ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

হরিণাকুণ্ডুর এই গ্রাম যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা!

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১২:২০:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার মতো ঝিনাইদহের একটি গ্রামের অন্তত ১০টি বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামটির আলিশান ও পরিপাটি বাড়িগুলো এখন দেখলে মনে হবে মিসাইলের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। কিন্তু না, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হাকিমপুর গ্রামে দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তীব্র মতবিরোধ থেকে এই বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বাড়ি ভাঙচুর করেই প্রতিপক্ষ ক্ষ্যান্ত হয়নি, চালানো হয়েছে দুঃসাহসিক লুটপাট। মাঠের কলাবাগান কেটে সাবাড় করা হয়েছে। পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর এখন মাঠের উঠতি ফসল তছরুপ করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ মহল্লায় ছড়িয়ে রয়েছে ইট, কাঠ ও ভাঙা আসবাবপত্র। গ্রামবাসী মনজের আলী জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মোশারফ নামে এক আইনজীবীর সহকারী নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্তদের (আসামি) বাড়িঘরে এভাবেই ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এই ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়ে মহিলা ও শিশুরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা লাঠে উঠেছে।

ধারাবাহিক হামলায় সাইদ, মহিন, আব্দুল আলীম, আব্দুল জব্বার, কসিম মোল্লা, ওমর আলী ও নাজমুলসহ একাধিক মানুষের আলিশান বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জব্বার মন্ডল, সাঈদ, রমজান ও তার দুই ছেলের মোট ৪১টি গরু লুট করা হয়েছে। দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও একটি পুকুরের মাছ লুট করা হয়েছে। ৫ বিঘা জমির কলা ও ২ বিঘা জমির ভুট্টার খেত নষ্ট করা হয়েছে। হাকিমপুর গ্রামের ওমর আলী, নাজমুল, ঠান্ডু, বকুল ও আকুলের বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে।

হরিণাকুণ্ডু থানা-পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, মোশাররফ হত্যাকাণ্ডের ৩৮ দিন পার হলেও পুলিশ যেমন কোন আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি, আবার আসামিদের বাড়িঘরও বাদী পক্ষের লোকজনের রোষানল থেকে সুরক্ষা দিতে পারেনি। ফলে গ্রামবাসীর মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

স্থানীয় চাঁদপুর ইউনিয়নের মেম্বার আশরাফ উদ্দীন স্বপন জানান, ভাংচুরের বিষয়ে পুলিশকে সব সময় অবগত করা হলেও ভাংটুর বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডুু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম এ রউফ খান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তবে অভিযান অব্যহত রয়েছে। তবে বাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

হরিণাকুণ্ডুর এই গ্রাম যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা!

আপলোড টাইম : ১২:২০:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার মতো ঝিনাইদহের একটি গ্রামের অন্তত ১০টি বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামটির আলিশান ও পরিপাটি বাড়িগুলো এখন দেখলে মনে হবে মিসাইলের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। কিন্তু না, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হাকিমপুর গ্রামে দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তীব্র মতবিরোধ থেকে এই বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বাড়ি ভাঙচুর করেই প্রতিপক্ষ ক্ষ্যান্ত হয়নি, চালানো হয়েছে দুঃসাহসিক লুটপাট। মাঠের কলাবাগান কেটে সাবাড় করা হয়েছে। পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর এখন মাঠের উঠতি ফসল তছরুপ করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ মহল্লায় ছড়িয়ে রয়েছে ইট, কাঠ ও ভাঙা আসবাবপত্র। গ্রামবাসী মনজের আলী জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মোশারফ নামে এক আইনজীবীর সহকারী নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্তদের (আসামি) বাড়িঘরে এভাবেই ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এই ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়ে মহিলা ও শিশুরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা লাঠে উঠেছে।

ধারাবাহিক হামলায় সাইদ, মহিন, আব্দুল আলীম, আব্দুল জব্বার, কসিম মোল্লা, ওমর আলী ও নাজমুলসহ একাধিক মানুষের আলিশান বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জব্বার মন্ডল, সাঈদ, রমজান ও তার দুই ছেলের মোট ৪১টি গরু লুট করা হয়েছে। দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও একটি পুকুরের মাছ লুট করা হয়েছে। ৫ বিঘা জমির কলা ও ২ বিঘা জমির ভুট্টার খেত নষ্ট করা হয়েছে। হাকিমপুর গ্রামের ওমর আলী, নাজমুল, ঠান্ডু, বকুল ও আকুলের বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে।

হরিণাকুণ্ডু থানা-পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, মোশাররফ হত্যাকাণ্ডের ৩৮ দিন পার হলেও পুলিশ যেমন কোন আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি, আবার আসামিদের বাড়িঘরও বাদী পক্ষের লোকজনের রোষানল থেকে সুরক্ষা দিতে পারেনি। ফলে গ্রামবাসীর মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

স্থানীয় চাঁদপুর ইউনিয়নের মেম্বার আশরাফ উদ্দীন স্বপন জানান, ভাংচুরের বিষয়ে পুলিশকে সব সময় অবগত করা হলেও ভাংটুর বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডুু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম এ রউফ খান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তবে অভিযান অব্যহত রয়েছে। তবে বাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।