মামলা দায়েরকৃত ও সংঘাতপূর্ণ শিয়ালমারী পশুহাটের ইজারা জোরপূর্বক বরাদ্দ দেয়ার প্রতিবাদে
জীবননগরের ইউএনও আল-আমীনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন- আপলোড টাইম : ০৭:৩৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
- / ১৩ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গায় মামলা দায়েরকৃত ও সংঘাতপূর্ণ শিয়ালমারী পশুহাটের ইজারা জোরপূর্বক বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিবাদে ও জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত করার ষড়যন্ত্র নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী ইজারাদার। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন করেন মুন্সী ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর মুন্সী মাহবুবুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে ইজারার শর্তানুযায়ী ৭ কার্যদিবস পরে জামানতের পে-অর্ডার ফেরত পাওয়ার আইনগত বিধান থাকলেও তা না দিয়ে বেআইনিভাবে ৪২ দিন পর ইজারা বন্দোবস্তপত্র দেয়ার অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী ইজারাদার।
লিখিত বক্তব্যে মুন্সী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গত ২২ জানুয়ারি জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আল-আমীন শিয়ালমারী পণ্ডহাটের ইজায়া বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করেন। আমার প্রতিষ্ঠান তাতে অংশগ্রহণ করে এবং গত ১১ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা প্রদান করি। দরপত্রে মো. আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি অংশ নিয়ে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্য দিয়ে প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন। আমার প্রতিষ্ঠান মুন্সী ট্রেডার্স ৩ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে মো. আলতাফ হোসেনের অনুকূলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাটের ইজারা বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়। যেহেতু ইজারা বন্দোবস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে, সেহেতু ইজারার শর্ত অনুযায়ী ৭ (সাত) কার্যদিবস পর আমার জামানতের পে-অর্ডার ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ৭ (সাত) কার্যদিবস অতিবাহিত হলে আমি পে-অর্ডার ফেরত পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট বারবার ধর্ণা দিতে থাকি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমীন আজ নয়-কাল এই বলে আমাকে ঘোরাতে থাকেন এবং কালক্ষেপন করতে থাকেন। এ অবস্থায় গত ১২ মার্চ আমি লিখিতভাবে আমার জামানতের পে-অর্ডার ফেরত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করি। উক্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়, কিন্তু আমি রিসিভ কপি চাইলে তা প্রদান করা হয়নি। ইতিমধ্যে আমি জানতে পারি হাটের ইজারাদার হাট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন করেছেন। এ অবস্থায় গত ২৩ মার্চ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হতে ফোন দিয়ে আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাক্ষাতের জন্য বলা হয়। আমি আমার সহকর্মী আবু সাইদ বাবুলকে সাথে নিয়ে যথাসময়ে উপস্থিতি হই এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমীনের সাথে সাক্ষাত করি। তিনি আমাদেরকে জামানতে পে-অর্ডার ফেরত না দিয়ে আকস্মিকভাবে জানান, শিয়ালমারী পশুহাটের ইজারাদার মো. আলতাফ হোসেনের ইজারা বাতিল করে আপনাকে ইজারা বরাদ্দ দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে হাটের ইজারা বরাদ্দপত্র প্রস্তুত করে রেখেছি, বরাদ্দপত্র নিয়ে যান। আমি তাৎক্ষণিকভাবে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলি, হাটের ইজারাদার মো. আলতাফ হোসেন ইতিমধ্যে হাটের ইজারা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। যার নম্বর ৪৯৮১/২০২৫, তারিখ ১৯/৩/২০২৫ ইংরেজি।
যেহেতু রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, সেহেতু আমি আদালতে বিচারাধীন বিষয় ও মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় হাটের ইজারা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করি এবং অফিস ত্যাগ করি। এ অবস্থার মধ্যে গত ২৫ মার্চ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস হতে আমার প্রতিষ্ঠানে পিয়ন মারফত ইজারা বরাদ্দপত্র প্রেরণ করা হয় এবং আমি তা নিরুপায় হয়ে গ্রহণ করি। এ বরাদ্দপত্র গ্রহণ করার পর আমাকে হাট না নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া শুরু হয়। আমি হাটের ইজারা নিলে হাটে না যেতে দেয়া হুমকিসহ গেলে রক্তারক্তির ঘটনা ঘটবে বলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা হুমকি প্রদর্শন করে আসছে। পরের দিন ২৬ মার্চ সরকারি ছুটি থাকায় ২৭ মার্চ তারিখে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দেখা করে বিষয়টি অবহিত করি এবং আমার অনুকূলে বরাদ্দকৃত শিয়ালমারী পণ্ডহাটের বরাদ্দ বাতিল চেয়ে এবং জামানতের পে-অর্ডার ফেরত চেয়ে জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার আবেদনপত্র গ্রহণ করলেও তিনি রিসিভ কপি দিতে অস্বীকৃতি জানান। এমতাবস্থায় আমি নিরুপায় হয়ে একই পত্র একই দিনে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করি। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ না করে ফেরত পাঠান। এ অবস্থায় ওই দিনই আমি উক্ত আবেদনপত্র নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. জহিরুল ইসলামের অফিসে যায় এবং স্বাক্ষাতে বিষয়টি অবহিত করে উক্ত আবেদনপত্র জমা প্রদান করি। জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। ওই দিনই পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটি হওয়ায় সরকারি অফিস বন্ধ হয়ে যায়। ছুটির পর গত ৬ এপ্রিল জামানতের পে-অর্ডার ফেরত পাওয়ার জন্য আবারও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমীনের সাথে স্বাক্ষাত করলে তিনি আমাকে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী গত ৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে স্বাক্ষাত করি এবং হাটের সার্বিক পরিস্থিতি তাঁর সামনে তুলে ধরি। আমরা তাকে জানায় এ হাট ইজারা নিলে আমাদের জীবনহানীর শঙ্কা রয়েছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে আপনি দয়াশীল আমার অনুকূলে দেওয়া ইজারা বাতিল করে জামানতের পে-অর্ডার ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি আমাকে সাফ জানিয়ে দেন হাটের ইজারার টাকা নির্দিষ্ট তারিখে মধ্যে (৭ কার্যদিবসের মধ্যে) সরকারি কোষাগারে জমা না দিলে প্রথম ইজারাদারের ন্যায় আপনার জামানতও বাজেয়াপ্ত করা হবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এমন মন্তব্যে আমি জামানত হারানোর শঙ্কার মধ্যে পড়েছি। আমার মনে হয়েছে হাট ইজারা কর্তৃপক্ষ পরস্পর যোগসাজসে আমাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে মাত্র ৭ দিনের নোটিশ দিয়ে সংঘাতপূর্ণ একটি হাট আমার ওপরে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি হাট ইজারা কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আপনাদের মাধ্যমে আমার জামানতের পে-অর্ডার ফেরতের দাবি জানাচ্ছি।’
মুন্সী মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ইজারা বন্দোবস্ত বিষয় নিয়ে রিট পিটিশন দায়ের হয়েছে ১৯ মার্চ তারিখে এবং আমাকে ইজারা বন্দোবস্তপত্র দেওয়া হচ্ছে ২৫ মার্চ তারিখে। অর্থাৎ হাইকোর্টে মামলা দায়েরের ৫ দিন পরে। যা আমার সাথে প্রতারণার শামিল বলে আমি মনে করি। ইজারা হওয়ার ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আমার পে-অর্ডার ফেরত দিতে হতো। যদি তা না হয়, তাহলে এতোদিন কেন দেরি করা হলো। প্রত্যেকদিন আমার ব্যাংকে ৪ হাজার টাকা করে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আল-আমীনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নজরে আছে বিষয়টি। দ্বিতীয় ইজাদারকে বলা হয়েছে, ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তিনি ইজারার টাকা জমা না দিলে জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।’