ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

গাংনীতে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতির দুর্নীতির প্রতিবাদে স্থানীয়দের সংবাদ সম্মেলন

গাংনী অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া এগারপাড়া আলিম মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি একরামুল হক তাজুর দুর্নীতির প্রতিবাদে ও নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাদরাসা প্রাঙ্গণেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্থানীয়রা। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয়দের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সোহেল রানা। সংবাদ সম্মেলনে সোহেল রানা ছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা প্রভাষক কামরুজামান, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলিহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন, ষোলটাকা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সাপ্পের আলীসহ বিভিন্ন পযার্য়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়দের পক্ষে সোহেল রানা লিখিত বক্তব্যে বলেন, গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী মানিকদিয়া এগারপাড়া আলিম মাদরাসা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এলাকার অনেক মানুষ এখানে জমি দান ও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। তাদের মধ্যে মরহুম শওকত আলী মুন্সি, মরহুম খোদাবকস মিয়া, মরহুম মোজাম্মেল হক, মরহুম মোবারক হোসেন (ভোলাডাঙ্গা), মাওলানা নজরুল ইসলাম ও আবুবকর উল্লেখযোগ্য। কিন্তু মানিকদিয়া গ্রামের মরহুম মোজাম্মেল হকের ছেলে একরামুল হক তাজু বিগত সরকারের আমলে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে একটানা ১২ বছর যাবৎ সভাপতির দায়িত্বে থেকে মাদরাসাটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। গ্রামের অনেক মানুষের দান অনুদানে মাদরাসাটি তৈরি হলেও ২০০৯ সালে একরামুল হক তাজু নিজ ক্ষমতা বলে তার পিতা মরহম মোজাম্মেল হককে একক প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে দেখিয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে আজীবন একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাখার রেজ্যুলেশন অনুমোদন করে। উক্ত কমিটিতে দাতা সদস্য হিসেবে ১২ বছর যাবৎ তার সহোদর জাহিদুল হক সাজু আছে। আবার নতুন করে কমিটি গঠন করেছে সেখানে তার স্ত্রীকে সভাপতি করেছেন। তাহলে সভাপতি, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দাতা সদস্য একই পরিবার থেকে কমিটিতে বিদ্যমান ছিল। সভাপতি থাকাকালীণ সময়ে একরামুল হক তাজু ও তার স্ত্রী নারগিছ আরা মাদরাসার উন্নয়নের নামে মাদরাসার নিজ জমিতে পিতার নামে আলহাজ মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন স্থাপন করে।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, ইতিপূর্বে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে এলাকার মানুষের জনরোষের স্বীকার হয়। তখন মাদরাসার দক্ষিণ দিকে সরকারি একতলা ভবনের উপর নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে দোতলা ভবন তৈরি করে এবং উন্নয়নের কথা বলে নিজেকে আত্মরক্ষা করেন। পরবর্তীতে নৈশ প্রহরী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে ষাট লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে এলাকার মানুষের দাবী।
নৈশ প্রহরী আশরাফুল ইসলামরা দুই ভাই এর মধ্যে বড়। তার জন্ম তারিখ ১২/০৩/১৯৭৫ হলেও নৈশ প্রহরী চাকরি নেওয়ার জন্য নৌবাহিনীর ভূয়া সনদ ব্যবহার করে জন্ম তারিখ করেছে ০১/০১/১৯৮৫। তাতেও বয়স না মেলায় আবারও বয়স সংশোধন করে ০১/১২/১৯৮৫ দেখিয়ে চাকরি নিয়েছেন। অথচ তার ছোট ভাই আনিসুর রহমানের জন্ম সাল ০৩/০২/১৯৭৫। সব মিলিয়ে আশরাফুল ইসলামের বর্তমান বয়স ৪০ আর তার আপন ছোট ভাই আনিসুরের বয়স ৫০ বছর।
একরামুল হক তাজু আগে একজন আদম ব্যবসায়ী ছিলেন, পরবর্তীতে আইসক্রিম ফ্যাক্টরি দিয়ে শিল্পপতি হয়েছেন। একরামুল হক তাজু এবং তার স্ত্রী নারগিছ আরা বিগত সরকারের আমলে অর্থ পাচারের সাথে জড়িত ছিল। তার স্ত্রী নারগিছ আরা কানাডায় থাকে। গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক মাস যাবৎ একরামুল হক তাজু বিদেশে পলাতক অবস্থায় ছিলেন। মাদরাসায় তার এই সীমাহীন লাগাতার দূর্নীতির কারণে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তার পোষা কিছু সাঙ্গপাঙ্গ এলাকার প্রতিবাদী নিরীহ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে চাই। তাই স্থানীয়রা কমিটি বাতিল ও সকল দুর্নীতির তদন্ত করে প্রশাসনের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

গাংনীতে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতির দুর্নীতির প্রতিবাদে স্থানীয়দের সংবাদ সম্মেলন

আপলোড টাইম : ০৮:১৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া এগারপাড়া আলিম মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি একরামুল হক তাজুর দুর্নীতির প্রতিবাদে ও নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাদরাসা প্রাঙ্গণেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্থানীয়রা। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয়দের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সোহেল রানা। সংবাদ সম্মেলনে সোহেল রানা ছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা প্রভাষক কামরুজামান, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলিহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন, ষোলটাকা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সাপ্পের আলীসহ বিভিন্ন পযার্য়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়দের পক্ষে সোহেল রানা লিখিত বক্তব্যে বলেন, গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী মানিকদিয়া এগারপাড়া আলিম মাদরাসা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এলাকার অনেক মানুষ এখানে জমি দান ও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। তাদের মধ্যে মরহুম শওকত আলী মুন্সি, মরহুম খোদাবকস মিয়া, মরহুম মোজাম্মেল হক, মরহুম মোবারক হোসেন (ভোলাডাঙ্গা), মাওলানা নজরুল ইসলাম ও আবুবকর উল্লেখযোগ্য। কিন্তু মানিকদিয়া গ্রামের মরহুম মোজাম্মেল হকের ছেলে একরামুল হক তাজু বিগত সরকারের আমলে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে একটানা ১২ বছর যাবৎ সভাপতির দায়িত্বে থেকে মাদরাসাটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। গ্রামের অনেক মানুষের দান অনুদানে মাদরাসাটি তৈরি হলেও ২০০৯ সালে একরামুল হক তাজু নিজ ক্ষমতা বলে তার পিতা মরহম মোজাম্মেল হককে একক প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে দেখিয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে আজীবন একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাখার রেজ্যুলেশন অনুমোদন করে। উক্ত কমিটিতে দাতা সদস্য হিসেবে ১২ বছর যাবৎ তার সহোদর জাহিদুল হক সাজু আছে। আবার নতুন করে কমিটি গঠন করেছে সেখানে তার স্ত্রীকে সভাপতি করেছেন। তাহলে সভাপতি, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দাতা সদস্য একই পরিবার থেকে কমিটিতে বিদ্যমান ছিল। সভাপতি থাকাকালীণ সময়ে একরামুল হক তাজু ও তার স্ত্রী নারগিছ আরা মাদরাসার উন্নয়নের নামে মাদরাসার নিজ জমিতে পিতার নামে আলহাজ মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন স্থাপন করে।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, ইতিপূর্বে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে এলাকার মানুষের জনরোষের স্বীকার হয়। তখন মাদরাসার দক্ষিণ দিকে সরকারি একতলা ভবনের উপর নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে দোতলা ভবন তৈরি করে এবং উন্নয়নের কথা বলে নিজেকে আত্মরক্ষা করেন। পরবর্তীতে নৈশ প্রহরী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে ষাট লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে এলাকার মানুষের দাবী।
নৈশ প্রহরী আশরাফুল ইসলামরা দুই ভাই এর মধ্যে বড়। তার জন্ম তারিখ ১২/০৩/১৯৭৫ হলেও নৈশ প্রহরী চাকরি নেওয়ার জন্য নৌবাহিনীর ভূয়া সনদ ব্যবহার করে জন্ম তারিখ করেছে ০১/০১/১৯৮৫। তাতেও বয়স না মেলায় আবারও বয়স সংশোধন করে ০১/১২/১৯৮৫ দেখিয়ে চাকরি নিয়েছেন। অথচ তার ছোট ভাই আনিসুর রহমানের জন্ম সাল ০৩/০২/১৯৭৫। সব মিলিয়ে আশরাফুল ইসলামের বর্তমান বয়স ৪০ আর তার আপন ছোট ভাই আনিসুরের বয়স ৫০ বছর।
একরামুল হক তাজু আগে একজন আদম ব্যবসায়ী ছিলেন, পরবর্তীতে আইসক্রিম ফ্যাক্টরি দিয়ে শিল্পপতি হয়েছেন। একরামুল হক তাজু এবং তার স্ত্রী নারগিছ আরা বিগত সরকারের আমলে অর্থ পাচারের সাথে জড়িত ছিল। তার স্ত্রী নারগিছ আরা কানাডায় থাকে। গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক মাস যাবৎ একরামুল হক তাজু বিদেশে পলাতক অবস্থায় ছিলেন। মাদরাসায় তার এই সীমাহীন লাগাতার দূর্নীতির কারণে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তার পোষা কিছু সাঙ্গপাঙ্গ এলাকার প্রতিবাদী নিরীহ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে চাই। তাই স্থানীয়রা কমিটি বাতিল ও সকল দুর্নীতির তদন্ত করে প্রশাসনের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।