স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে জমা বেড়েছে
- আপলোড টাইম : ১২:০৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
দেশে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের স্থিতি বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় আমানতকারী তথা কোটিপতিদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। এগুলোকে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট (এনএফএ) বলা হয়। গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংক হিসাবে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে জমা বেড়েছে ২২০ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে স্কুল ব্যাংকিং ও কর্মজীবী শিশুদের অ্যাকাউন্ট এই হিসাবের বাইরে। এই নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালান্স বা সার্ভিস চার্জ বা ফি নেই। সমাজের সবস্তরের মানুষের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস আগেও দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তবে এরপরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংকট কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। আর এতেই দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষেরাও ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ঠিক করতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকে আমানত ফিরতে শুরু করেছে। ২০১০ সালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। এগুলোকে নো-ফ্রিলস অ্যাকাউন্টস (এনএফএ) বলা হয়। এসব অ্যাকাউন্টের ন্যূনতম সার্ভিস চার্জ বা ফি নেই। সমাজের সব স্তরের মানুষের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কৃষকরা ছাড়াও এসব হিসাবের আওতায় থাকেন পোশাক শ্রমিক, অতি দরিদ্র মানুষ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরাসহ অনেকে। এর মধ্যে কৃষকদের হিসাব ও আমানত সবচেয়ে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকা দিয়ে খোলা স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকা দিয়ে খোলা হিসাবে আমানত বেড়েছে ৪০৩ কোটি টাকা ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে নো ফ্রিল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৮টি। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৩৯০টি। সেই হিসাবে তিন মাসে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৫১২টি। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার পালাবদলের পর ব্যাংক খাত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তখন ব্যাংক শতভাগ সিকিউরড খাত হবে কিনা, এমন দ্বিধায় অনেকে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছিলেন। সে সময় এসব হিসাব থেকেও আমানত তুলে নেয়া হয়। সরকার পতনের পর ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ এ খাত নিয়ে আবার আস্থা তৈরি হয়।
এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবের মাধ্যমে আসা মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্সের তুলনায় ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। এনএফএগুলোতে স্কুল ব্যাংকিংও অন্তর্ভুক্ত আছে, যেখানে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরা কেবল ১০০ টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। তবে এসব অ্যাকাউন্টে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরা ১০ টাকা জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা বেশি, যা ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার মোট অ্যাকাউন্টের ৩৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এরপরের তালিকায় রয়েছে কৃষকদের ১০ টাকা জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা, যার পরিমাণ ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার মোট অ্যাকাউন্টের ৩৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অতি দরিদ্ররা মোট নো-ফ্রিলস অ্যাকাউন্টের ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশের মালিক।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যা ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবে মোট জমা রয়েছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।