ইউনূস-মোদি প্রথম বৈঠক; সম্পর্কের শীতলতা কাটুক
- আপলোড টাইম : ০৮:০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে বৃহৎ প্রতিবেশীর মান ভাঙাতে পেরেছে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে বসলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে গত শুক্রবার তাদের মধ্যে প্রথম বৈঠক হয়। মনে হতে পারে, মোদির সঙ্গে বৈঠক করতে বাংলাদেশের এতটা উতলা হওয়া বিসদৃশ ছিল। কারণ, ভারতের সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ অচল নয়। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত সাত মাসে এটি প্রমাণিত। আমরা অন্তর্র্বতী সরকারের এ আগ-বাড়িয়ে মোদিকে বৈঠকে বসতে সম্মত করার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। দুই দেশের মধ্যে অন্তত কাজের সম্পর্ক তৈরির দায়িত্ব বড় দেশ হিসেবে ছিল ভারতের। সে দায়িত্ব পালন করল বাংলাদেশ। সন্দেহ নেই, এতে ড. ইউনূসের মহত্ত্ব আরো বেড়েছে। কারণ, বাংলাদেশের স্বাভাবিক অগ্রগতির স্বার্থে এর দরকার ছিল। মনে রাখতে হবে, ভারতের আর কিছু না থাক, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার সক্ষমতা ষোলো আনা আছে। দেশের স্বার্থে একটু নমনীয় হলে কেউ খাটো হন না, তাতে বরং তার উদারতা প্রকাশ পায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ক্ষেত্রে কুশলী কূটনীতির স্বাক্ষর রেখেছেন। বৈঠকের অর্জন কী? প্রথম কথা, বাংলাদেশ তার উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। সবচেয়ে বড় যে ইস্যু, সেটি ছিল পতিত সরকারের প্রধান বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া এবং লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জোরালো ভাষায় উপস্থাপন। ভারত এ বিষয়ে টু শব্দটি করেনি। ভারতে বসে শেখ হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা বন্ধেরও জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। সীমান্ত নদীর পানির হিস্যা, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন, সীমান্তে বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা সার্বভৌম, সমতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ওপর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গঠনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। অর্থাৎ দু’টি স্বাধীন দেশের মধ্যে যেসব আন্তর্জাতিক নীতির ভিত্তিতে সম্পর্ক রচিত হয়; ঠিক সে বিষয়গুলো ভারতকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। অনুচ্চারিত ভাষায় বার্তা দিয়েছেন, দাদাগিরির প্রবণতা ছাড়তে হবে। এটি ঠিক যে, এ বৈঠক সম্ভব হওয়ার পেছনে সরকারের আন্তরিক চেষ্টার পাশাপাশি বড় ভূমিকা রেখেছে প্রধান উপদেষ্টার সদ্যসমাপ্ত চীন সফর এবং চীনের বড় ধরনের সমর্থন। তবে ড. ইউনূসের সাথে বৈঠকে ভারত এমন কোনো নতুন বক্তব্য নিয়ে আসতে পারেনি যাতে সম্পর্কোন্নয়নে তার সদিচ্ছার প্রমাণ মেলে। হাসিনাকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে খামোশ থেকেছে, বাংলাদেশে তথাকথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুরনো প্রসঙ্গ তুলেছে এবং হাসিনার পলায়নের পর নতুন যে শব্দটি তাদের মনে পড়েছে অর্থাৎ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার আকাঙ্ক্ষার পুনরুল্লেখ করেছে, যা নিয়ে বাংলাদেশে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে। তবে বৈঠকে কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক যোগাযোগের নিশ্চয়তা দিয়েছে ভারত। আশা করা হচ্ছে, হাসিনার পতনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে যে শীতলতা দেখা দিয়েছে এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে তা অনেকটাই কাটবে।