থমকে গেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার
একমাত্র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট বদলি, দুর্ভোগে জরুরি ও গুরুতর রোগীরা
- আপলোড টাইম : ০৬:৫৫:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
- / ৭১ বার পড়া হয়েছে
জরুরি অস্ত্রোপচারসহ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের শেষ ভরসা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ হাসপাতালের একমাত্র জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট বদলি হয়ে যাওয়ায় অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকের দুটি পদই এখন শূন্য। ফলে গুরুতর রোগীদের কুষ্টিয়া, যশোর ও রাজশাহীর সরকারি হাসপাতাল কিংবা বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা সাধারণ রোগীদের জন্য বাড়তি খরচ ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্টের পদ শূন্য ছিল। তবে জুনিয়র কনসালটেন্ট দায়িত্বে থাকায় কোনোভাবে অপারেশন কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু গত ১০ ফেব্রুয়ারি জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. নুরুন্নাহার খানম নদীকে যশোরে বদলি করা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি ছাড়পত্র নিলে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস জানান, চুয়াডাঙ্গা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে হাজিরা ভিত্তিতে মাঝে মধ্যে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক এনে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ছোটখাট কিছু অপারেশন করা হচ্ছে। তবে এক মাসের বেশি সময় ধরে হয়নি গাইনি, সার্জারি ও অর্থোপেডিক বিভাগের গুরুত্বর বড় অপারেশন বন্ধ রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যার হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও জনবল সংকটের কারণে সেবার মান উন্নত করা সম্ভব হয়নি। ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেই অনুপাতে লোকবল বাড়েনি। শুধু অপারেশন থিয়েটারে দুর্ভোগ নয়, চিকিৎসক ও কর্মচারীর সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে। হাসপাতালের সিনিয়র চক্ষু কনসালটেন্ট, সিনিয়র ও জুনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট, সিনিয়র শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট, জুনিয়র ইএনটি কনসালটেন্ট, জুনিয়র রেডিওলোজিস্টসহ মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২৮টি পদ ফাঁকা, যার মধ্যে সুইপারের ৭টি পদের ৪টি দীর্ঘদিন খালি। ফলে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে।
শুধুমাত্র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট না থাকায় বেশিরভাগ রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। অর্থাভাবে বাইরে অপারেশন করাতে না পেরে অনেকে বাড়ি ফিরে যেতেও বাধ্য হচ্ছেন। যা নিয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু এখানে অস্ত্রোপচারই হচ্ছে না। বাইরের বেসরকারি ক্লিনিকে গেলে অনেক টাকা লেগে যাচ্ছে।’
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের অ্যানেসথেসিয়ালজিস্ট অতিরিক্ত দয়িত্ব নিয়ে হাসপাতালে এসে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন। তবে এভাবে বেশিদিন অপারেশন থিয়েটার চালানো সম্ভব নয়।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ আগে থেকেই খালি ছিল, এখন জুনিয়র কনসালটেন্ট না থাকায় মেজর ও মাইনর অপারেশন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এই পদ পূরণে একজন চিকিৎসকের নামসহ স্বাস্থ্য বিভাগে চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করা হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদটি পূরণ হবে এবং হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’