ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

হরিণাকু-ুতে স্কুলে দুর্ধর্ষ চুরির ৩ মাস পর মামলা দায়ের

শিক্ষকদের চাঁদায় কেনা হলো মালামাল

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের হরিণাক-ু উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা তিন মাস পর প্রকাশ্যে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল কমিটি ও প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ধামাচাপা দিলেও শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। এ ঘটনায় গত মাসে মামলা দায়ের হয়। মামলার পর স্কুলের নৈশপ্রহরী ও সহায়ক কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ। শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। তদন্ত শুরুর পরই চুরি যাওয়া মালামাল কিনে স্কুলে জমা করেছেন প্রধান শিক্ষক। মালামাল কিনতে শিক্ষকদের কাছ থেকে তোলা হয়েছে চাঁদা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা।
জানা গেছে, গত বছরের ১১ নভেম্বর হরিণাক-ু উপজেলার ভালকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। রাতের আঁধারে স্কুলের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়। চুরি যাওয়া মালামালের আনুমানিক মূল্য এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, চুরির ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনকভাবে প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করেন। অন্য শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে চাপ সৃষ্টি করলে ঘটনার আড়াই মাস পর মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার নম্বর ১৫/৪১। মামলায় স্কুলের নৈশপ্রহরী নাইম ও সহায়ক কর্মচারী বাবলুর রহমানকে আসামি করা হয়। মামলার পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, চুরির ঘটনায় নৈশপ্রহরী ও সহায়ক কর্মচারী জড়িত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ চুরি যাওয়া মালামাল যে ঘরে ছিল, সেটি চুরির পরও তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। আর ওই ঘরের চাবি নৈশপ্রহরী বা সহায়ক কর্মচারীর কাছে থাকে না। এছাড়া ঘটনার আড়াই মাস পর মামলা দায়ের করায় সন্দেহ আরও বেড়েছে।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া ও দেরিতে মামলা করার ঘটনায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরুর পরপরই চুরি হওয়া মালামাল নিজ উদ্যোগে কিনে স্কুলে জমা করেছেন প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক। অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে চাঁদা তুলে কেনা হয়েছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সিসি ক্যামেরা ও স্মার্ট টিভি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মামলার তদন্ত শুরুর পর হঠাৎ করে চুরি যাওয়া মালামাল কেনার ঘটনায় নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের এমন উদ্যোগকে অস্বাভাবিক মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলের মালামাল চুরি হয়েছে এবং মামলা হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজ উদ্যোগে কেন চাঁদা তুলে মালামাল কিনলেন? বিষয়টি রহস্যজনক। মামলার তদন্ত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই কি তিনি আগেভাগে মালামাল কিনে জমা করেছেন? চুরির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা।
হরিণাক-ু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমআর রউফ বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আমরা আদালতে বিস্তারিত জানাব। তদন্তাধীন বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভালকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক বলেন, ‘আমার স্কুলের মালামাল হারিয়ে গেছে। এসব জিনিস স্কুলের দরকার। চুরির মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে। নতুন করে আবার কবে এসব জিনিস পাবো, তা বলা যাচ্ছে না। তাই, সকল শিক্ষকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছি। এ নিয়ে অন্যভাবে ভাবার কিছু দেখছি না।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, ‘চুরির ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে এটি ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু মামলা হয়েছে, আশা করি সত্য বেরিয়ে আসবে।’ হরিণাক-ু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিএম তারেকুজ্জামান বলেন, ‘চুরির ঘটনা জানার পরই মামলা করতে প্রধান শিক্ষককে পরামর্শ দিয়েছিলাম। মামলা করতে কেন বিলম্ব হয়েছে, সেটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন। মামলায় কী অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে। তবে এ ঘটনায় নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটি আমি দেখব।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

হরিণাকু-ুতে স্কুলে দুর্ধর্ষ চুরির ৩ মাস পর মামলা দায়ের

শিক্ষকদের চাঁদায় কেনা হলো মালামাল

আপলোড টাইম : ১১:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

ঝিনাইদহের হরিণাক-ু উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা তিন মাস পর প্রকাশ্যে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল কমিটি ও প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ধামাচাপা দিলেও শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। এ ঘটনায় গত মাসে মামলা দায়ের হয়। মামলার পর স্কুলের নৈশপ্রহরী ও সহায়ক কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ। শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। তদন্ত শুরুর পরই চুরি যাওয়া মালামাল কিনে স্কুলে জমা করেছেন প্রধান শিক্ষক। মালামাল কিনতে শিক্ষকদের কাছ থেকে তোলা হয়েছে চাঁদা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা।
জানা গেছে, গত বছরের ১১ নভেম্বর হরিণাক-ু উপজেলার ভালকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। রাতের আঁধারে স্কুলের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়। চুরি যাওয়া মালামালের আনুমানিক মূল্য এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, চুরির ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনকভাবে প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করেন। অন্য শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে চাপ সৃষ্টি করলে ঘটনার আড়াই মাস পর মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার নম্বর ১৫/৪১। মামলায় স্কুলের নৈশপ্রহরী নাইম ও সহায়ক কর্মচারী বাবলুর রহমানকে আসামি করা হয়। মামলার পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, চুরির ঘটনায় নৈশপ্রহরী ও সহায়ক কর্মচারী জড়িত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ চুরি যাওয়া মালামাল যে ঘরে ছিল, সেটি চুরির পরও তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। আর ওই ঘরের চাবি নৈশপ্রহরী বা সহায়ক কর্মচারীর কাছে থাকে না। এছাড়া ঘটনার আড়াই মাস পর মামলা দায়ের করায় সন্দেহ আরও বেড়েছে।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া ও দেরিতে মামলা করার ঘটনায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরুর পরপরই চুরি হওয়া মালামাল নিজ উদ্যোগে কিনে স্কুলে জমা করেছেন প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক। অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে চাঁদা তুলে কেনা হয়েছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সিসি ক্যামেরা ও স্মার্ট টিভি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মামলার তদন্ত শুরুর পর হঠাৎ করে চুরি যাওয়া মালামাল কেনার ঘটনায় নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের এমন উদ্যোগকে অস্বাভাবিক মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলের মালামাল চুরি হয়েছে এবং মামলা হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজ উদ্যোগে কেন চাঁদা তুলে মালামাল কিনলেন? বিষয়টি রহস্যজনক। মামলার তদন্ত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই কি তিনি আগেভাগে মালামাল কিনে জমা করেছেন? চুরির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা।
হরিণাক-ু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমআর রউফ বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আমরা আদালতে বিস্তারিত জানাব। তদন্তাধীন বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভালকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদুর রহমান খালেক বলেন, ‘আমার স্কুলের মালামাল হারিয়ে গেছে। এসব জিনিস স্কুলের দরকার। চুরির মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে। নতুন করে আবার কবে এসব জিনিস পাবো, তা বলা যাচ্ছে না। তাই, সকল শিক্ষকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছি। এ নিয়ে অন্যভাবে ভাবার কিছু দেখছি না।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, ‘চুরির ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে এটি ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু মামলা হয়েছে, আশা করি সত্য বেরিয়ে আসবে।’ হরিণাক-ু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিএম তারেকুজ্জামান বলেন, ‘চুরির ঘটনা জানার পরই মামলা করতে প্রধান শিক্ষককে পরামর্শ দিয়েছিলাম। মামলা করতে কেন বিলম্ব হয়েছে, সেটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন। মামলায় কী অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে। তবে এ ঘটনায় নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটি আমি দেখব।’