ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ; জন-আকাক্সক্ষা উপেক্ষা নয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
  • / ৫১ বার পড়া হয়েছে

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সাত মাস না পেরুতেই পতিত স্বৈরাচারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কথা চার দিকে জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। মহলবিশেষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি পরিশোধিত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। তা না হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। এ প্রক্রিয়ায় এর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক দল শর্তসাপেক্ষে একমত হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের এ প্রক্রিয়ার খবর ফাঁস করেন জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সিপাহসালার আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। এর পর থেকে দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পাল্টাতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে রাজনীতির অভিমুখ রাষ্ট্রসংস্কার ও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রতিরোধকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক নেতার মুখে শোনা গেছে নানা বক্তব্য। একটি দলের নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে কোনো অপরাধ করেনি। আরেকজন বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না তা জনগণ ঠিক করবে। বড় একটি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, সংস্কার করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট লাগবে যেটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া সম্ভব নয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশ্য বলেছেন, অর্ন্তর্র্বতী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না, যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। ক’দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে দলটির অপরাধীদের বিচার হবে। তার এ বক্তব্যেরও প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিপ্লবী ছাত্রসমাজ ও ছাত্রদের নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি ওই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে গণহত্যাকারী, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানায়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আবারো উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্ররা নতুন করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। আত্মপ্রকাশ ঘটেছে নতুন প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ। এ দিকে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। বিতাড়িত আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দেড় দশকের সব অত্যাচার নির্যাতন, গুম-খুন হত্যার রাজনীতি, জনগণের অধিকার হরণ, দেশের সম্পদ লুটপাট ও বিদেশে পাচার এমনকি দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার তরতাজা ঘটনাগুলো রাজনীতিকরা কী করে এত দ্রুত ভুলে যেতে পারেন; তা ভেবে জনগণ বিস্মিত ও হকচকিত। এর ফলে যত রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহত ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তার পুরো দায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোর। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তাতে আবারো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে দেশের কল্যাণকামী সাধারণ মানুষের। তারা দেশে আর কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটুক তা দেখতে চান না। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই ক্লোজড হয়ে গেছে। নতুন করে ওপেন করার কোনো অবকাশ নেই। এটিই জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনার প্রতিফলন বলে দেশপ্রেমিক জনতা মনে করে। দেশবাসী সবকিছুর আগে অবিলম্বে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে সংঘটিত গণহত্যা বিশেষ করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে চায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ; জন-আকাক্সক্ষা উপেক্ষা নয়

আপলোড টাইম : ০৯:৩০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সাত মাস না পেরুতেই পতিত স্বৈরাচারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কথা চার দিকে জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। মহলবিশেষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি পরিশোধিত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। তা না হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। এ প্রক্রিয়ায় এর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক দল শর্তসাপেক্ষে একমত হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের এ প্রক্রিয়ার খবর ফাঁস করেন জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সিপাহসালার আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। এর পর থেকে দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পাল্টাতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে রাজনীতির অভিমুখ রাষ্ট্রসংস্কার ও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রতিরোধকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক নেতার মুখে শোনা গেছে নানা বক্তব্য। একটি দলের নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে কোনো অপরাধ করেনি। আরেকজন বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না তা জনগণ ঠিক করবে। বড় একটি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, সংস্কার করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট লাগবে যেটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া সম্ভব নয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশ্য বলেছেন, অর্ন্তর্র্বতী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না, যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। ক’দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে দলটির অপরাধীদের বিচার হবে। তার এ বক্তব্যেরও প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিপ্লবী ছাত্রসমাজ ও ছাত্রদের নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি ওই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে গণহত্যাকারী, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানায়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আবারো উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্ররা নতুন করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। আত্মপ্রকাশ ঘটেছে নতুন প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ। এ দিকে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। বিতাড়িত আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দেড় দশকের সব অত্যাচার নির্যাতন, গুম-খুন হত্যার রাজনীতি, জনগণের অধিকার হরণ, দেশের সম্পদ লুটপাট ও বিদেশে পাচার এমনকি দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার তরতাজা ঘটনাগুলো রাজনীতিকরা কী করে এত দ্রুত ভুলে যেতে পারেন; তা ভেবে জনগণ বিস্মিত ও হকচকিত। এর ফলে যত রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহত ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তার পুরো দায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোর। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তাতে আবারো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে দেশের কল্যাণকামী সাধারণ মানুষের। তারা দেশে আর কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটুক তা দেখতে চান না। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই ক্লোজড হয়ে গেছে। নতুন করে ওপেন করার কোনো অবকাশ নেই। এটিই জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনার প্রতিফলন বলে দেশপ্রেমিক জনতা মনে করে। দেশবাসী সবকিছুর আগে অবিলম্বে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে সংঘটিত গণহত্যা বিশেষ করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে চায়।