ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

সড়কে ঝরল তরতাজা ৯ প্রাণ, আহত শতাধিক

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ঈদের ছুটিতে একের পর এক দুর্ঘটনা

সমীকরণ প্রতিবেদন:
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৯৫ বার পড়া হয়েছে

ঈদের আনন্দ শেষ হওয়ার আগেই শোকের চাদর নেমেছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে সড়কে প্রাণ হারানোদের পরিবারে। সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরেছে নারী, শিশু ও যুবকসহ ৯টি তাজা প্রাণ। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ বা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ফিরলেন না, ফিরল তাদের নিথর দেহ। গত রোববার থেকে ঈদের ছুটির কয়েকদিনে এই তিন জেলায় ঘটে যাওয়া একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা কতটা অসচেতন, কতটা অবহেলিত। অধিকাংশ দুর্ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মোটরসাইকেল-গতির নেশা, হেলমেট না পরার প্রবণতা, আর ট্রাফিক আইন উপেক্ষা। এসকল দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হয়ে এখন হাসপাতাল বা বাড়িতে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ঈদের খুশির বদলে প্রাণ হারানোদের পরিবারে কান্না, হাহাকার আর অকাল বিদায়ের বিষাদ।
ঈদের আনন্দ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইলে নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়েছিল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫ বছর বয়সী কিশোর মাহির তাজওয়ার তাজ। কে জানতো এই হতে তার জীবনের শেষ ভ্রমণ। গত বুধবার ঈদের তৃতীয় দিন বিকেলে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নয়মাইল বাজারে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় এই কিশোর। তাজ মুন্সিগঞ্জের গড়চাপড়া গ্রামের ইউসুফ আলী মাস্টারের ছেলে ও মুন্সিগঞ্জ একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র। একই দুর্ঘটনায় আহত হন তাজের বন্ধুসহ তিনজন। আহতরা হলেন- নিহত তাজের বন্ধু একই গ্রামের আজিরের ছেলে শাহেদ (১৪), দামুড়হুদার জুড়ানপুরের বরকত আলীর ছেলে সাকিব (১৮) ও একই এলাকার রবজেল শেখের ছেলে শুভ (১৮)।
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের বিকেল কাটাতে মোটরসাইকেলযোগে সরোজগঞ্জ কেটের বিল ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল তাজ। পথে নবীনগর নয়মাইল বাজার এলাকায় পৌঁছাতেই বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। মুহূর্তেই চার কিশোর ছিটকে পড়ে রক্তাক্ত জখম হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। চিকিৎসকরা সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও তাজের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাতেই কাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাস্বুলেন্সযোগে রাজশাহী নেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু তাজের জীবনের সেই লড়াই শেষ হয় আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি এলাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে-গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান জানান, নিহত কিশোরের পরিবারের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। আহতদের হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসা চলছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩০ জনের বেশি নারী, শিশু ও পুরুষ। আহতদের মধ্যে মাহির তাজওয়ার তাজসহ ৯ জন ভর্তি হলেও অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাজরে রেফার্ড করা হলে পথে তার মৃত্যু হয়।ৎ
জীবননগরে পাখিভ্যান ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে একজন নিহতসহ আহত হয়েছে তিনজন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জীবননগর শাপলাকলি স্কুলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নাহিদ হোসেন (১৬) জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের লিটন হোসেনের ছেলে। আহতরা হলেন- মহেশপুর উপজেলার হুসুরখালী গ্রামের আজিজ খার ছেলে ভ্যানচালক খোকন খা, জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলা গ্রামের সাত্তারের মেয়ে সুমি খাতুন ও রায়পুর গ্রামের রাকিব হোসেন। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জীবননগর শহর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগতির মোটরসাইকেলটি দত্তনগর থেকে ছেড়ে আসা পাখিভ্যানে ধাক্কামারে। এসময় ভ্যানটি রাস্তার পাশে পড়ে গেলে ভ্যানে থাকা চালক ও এক যাত্রী গুরুতর আহত হন। এবং মোটরসাইকেল চালক পিচ রাস্তার ওপর পড়ে যেয়ে মৃত্যু হয় এবং তার সাথে থাকা একটি ছেলে আহত হয়। স্থানীয়রা সকলকে উদ্ধার করে জীবননগর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।
অন্য দিকে, গত বুধবার রাত পৌনে ১১টায় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চুয়াডাঙ্গা পৌর হাজরাহাটি এলাকার হাজিপাড়ার দিদার আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী (২৪)। গত ২৭ মার্চ বিকেলে টাউন ফুটবলের মাঠের সামনের সড়কে বালুভর্তি ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেল নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হয় ইয়াসিন। ইয়াসিনের দুই পা পিষ্ট করে চলে যায় বালুভর্তি ট্রাকটি। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় চিকিৎসকেরা। পরে ইয়াসিনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তার এক পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার ছয়দিনের মাথায় এই যুবকের প্রাণপ্রদীপ নিভে যায়।
এদিকে, দামুড়হুদায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাকিনুজ্জামান (১৩) আহত হয়েছে। আহত শাকিনুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সহসভাপতি মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান আনিস বিশ্বাসের ছোট ছেলে। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে দামুড়হুদার রাস্তায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সে আহত হয়।
জানা যায়, ঈদের আন্দ করতে তিন বন্ধু মিলে মোটরসাইকেলে করে মহল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এমন সময় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এতে শাকিনুজ্জামান রক্তাক্ত জক্ষম হয়। পরে স্থানীয় ও তার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শাকিনুজ্জামানের দুই পা, ডান হাত এবং কলার ব্যান্ড ভেঙে যায়।
এছাড়া গত সোমবার ঈদের দিন বিকেলে মেহেরপুরে বেপরোয়া গতির মাইক্রোবাসের চাপায় শিশুসহ দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় মাইক্রোবাস চালকসহ দুজন আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের হাসানুজ্জামানের ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান (২৮) ও একই উপজেলার বাড়িবাকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে আল ইমরান (২৭) এবং গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে জুবায়ের হোসেন (১১)।
মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম রেজা ও নিহত আখতারুজ্জামানের মামা শিলন খান বলেন, গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন পলাশ একটি মাইক্রোবাস আমঝুপি এলাকা থেকে বেপরোয়া গতিতে মেহেরপুর শহরে আসার পথে প্রথমে একটি ভ্যান এবং পরে একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সীমানা পিলারের সাথে ধাক্কা মারে মাইক্রোবাসটি।
মাইক্রোবাসের চাপায় মোটরসাইকেল চালক ঢাকার রামপুরা এনআরবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান ও তার বন্ধু আল ইমরান ও ভ্যান গাড়িতে থাকা গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের আলী হোসেন ও তার স্ত্রী শিরিনা খাতুন, ছেলে জোবায়ের হোসেন ও মাইক্রোবাস চালক গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন পলাশ গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে আখতারুজ্জামান ও পরে শিশু জুবায়ের হোসেন ও আল ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত আলী হোসেন ও তার স্ত্রী শিরিনা খাতুন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মেহেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মেজবাহ উদ্দিন জানান, মাইক্রোবাস চালক সাজ্জাদ হোসেন পলাশের মোটরযান লাইসেন্স গাড়িতে ছিল না। এছাড়া গাড়ির ফিটনেসসহ অন্যান্য বিষয়ে ত্রুটিপূর্ণ আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তিনটি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘ঈদের চার দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কাটাছেলাসহ অন্তত ৫০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে জাভেদ আলী (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের ভাটপাড়া-কচুইখালী সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জাভেদ আলী ধানখোলা ইউনিয়নের কসবা গ্রামের শাহিন আলীর ছেলে ও গাংনী ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভাটপাড়া ও কচুইখালির মধ্যবর্তী জায়গায় মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের সংঘর্ষে জাভেদ আলী গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায। তবে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে তার অবস্থা আরও অবনতি হলে ঢাকা নেওয়ার পথে রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া, গাংনীতে পৃথক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনীর গাড়াডোব ও চোখতোলা নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতেরা হলেন গাংনী পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আমিরুল ইসলামের ছেলে শিশির (২৪), একই এলাকার মতিয়ার ইসলামের ছেলে রাজু (২০), তেরাইল গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে জীবন (৩০) এবং কাষ্টদহ গ্রামের মৃত নূর বক্স মন্ডলের ছেলে মিনহাজুল (৬০)।
স্থানীয়রা আহত শিশির ও রাজুকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. বিডি দাস কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এদিকে বামন্দী ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম চোখতোলা নামক স্থানে মোটরসাইকেল ও পাখিভ্যানের সংঘর্ষে আহত জীবন ও মিনহাজুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
অপর দিকে ঈদের ছুটি কাটাতে সহকর্মীদের সঙ্গে বেড়াতে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের দিলীপ-সাধনা দম্পতি। দিলীপ শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের দুলাল চন্দ্রের ছেলে। তিনি ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন।
জানা গেছে, ঈদের ছুটি কাটাতে সহকর্মীদের সঙ্গে বেড়াতে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। পথে তিনি ও তার স্ত্রী নিহত হন। দিলীপের বোন গিরি বালা জানান, বুধবার সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া চুনতি বন রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার ভাই ও ভাবী সাধনা রানী ওরফে বাসনা নিহত হন। তাদের একমাত্র কন্যা আরাধ্য গুরুতর আহত হয়ে এখন চট্রগামের একটি হাসপাতলে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
দিলীপের চাচাতো ভাই পলাশ কুমার জানান, দুর্ঘটনার খবর জানার পর তাদের পরিবারটি শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। কোনোভাবেই এই মৃত্যু তারা মানতে পারছেন না। দিলীপের পিতা দুলাল চন্দ্র ও মা উলসী রানী সন্তান ও পুত্রবধূর শোকে যেন কান্নাও ভুলে গেছেন। স্থানীয় কাঁচেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর শহিদুল ইসলাম বুধবার বিকেলে জানান, তিনি খবর পেয়ে নিহতদের বাড়িতে ছুটে যান। শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুম খান বলেন, মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর শুনেছি। চট্টগ্রাম থেকে বার্তা পাওয়া গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

সড়কে ঝরল তরতাজা ৯ প্রাণ, আহত শতাধিক

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ঈদের ছুটিতে একের পর এক দুর্ঘটনা

আপলোড টাইম : ০৪:৩২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫

ঈদের আনন্দ শেষ হওয়ার আগেই শোকের চাদর নেমেছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে সড়কে প্রাণ হারানোদের পরিবারে। সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরেছে নারী, শিশু ও যুবকসহ ৯টি তাজা প্রাণ। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ বা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ফিরলেন না, ফিরল তাদের নিথর দেহ। গত রোববার থেকে ঈদের ছুটির কয়েকদিনে এই তিন জেলায় ঘটে যাওয়া একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা কতটা অসচেতন, কতটা অবহেলিত। অধিকাংশ দুর্ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মোটরসাইকেল-গতির নেশা, হেলমেট না পরার প্রবণতা, আর ট্রাফিক আইন উপেক্ষা। এসকল দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হয়ে এখন হাসপাতাল বা বাড়িতে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ঈদের খুশির বদলে প্রাণ হারানোদের পরিবারে কান্না, হাহাকার আর অকাল বিদায়ের বিষাদ।
ঈদের আনন্দ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইলে নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়েছিল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫ বছর বয়সী কিশোর মাহির তাজওয়ার তাজ। কে জানতো এই হতে তার জীবনের শেষ ভ্রমণ। গত বুধবার ঈদের তৃতীয় দিন বিকেলে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নয়মাইল বাজারে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় এই কিশোর। তাজ মুন্সিগঞ্জের গড়চাপড়া গ্রামের ইউসুফ আলী মাস্টারের ছেলে ও মুন্সিগঞ্জ একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র। একই দুর্ঘটনায় আহত হন তাজের বন্ধুসহ তিনজন। আহতরা হলেন- নিহত তাজের বন্ধু একই গ্রামের আজিরের ছেলে শাহেদ (১৪), দামুড়হুদার জুড়ানপুরের বরকত আলীর ছেলে সাকিব (১৮) ও একই এলাকার রবজেল শেখের ছেলে শুভ (১৮)।
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের বিকেল কাটাতে মোটরসাইকেলযোগে সরোজগঞ্জ কেটের বিল ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল তাজ। পথে নবীনগর নয়মাইল বাজার এলাকায় পৌঁছাতেই বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। মুহূর্তেই চার কিশোর ছিটকে পড়ে রক্তাক্ত জখম হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। চিকিৎসকরা সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও তাজের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাতেই কাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাস্বুলেন্সযোগে রাজশাহী নেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু তাজের জীবনের সেই লড়াই শেষ হয় আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি এলাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে-গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান জানান, নিহত কিশোরের পরিবারের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। আহতদের হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসা চলছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩০ জনের বেশি নারী, শিশু ও পুরুষ। আহতদের মধ্যে মাহির তাজওয়ার তাজসহ ৯ জন ভর্তি হলেও অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাজরে রেফার্ড করা হলে পথে তার মৃত্যু হয়।ৎ
জীবননগরে পাখিভ্যান ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে একজন নিহতসহ আহত হয়েছে তিনজন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জীবননগর শাপলাকলি স্কুলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নাহিদ হোসেন (১৬) জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের লিটন হোসেনের ছেলে। আহতরা হলেন- মহেশপুর উপজেলার হুসুরখালী গ্রামের আজিজ খার ছেলে ভ্যানচালক খোকন খা, জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলা গ্রামের সাত্তারের মেয়ে সুমি খাতুন ও রায়পুর গ্রামের রাকিব হোসেন। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জীবননগর শহর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগতির মোটরসাইকেলটি দত্তনগর থেকে ছেড়ে আসা পাখিভ্যানে ধাক্কামারে। এসময় ভ্যানটি রাস্তার পাশে পড়ে গেলে ভ্যানে থাকা চালক ও এক যাত্রী গুরুতর আহত হন। এবং মোটরসাইকেল চালক পিচ রাস্তার ওপর পড়ে যেয়ে মৃত্যু হয় এবং তার সাথে থাকা একটি ছেলে আহত হয়। স্থানীয়রা সকলকে উদ্ধার করে জীবননগর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।
অন্য দিকে, গত বুধবার রাত পৌনে ১১টায় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চুয়াডাঙ্গা পৌর হাজরাহাটি এলাকার হাজিপাড়ার দিদার আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী (২৪)। গত ২৭ মার্চ বিকেলে টাউন ফুটবলের মাঠের সামনের সড়কে বালুভর্তি ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেল নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হয় ইয়াসিন। ইয়াসিনের দুই পা পিষ্ট করে চলে যায় বালুভর্তি ট্রাকটি। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় চিকিৎসকেরা। পরে ইয়াসিনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তার এক পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার ছয়দিনের মাথায় এই যুবকের প্রাণপ্রদীপ নিভে যায়।
এদিকে, দামুড়হুদায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাকিনুজ্জামান (১৩) আহত হয়েছে। আহত শাকিনুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সহসভাপতি মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান আনিস বিশ্বাসের ছোট ছেলে। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে দামুড়হুদার রাস্তায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সে আহত হয়।
জানা যায়, ঈদের আন্দ করতে তিন বন্ধু মিলে মোটরসাইকেলে করে মহল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এমন সময় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এতে শাকিনুজ্জামান রক্তাক্ত জক্ষম হয়। পরে স্থানীয় ও তার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শাকিনুজ্জামানের দুই পা, ডান হাত এবং কলার ব্যান্ড ভেঙে যায়।
এছাড়া গত সোমবার ঈদের দিন বিকেলে মেহেরপুরে বেপরোয়া গতির মাইক্রোবাসের চাপায় শিশুসহ দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় মাইক্রোবাস চালকসহ দুজন আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের হাসানুজ্জামানের ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান (২৮) ও একই উপজেলার বাড়িবাকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে আল ইমরান (২৭) এবং গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে জুবায়ের হোসেন (১১)।
মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম রেজা ও নিহত আখতারুজ্জামানের মামা শিলন খান বলেন, গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন পলাশ একটি মাইক্রোবাস আমঝুপি এলাকা থেকে বেপরোয়া গতিতে মেহেরপুর শহরে আসার পথে প্রথমে একটি ভ্যান এবং পরে একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সীমানা পিলারের সাথে ধাক্কা মারে মাইক্রোবাসটি।
মাইক্রোবাসের চাপায় মোটরসাইকেল চালক ঢাকার রামপুরা এনআরবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান ও তার বন্ধু আল ইমরান ও ভ্যান গাড়িতে থাকা গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের আলী হোসেন ও তার স্ত্রী শিরিনা খাতুন, ছেলে জোবায়ের হোসেন ও মাইক্রোবাস চালক গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন পলাশ গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে আখতারুজ্জামান ও পরে শিশু জুবায়ের হোসেন ও আল ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত আলী হোসেন ও তার স্ত্রী শিরিনা খাতুন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মেহেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মেজবাহ উদ্দিন জানান, মাইক্রোবাস চালক সাজ্জাদ হোসেন পলাশের মোটরযান লাইসেন্স গাড়িতে ছিল না। এছাড়া গাড়ির ফিটনেসসহ অন্যান্য বিষয়ে ত্রুটিপূর্ণ আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তিনটি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘ঈদের চার দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কাটাছেলাসহ অন্তত ৫০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে জাভেদ আলী (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের ভাটপাড়া-কচুইখালী সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জাভেদ আলী ধানখোলা ইউনিয়নের কসবা গ্রামের শাহিন আলীর ছেলে ও গাংনী ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভাটপাড়া ও কচুইখালির মধ্যবর্তী জায়গায় মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের সংঘর্ষে জাভেদ আলী গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায। তবে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে তার অবস্থা আরও অবনতি হলে ঢাকা নেওয়ার পথে রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া, গাংনীতে পৃথক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনীর গাড়াডোব ও চোখতোলা নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতেরা হলেন গাংনী পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আমিরুল ইসলামের ছেলে শিশির (২৪), একই এলাকার মতিয়ার ইসলামের ছেলে রাজু (২০), তেরাইল গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে জীবন (৩০) এবং কাষ্টদহ গ্রামের মৃত নূর বক্স মন্ডলের ছেলে মিনহাজুল (৬০)।
স্থানীয়রা আহত শিশির ও রাজুকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. বিডি দাস কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এদিকে বামন্দী ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম চোখতোলা নামক স্থানে মোটরসাইকেল ও পাখিভ্যানের সংঘর্ষে আহত জীবন ও মিনহাজুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
অপর দিকে ঈদের ছুটি কাটাতে সহকর্মীদের সঙ্গে বেড়াতে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের দিলীপ-সাধনা দম্পতি। দিলীপ শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের দুলাল চন্দ্রের ছেলে। তিনি ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন।
জানা গেছে, ঈদের ছুটি কাটাতে সহকর্মীদের সঙ্গে বেড়াতে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। পথে তিনি ও তার স্ত্রী নিহত হন। দিলীপের বোন গিরি বালা জানান, বুধবার সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া চুনতি বন রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার ভাই ও ভাবী সাধনা রানী ওরফে বাসনা নিহত হন। তাদের একমাত্র কন্যা আরাধ্য গুরুতর আহত হয়ে এখন চট্রগামের একটি হাসপাতলে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
দিলীপের চাচাতো ভাই পলাশ কুমার জানান, দুর্ঘটনার খবর জানার পর তাদের পরিবারটি শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। কোনোভাবেই এই মৃত্যু তারা মানতে পারছেন না। দিলীপের পিতা দুলাল চন্দ্র ও মা উলসী রানী সন্তান ও পুত্রবধূর শোকে যেন কান্নাও ভুলে গেছেন। স্থানীয় কাঁচেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর শহিদুল ইসলাম বুধবার বিকেলে জানান, তিনি খবর পেয়ে নিহতদের বাড়িতে ছুটে যান। শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুম খান বলেন, মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর শুনেছি। চট্টগ্রাম থেকে বার্তা পাওয়া গেছে।