ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

গাংনীতে দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ে তালা!

গাংনী অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৬:১৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রুয়েরকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের দ্বন্দ ও তাদের বদলির দাবিতে বিদ্যালয়টিতে তালা ঝুলিয়েছেন গ্রামবাসী। গত সোমবার দিবাগত রাতে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে গতকাল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। শিক্ষক বদলি না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেন না ও তালা খুলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের প্রধান শিক্ষক ও দুজন শিক্ষিকা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষিকা আশুরা খাতুনের পারিবারিক দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এরই জের ধরে গত বছর ৪ ডিসেম্বর দুই জনের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি গ্রামবাসী উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানানোর পর তৎকালীন শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন বিদ্যালয়ে গিয়ে স্থানীয়দের ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শুনেন এবং দুই শিক্ষককে বদলি করবেন মর্মে অঙ্গীকার করলে পরিস্থিতি স্বাভিাবিক হয়।
এদিকে, প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামকে দুই মাসের জন্য কুঞ্জনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেশনে প্রেরণ করা হলেও শিক্ষিকা আশুরা খাতুনকে বদলি করা হয়নি। এ নিয়েও গ্রামবাসীর মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। গত ৭ এপ্রিল প্রধান শিক্ষকের প্রেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলাউদ্দীন প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামকে তার পূর্বের কর্মস্থল রুয়েরকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আদেশ দেন। এরপর আবারও শুরু হয় দুই শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য।
এরই জের ধরে গত সোমবার রাতে প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম এশার নামাজ শেষে বাড়ি আসার পথে শিক্ষক আশুরা খাতুনের স্বামীসহ আরও ৭-৮ জন তার পথরোধ করে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে আহত আমিরুলকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। সেই সাথে গ্রামের লোকজন সকল শিক্ষকের বদলির দাবি তুলে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামীমা খাতুন বলেন, ‘সকালে স্কুলে এসে দেখি স্যার ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে কারা কেউ জানে না। তাই আমিও দুপুর পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে দেখছি কোনো সমাধান না হওয়ায় আমাদের আজ ক্লাস হয়নি।’
গ্রামের ফজলুল হক, মিনারুল ও গফুরসহ অনেকেই জানান, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলোহ সৃষ্টি হয়েছে। এতে লেখাপড়া হয় না। বাধ্য হয়ে অনেকেই তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠান না। বিদ্যালয়টিতে এখন হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী আছে। এসব শিক্ষার্থীরাও আর বিদ্যালয়ে আসবে না। তাছাড়া শিক্ষকদের বদলী না হওয়া পর্যন্ত তালা খুলে দেয়া হবে না।
রুয়ের গ্রামের ফারুক হোসেন নামের এক অভিভাবক জানান, আমার মেয়েকে ভালো বিদ্যালয়ে ভর্তি করা বা পরাশুনা করানোর মত সামর্থ্য নেই, থাকলে এই বিদ্যালয়ে রাখতাম না কারণ প্রতিদিনই শিক্ষকদের ঝামিলা হয় গালাগালি হয়। আর এই শিক্ষকদের আচরণ মাঠের রাখালদের চেয়েও খারাপ। আমার শিশু মেয়ে শিক্ষা নিতে এসে গালাগালি শিখে গিয়ে আমাদের শুনায় যে এ ধরনের কথা বলে শিক্ষকদের ঝামেলা হয়। তাহলে আমরা কোন স্কুলে পাঠাচ্ছি আমাদের সন্তানদের। আর তাদের ভবিষ্যত কি।
গাংনী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলাউদ্দীন জানান, বিদ্যালরেয় তালা ঝোলানোর খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়ে যান। শিক্ষক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তালা খোলার চেষ্টা করছেন। তবে শিক্ষক বদলি না হওয়া পর্যন্ত তালা খুলতে চাচ্ছেন না গ্রামবাসী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

গাংনীতে দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ে তালা!

আপলোড টাইম : ০৬:১৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রুয়েরকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের দ্বন্দ ও তাদের বদলির দাবিতে বিদ্যালয়টিতে তালা ঝুলিয়েছেন গ্রামবাসী। গত সোমবার দিবাগত রাতে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে গতকাল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। শিক্ষক বদলি না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেন না ও তালা খুলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের প্রধান শিক্ষক ও দুজন শিক্ষিকা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষিকা আশুরা খাতুনের পারিবারিক দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এরই জের ধরে গত বছর ৪ ডিসেম্বর দুই জনের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি গ্রামবাসী উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানানোর পর তৎকালীন শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন বিদ্যালয়ে গিয়ে স্থানীয়দের ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শুনেন এবং দুই শিক্ষককে বদলি করবেন মর্মে অঙ্গীকার করলে পরিস্থিতি স্বাভিাবিক হয়।
এদিকে, প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামকে দুই মাসের জন্য কুঞ্জনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেশনে প্রেরণ করা হলেও শিক্ষিকা আশুরা খাতুনকে বদলি করা হয়নি। এ নিয়েও গ্রামবাসীর মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। গত ৭ এপ্রিল প্রধান শিক্ষকের প্রেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলাউদ্দীন প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামকে তার পূর্বের কর্মস্থল রুয়েরকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আদেশ দেন। এরপর আবারও শুরু হয় দুই শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য।
এরই জের ধরে গত সোমবার রাতে প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম এশার নামাজ শেষে বাড়ি আসার পথে শিক্ষক আশুরা খাতুনের স্বামীসহ আরও ৭-৮ জন তার পথরোধ করে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে আহত আমিরুলকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। সেই সাথে গ্রামের লোকজন সকল শিক্ষকের বদলির দাবি তুলে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামীমা খাতুন বলেন, ‘সকালে স্কুলে এসে দেখি স্যার ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে কারা কেউ জানে না। তাই আমিও দুপুর পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে দেখছি কোনো সমাধান না হওয়ায় আমাদের আজ ক্লাস হয়নি।’
গ্রামের ফজলুল হক, মিনারুল ও গফুরসহ অনেকেই জানান, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলোহ সৃষ্টি হয়েছে। এতে লেখাপড়া হয় না। বাধ্য হয়ে অনেকেই তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠান না। বিদ্যালয়টিতে এখন হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী আছে। এসব শিক্ষার্থীরাও আর বিদ্যালয়ে আসবে না। তাছাড়া শিক্ষকদের বদলী না হওয়া পর্যন্ত তালা খুলে দেয়া হবে না।
রুয়ের গ্রামের ফারুক হোসেন নামের এক অভিভাবক জানান, আমার মেয়েকে ভালো বিদ্যালয়ে ভর্তি করা বা পরাশুনা করানোর মত সামর্থ্য নেই, থাকলে এই বিদ্যালয়ে রাখতাম না কারণ প্রতিদিনই শিক্ষকদের ঝামিলা হয় গালাগালি হয়। আর এই শিক্ষকদের আচরণ মাঠের রাখালদের চেয়েও খারাপ। আমার শিশু মেয়ে শিক্ষা নিতে এসে গালাগালি শিখে গিয়ে আমাদের শুনায় যে এ ধরনের কথা বলে শিক্ষকদের ঝামেলা হয়। তাহলে আমরা কোন স্কুলে পাঠাচ্ছি আমাদের সন্তানদের। আর তাদের ভবিষ্যত কি।
গাংনী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলাউদ্দীন জানান, বিদ্যালরেয় তালা ঝোলানোর খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়ে যান। শিক্ষক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তালা খোলার চেষ্টা করছেন। তবে শিক্ষক বদলি না হওয়া পর্যন্ত তালা খুলতে চাচ্ছেন না গ্রামবাসী।