ইপেপার । আজ সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

উইগ্রো গ্লোবাল কোম্পানি থেকে বীজ ও ঋণ নিয়ে বিপাকে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার ৫০০ কৃষক

ভুট্টার ফলন বিপর্যয়, ক্ষতি পূরণের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪২:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

উইগ্রো গ্লোবাল কোম্পানি থেকে ভুট্টার বীজ ও ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার প্রায় ৫০০ কৃষক। ভালো ফলন ও বেশি দামে কেনার প্রলোভন দেখিয়ে বীজ এবং ঋণ দিয়েছিল কোম্পানিটি। তবে ভালো ফলন দূরের কথা অর্ধেক ফলনও না পেয়ে ক্ষতি পূরণের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কৃষকরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উইগ্রো কোম্পানির প্রতিনিধিদের পেয়ে ক্ষুদ্ধ কৃষকরা তাদেরকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি অফিসারের মধ্যস্ততায় এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সমাধানের আশ্বাসেও কৃষকদের মুখে হাসি আসেনি। ঋণের দুশ্চিতা মাথায় নিয়ে অবশেষে কৃষি অফিসারের আশ্বাসেই ফিরে যান কৃষকরা।

জানা গেছে, ইউগ্রো গ্লোবাল নামে একটি কোম্পানি চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় প্রকল্প পরিচালনার নামে নানা প্রলোভন দেখাতে শুরু করে। আবাদের শুরুতেই খরচ বাবদ টাকাসহ তাদের থেকে পাওয়া যাবে সকল কীটনাশক। তাদের প্রলোভন ছিল তাদের বীজে যেমন ফলন হবে ভালো আবার তারাই সেই ভুট্টা বাজার মূল্যের থেকে ১ শ টাকা বেশিতে কিনবে। এসব প্রলোভনে একাধিক স্থানে স্বাক্ষর এবং খালি চেক নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বিঘাপ্রতি ভুট্টা আবাদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে ঋণের ব্যবস্থা করে ওই কোম্পানিটি। তবে সেই ২৫ হাজার টাকার মধ্যেই সিনজেনটা কোম্পানির আরলি কিং বীজ ও কীটনাশক পণ্য সরবরাহ করে ৮ হাজার টাকা কর্তনের পর নগদ ১৭ হাজার টাকার ঋণ দেয়া হয় কৃষকদের। বীজ, কীটনাশক এবং নগদ অর্থের প্রলোভনে এ অঞ্চলের প্রায় ৫ শ কৃষক প্রতারিত হতে বসেছেন ওই কোম্পানিটি থেকে।

কৃষকরা বলছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হলেও বহু স্থানে নেয়া হয়েছে স্বাক্ষর। নানাভাবে প্রলোভনও দেখানো হয়েছে প্রথমে। কথা ছিল আবাদের সময়টাই তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করবেন। কৃষকদের সমস্যায় থাকবেন পাশে। তবে বীজ ও ঋণের দেয়ার পর থেকে খোঁজ নেই কোম্পানির কারো। কারো কারো ভাইরাস লেগে আগেই নষ্ট হয়েছে। আবার যাদের কম-বেশি ফলন হয়েছে, সেটাও অর্ধেকেরও কম। চিটে দানা হওয়ায় ব্যাপারীরা কৃষকদের থেকেও ওই ভুট্টা নিচ্ছেন না। আবার কোম্পানির কেনার কথা থাকলেও তাদের কোনো খোঁজই নেই। তাই গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানির লোকেরা চুয়াডাঙ্গায় আসার খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে ঘেরাও করেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ লাল চাঁদ বলেন, ‘আশ্বিন মাসের ২৮ তারিখ বীজ নিয়েছিলাম। সাড়ে ৮ শ টাকা বীজ বাবদ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৭ শ টাকা মূল্যের বীজে অন্যান্য কৃষকদের ফলন হয়েছে ৫১-৫২ মণ। সেই জায়গায় এনাদের দেয়া বীজে আমরা সর্বোচ্চ ফলন পেয়েছি ২৪ মণ। তারা সিনজেনটা কোম্পনির আরলি কিং বীজ দিয়েছিল। আমাদের উজলপুর গ্রামেই ১৮ জন কৃষকের ৪৮ বিঘার ওপরে জমিতে ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলায় মোট ৪০০ এর অধিক কৃষক আছেন। তাদের সকলের কত বিঘা জমি ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমরা জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা কীভাবে কী করলো কিছুই বুঝতে পারিনি। ১ বিঘা জমিতে আমার টাকা দেয়ার কথা ২৫ হাজার। ৩ কেজি ভুট্টার বীজ, এক বোতল ৫ শ গ্রামের ক্যালরিজ, এমিস্টার টপ একটি, একটা ভিরতাকো এবং এক বোতল ক্যারাতি দিয়ে ৮ হাজার টাকা কেটে আমাদেরকে ১৭ হাজার টাকা দিয়েছে। কীসের কত দাম ধরেছে, কী পরিমাণ লাভ দিতে হবে, আমরা কিছুই বুঝতেছি না। এ বিষয়ে আমরা কৃষি অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

কৃষক মো. জামাল ইসলাম বলেন, ‘বীজ দেওয়ার সময় তারা বলেছিল ৪০ মণ ফলন হবে। এক মণও যদি কম হয়, তাহলে তারা টাকা দিয়ে দিবে। বাজার দাম থেকে একশ টাকা বেশি দামে ভুট্টা কিনবে। ভাইরাস লেগে ভ্ট্টুা নষ্ট হয়ে গেছে। কারো কারো ১ বিঘা জমিতে এক মণ ভুট্টাও হয়নি। যার সর্বোচ্চ হয়েছে, তার মাত্র ২৪ মণ। বেশিরভাগের তো কিছুই হয়নি। ব্যাংকে ঋণ দেয়ার সময় আমাদের খালি চেক নিয়েছে। ৮৯ জায়গায় স্বাক্ষর নিয়েছে তারা। যে স্বাক্ষর পারে না, তাকে ৮৯ জায়গায় টিপ সই নিয়েছে।’

কৃষাণী সাহার বানু বলেন, ‘ঝড়ে যদি ভেঙ্গে যায় ৪০ মণের টাকা দিবে। ভাইরাস লেগে নষ্ট হয়ে গেলে ৪০ মণের টাকা দিবে। বাজার দর যদি ১১০০ টাকা থাকে, তারা দেবে ১২০০ টাকা। তাদের তো খোঁজই নেই। হাতে গোনা কয়েকজনের ২০ কাঠার মধ্যে দু-এক কাঠায় ফলন হয়েছে। যা ফলন হয়েছে সেই ভুট্টাও কেউ নিতে চাইছেন না। রং নেই, চিটকে চিটকে ভুট্টা।’

কৃষক মো. শান্ত মিয়া বলেন, ‘কৃষি অফিসারের মাধ্যমে আজ শুধু আমাদের বলা হয়েছে কোম্পানিটি এই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সমাধান করবে। সমাধানে কী করবে, আর কী দেবে, সেসব কিছু আমাদের জানায়নি। উইগ্রো কোম্পানির প্রতিনিধিরা অফিসে গিয়ে তাদের ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আমরা সমাধান পেলাম না। জানি না, আর কত দুয়ারে এই সমাধানের আশায় ঘুরতে হবে।’০

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ভ্ট্টুার ফলন দেখেই বোঝা যাচ্ছে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। বড় ক্ষতি হয়েছে। ভ্ট্টুা চিটে, রং নেই। ভাইরাসেও কারো কারো নষ্ট হয়েছে। আমরা কোম্পানির লোকদের সাথে কথা বলেছি। তারা এ মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সমাধানের।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজ বলেন, ‘ইতোপূর্বে বেগমপুরের কোটালি গ্রামে উইগ্রো কোম্পানি কৃষকদের কিছু ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি দেয় যে ভুট্টা চাষে কোনো সমস্যা হলে তারা সাহায্য করবেন। কোটালি গ্রামে যেহেতু ফিউজারিয়াম রোগের প্রবণতা রয়েছে। আমরা দুই-তিন বছর প্রচারণাও চালিয়ে আসছি। এবার ওরা ভুট্টা চাষের পরই ফিউজিরিয়াম রোগে আক্রান্ত হয় এবং উইগ্রো ‘আরলি কিং’ নামের যে বীজ দিয়েছে, সেইটাতেও আশানুরূপ ফলন পায়নি কৃষকেরা। এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই জন্য আমরা উইগ্রো কোম্পানির সাথে কথা বলি এবং ঢাকা থেকে তাদের দুইজন অফিসার এসে কৃষকদের কাছ থেকে তাদের সমস্যাগুলো শোনার পর তারা এই মাসটা সময় চেয়ে নেয়। তারা জানান যে, তারা ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে অথবা কোম্পানির সাথে কথা বলে কৃষকেরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার সমাধান করবেন। আমরাও দ্রুত কৃষকদের ক্ষতির সমাধান করতে চাই।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

উইগ্রো গ্লোবাল কোম্পানি থেকে বীজ ও ঋণ নিয়ে বিপাকে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার ৫০০ কৃষক

ভুট্টার ফলন বিপর্যয়, ক্ষতি পূরণের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কৃষকরা

আপলোড টাইম : ০৭:৪২:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

উইগ্রো গ্লোবাল কোম্পানি থেকে ভুট্টার বীজ ও ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার প্রায় ৫০০ কৃষক। ভালো ফলন ও বেশি দামে কেনার প্রলোভন দেখিয়ে বীজ এবং ঋণ দিয়েছিল কোম্পানিটি। তবে ভালো ফলন দূরের কথা অর্ধেক ফলনও না পেয়ে ক্ষতি পূরণের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কৃষকরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উইগ্রো কোম্পানির প্রতিনিধিদের পেয়ে ক্ষুদ্ধ কৃষকরা তাদেরকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি অফিসারের মধ্যস্ততায় এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সমাধানের আশ্বাসেও কৃষকদের মুখে হাসি আসেনি। ঋণের দুশ্চিতা মাথায় নিয়ে অবশেষে কৃষি অফিসারের আশ্বাসেই ফিরে যান কৃষকরা।

জানা গেছে, ইউগ্রো গ্লোবাল নামে একটি কোম্পানি চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় প্রকল্প পরিচালনার নামে নানা প্রলোভন দেখাতে শুরু করে। আবাদের শুরুতেই খরচ বাবদ টাকাসহ তাদের থেকে পাওয়া যাবে সকল কীটনাশক। তাদের প্রলোভন ছিল তাদের বীজে যেমন ফলন হবে ভালো আবার তারাই সেই ভুট্টা বাজার মূল্যের থেকে ১ শ টাকা বেশিতে কিনবে। এসব প্রলোভনে একাধিক স্থানে স্বাক্ষর এবং খালি চেক নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বিঘাপ্রতি ভুট্টা আবাদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে ঋণের ব্যবস্থা করে ওই কোম্পানিটি। তবে সেই ২৫ হাজার টাকার মধ্যেই সিনজেনটা কোম্পানির আরলি কিং বীজ ও কীটনাশক পণ্য সরবরাহ করে ৮ হাজার টাকা কর্তনের পর নগদ ১৭ হাজার টাকার ঋণ দেয়া হয় কৃষকদের। বীজ, কীটনাশক এবং নগদ অর্থের প্রলোভনে এ অঞ্চলের প্রায় ৫ শ কৃষক প্রতারিত হতে বসেছেন ওই কোম্পানিটি থেকে।

কৃষকরা বলছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হলেও বহু স্থানে নেয়া হয়েছে স্বাক্ষর। নানাভাবে প্রলোভনও দেখানো হয়েছে প্রথমে। কথা ছিল আবাদের সময়টাই তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করবেন। কৃষকদের সমস্যায় থাকবেন পাশে। তবে বীজ ও ঋণের দেয়ার পর থেকে খোঁজ নেই কোম্পানির কারো। কারো কারো ভাইরাস লেগে আগেই নষ্ট হয়েছে। আবার যাদের কম-বেশি ফলন হয়েছে, সেটাও অর্ধেকেরও কম। চিটে দানা হওয়ায় ব্যাপারীরা কৃষকদের থেকেও ওই ভুট্টা নিচ্ছেন না। আবার কোম্পানির কেনার কথা থাকলেও তাদের কোনো খোঁজই নেই। তাই গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানির লোকেরা চুয়াডাঙ্গায় আসার খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে ঘেরাও করেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ লাল চাঁদ বলেন, ‘আশ্বিন মাসের ২৮ তারিখ বীজ নিয়েছিলাম। সাড়ে ৮ শ টাকা বীজ বাবদ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৭ শ টাকা মূল্যের বীজে অন্যান্য কৃষকদের ফলন হয়েছে ৫১-৫২ মণ। সেই জায়গায় এনাদের দেয়া বীজে আমরা সর্বোচ্চ ফলন পেয়েছি ২৪ মণ। তারা সিনজেনটা কোম্পনির আরলি কিং বীজ দিয়েছিল। আমাদের উজলপুর গ্রামেই ১৮ জন কৃষকের ৪৮ বিঘার ওপরে জমিতে ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলায় মোট ৪০০ এর অধিক কৃষক আছেন। তাদের সকলের কত বিঘা জমি ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমরা জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা কীভাবে কী করলো কিছুই বুঝতে পারিনি। ১ বিঘা জমিতে আমার টাকা দেয়ার কথা ২৫ হাজার। ৩ কেজি ভুট্টার বীজ, এক বোতল ৫ শ গ্রামের ক্যালরিজ, এমিস্টার টপ একটি, একটা ভিরতাকো এবং এক বোতল ক্যারাতি দিয়ে ৮ হাজার টাকা কেটে আমাদেরকে ১৭ হাজার টাকা দিয়েছে। কীসের কত দাম ধরেছে, কী পরিমাণ লাভ দিতে হবে, আমরা কিছুই বুঝতেছি না। এ বিষয়ে আমরা কৃষি অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

কৃষক মো. জামাল ইসলাম বলেন, ‘বীজ দেওয়ার সময় তারা বলেছিল ৪০ মণ ফলন হবে। এক মণও যদি কম হয়, তাহলে তারা টাকা দিয়ে দিবে। বাজার দাম থেকে একশ টাকা বেশি দামে ভুট্টা কিনবে। ভাইরাস লেগে ভ্ট্টুা নষ্ট হয়ে গেছে। কারো কারো ১ বিঘা জমিতে এক মণ ভুট্টাও হয়নি। যার সর্বোচ্চ হয়েছে, তার মাত্র ২৪ মণ। বেশিরভাগের তো কিছুই হয়নি। ব্যাংকে ঋণ দেয়ার সময় আমাদের খালি চেক নিয়েছে। ৮৯ জায়গায় স্বাক্ষর নিয়েছে তারা। যে স্বাক্ষর পারে না, তাকে ৮৯ জায়গায় টিপ সই নিয়েছে।’

কৃষাণী সাহার বানু বলেন, ‘ঝড়ে যদি ভেঙ্গে যায় ৪০ মণের টাকা দিবে। ভাইরাস লেগে নষ্ট হয়ে গেলে ৪০ মণের টাকা দিবে। বাজার দর যদি ১১০০ টাকা থাকে, তারা দেবে ১২০০ টাকা। তাদের তো খোঁজই নেই। হাতে গোনা কয়েকজনের ২০ কাঠার মধ্যে দু-এক কাঠায় ফলন হয়েছে। যা ফলন হয়েছে সেই ভুট্টাও কেউ নিতে চাইছেন না। রং নেই, চিটকে চিটকে ভুট্টা।’

কৃষক মো. শান্ত মিয়া বলেন, ‘কৃষি অফিসারের মাধ্যমে আজ শুধু আমাদের বলা হয়েছে কোম্পানিটি এই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সমাধান করবে। সমাধানে কী করবে, আর কী দেবে, সেসব কিছু আমাদের জানায়নি। উইগ্রো কোম্পানির প্রতিনিধিরা অফিসে গিয়ে তাদের ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আমরা সমাধান পেলাম না। জানি না, আর কত দুয়ারে এই সমাধানের আশায় ঘুরতে হবে।’০

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ভ্ট্টুার ফলন দেখেই বোঝা যাচ্ছে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। বড় ক্ষতি হয়েছে। ভ্ট্টুা চিটে, রং নেই। ভাইরাসেও কারো কারো নষ্ট হয়েছে। আমরা কোম্পানির লোকদের সাথে কথা বলেছি। তারা এ মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সমাধানের।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজ বলেন, ‘ইতোপূর্বে বেগমপুরের কোটালি গ্রামে উইগ্রো কোম্পানি কৃষকদের কিছু ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি দেয় যে ভুট্টা চাষে কোনো সমস্যা হলে তারা সাহায্য করবেন। কোটালি গ্রামে যেহেতু ফিউজারিয়াম রোগের প্রবণতা রয়েছে। আমরা দুই-তিন বছর প্রচারণাও চালিয়ে আসছি। এবার ওরা ভুট্টা চাষের পরই ফিউজিরিয়াম রোগে আক্রান্ত হয় এবং উইগ্রো ‘আরলি কিং’ নামের যে বীজ দিয়েছে, সেইটাতেও আশানুরূপ ফলন পায়নি কৃষকেরা। এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই জন্য আমরা উইগ্রো কোম্পানির সাথে কথা বলি এবং ঢাকা থেকে তাদের দুইজন অফিসার এসে কৃষকদের কাছ থেকে তাদের সমস্যাগুলো শোনার পর তারা এই মাসটা সময় চেয়ে নেয়। তারা জানান যে, তারা ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে অথবা কোম্পানির সাথে কথা বলে কৃষকেরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার সমাধান করবেন। আমরাও দ্রুত কৃষকদের ক্ষতির সমাধান করতে চাই।’