিলা খাতুন বলেন, ‘বুধবার স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জানতে পেরেছি যে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হক পরস্পর যোগসাজশে পরিত্যক্ত পাইপগান নিজেরা সংগ্রহ করে মামলা দিয়েছেন। যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে শত্রুপক্ষের লোকজন শায়েস্তা করতে পুলিশকে হাত করে পিয়ালকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হকের বিচার করতে হবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ফজিলা খাতুন ২৩ বছর আগে তার স্বামী খুন হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, তার স্বামী আবদুল মজিদকে গ্রাম্য দলাদলির কারণে ২০০২ সালের ২২ আগস্ট কমিউনিস্ট পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী নৃশংসভাবে খুন করে। ওই খুনের ঘটনার পর গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিলে তারা প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জমি দান করেন। এখন সেখানে পুলিশ ক্যাম্প অবস্থিত। যাদের কারণে তার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা খুন করেছিল, তারাই পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছে বলে দাবি করেন পিয়ালের মা।
এদিকে, আলমডাঙ্গার আলোচিত মো. পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম ছাত্রদলের কোনো পদে নেই বলে জানিয়ে গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. শাহাজান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অতি সম্প্রতি কোনো কোনো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মো. পিয়াল মাহমুদ সাদ্দামকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে অবগত করা যাচ্ছে যে, মো. পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম, পিতা. মরহুম আব্দুল মজিদ, গ্রাম. দুর্লভপুর, উপজেলা: আলমডাঙ্গা, জেলা: চুয়াডাঙ্গা, ছাত্রদলের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, কলেজ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কোনো পর্যায়েই কোনো পদে নেই। সুতরাং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক পরিচয় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অতএব, তার কোনো দায় ছাত্রদল নিবে না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

আলমডাঙ্গায় গ্রেপ্তার পিয়ালের পরিবারের সংবাদ সম্মেলনে নির্দোষ দাবি

ছাত্রদলের কোনো পদে নেই জানালো জেলা ছাত্রদল

আপলোড টাইম : ১০:৫২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ২৭ মামলার আসামি পিয়াল মাহমুদ ওরফে সাদ্দামকে (৩২) নির্দোষ দাবি করেছে তার পরিবার। পিয়ালের পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই দাবি করা হয়। এছাড়া পিয়াল মাহমুদ ওরফে সাদ্দাম ছাত্রদলের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, কলেজ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কোনো পর্যায়েই কোনো পদে নেই বলে জানিয়েছে জেলা ছাত্রদল।
পিয়াল মাহমুদের মা ফজিলা খাতুনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিয়ালের মেজ বোন রেশমা খাতুন ও স্ত্রী আসমা খাতুন। এসময় পিয়ালের দুই শিশুসন্তান দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রোদেলা খাতুন (৮) ও দুই বছর বয়সী আব্রাহাম এবং বড় বোন লিপি খাতুন ও ছোট বোন জেসমিন খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
পিয়ালের স্বজনদের দাবি, ২৭টি মামলার মধ্যে ২৪টিই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ শাসনামলের। ছাত্রদলের রাজনীতি করায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আওয়ামী লীগ এসব মামলা করেছিল। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হক ৮ এপ্রিল একই দিনে সাজানো ঘটনায় নতুন করে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। স্বজনদের দাবি, ‘মিথ্যা ও সাজানো’ মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা পিয়াল মাহমুদকে অবিলম্বে জামিনে মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে আনা হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। এ জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পিয়ালের মা ফজিলা খাতুন বলেন, ৭ এপ্রিল রাতে পিয়াল আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের হাড়গাড়ী বিলে মাছ চাষের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান, এসআই সামছুল হকসহ পুলিশের অন্য সদস্যরা পিয়ালকে বিল থেকে ধরে নিয়ে আসেন। পরে তারা পিয়ালের চোখ ও মুখ বেঁধে আলমডাঙ্গা থানার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ান। স্বজনদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে থানা কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বিলের অন্য লোকজনের কাছ থেকে ফজিলা খাতুন জানতে পারেন, তার ছেলেকে পুলিশ যখন ধরে আনে, তখন তার কাছে মাছ বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, গলায় রুপার চেইন ও হাতে একটি ব্রেসলেট ছিল।
ফজিলা খাতুনের অভিযোগ, ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় আলমডাঙ্গা থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ পিয়ালের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয় না এবং সকাল সাড়ে ১০টায় পিয়ালকে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় আলমডাঙ্গা থানা থেকে আদালতে নেয়া হয়। যার প্রমাণ পিয়ালের শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন বিদ্যমান। ফজিলা খাতুন বলেন, ‘বুধবার স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জানতে পেরেছি যে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হক পরস্পর যোগসাজশে পরিত্যক্ত পাইপগান নিজেরা সংগ্রহ করে মামলা দিয়েছেন। যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে শত্রুপক্ষের লোকজন শায়েস্তা করতে পুলিশকে হাত করে পিয়ালকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ওসি মাসুদুর রহমান ও এসআই সামছুল হকের বিচার করতে হবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ফজিলা খাতুন ২৩ বছর আগে তার স্বামী খুন হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, তার স্বামী আবদুল মজিদকে গ্রাম্য দলাদলির কারণে ২০০২ সালের ২২ আগস্ট কমিউনিস্ট পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী নৃশংসভাবে খুন করে। ওই খুনের ঘটনার পর গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিলে তারা প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জমি দান করেন। এখন সেখানে পুলিশ ক্যাম্প অবস্থিত। যাদের কারণে তার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা খুন করেছিল, তারাই পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছে বলে দাবি করেন পিয়ালের মা।
এদিকে, আলমডাঙ্গার আলোচিত মো. পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম ছাত্রদলের কোনো পদে নেই বলে জানিয়ে গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. শাহাজান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অতি সম্প্রতি কোনো কোনো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মো. পিয়াল মাহমুদ সাদ্দামকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে অবগত করা যাচ্ছে যে, মো. পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম, পিতা. মরহুম আব্দুল মজিদ, গ্রাম. দুর্লভপুর, উপজেলা: আলমডাঙ্গা, জেলা: চুয়াডাঙ্গা, ছাত্রদলের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, কলেজ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কোনো পর্যায়েই কোনো পদে নেই। সুতরাং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক পরিচয় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অতএব, তার কোনো দায় ছাত্রদল নিবে না।’