ইপেপার । আজ সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে ২৮ বছর ধরে মাছের রেনু উৎপাদন বন্ধ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪২:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৬৭৫ বার পড়া হয়েছে

Meherpur Fish Farm Photo (5)মেহেরপুর থেকে মেহের আমজাদ: মেহেরপুর সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে মাছের রেণু সরবরাহ করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলা হলেও দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রেনু উৎপাদন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার মৎস্য চাষিরা। সরকারি হ্যাচারি থেকে রেনু পোনা না পাওয়ায় জেলার মৎস চাষীদের অন্য জেলা থেকে পোনা সংগ্রহ করে মৎস চাষ করতে হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার চাষিরা। ১৯৭৯ সালে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে শহরের শেষ প্রান্তে ১০ দশমিক ৭৫ একর এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় খামারটি। সরকারের লক্ষ্য ছিল এ খামারে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি মাছের রেনু ও পোনা মাছ চাষীদের মধ্যে সরবরাহ, মিশ্র মাছ চাষ প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষের সাথে মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া। সেই লক্ষে হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনের জন্য এখানে ৮ টি পুকুরও খোঁড়া হয়। জেলার মৎস্য চাষীদের অভিযোগ জেলা মৎস্য বিভাগের উদাসিনতার কারনে ১৯৮৭ সাল থেকে রেনু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে সরকারি এই খামারটিতে। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে রেনু সংগ্রহ করে মাছের চাষ করতে হচ্ছে মৎস চাষীদের। এতে তাদের খরচ বেড়ে দিগুণ হচ্ছে। অন্যদিকে নিম্নমানের রেনু হওয়ায় পরার্মশের অভাবে ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে চাষিরা। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় পুকুর রয়েছে ৫ হাজার ১৩৫টি। মাছের বার্ষিক চাহিদা ১২ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন। ২ লক্ষ রেনু পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। নদীতে অবমুক্ত পোনার পরিমান ৫.১৬ মেট্রিক টন। মেহেরপুর শহরের মৎস্য চাষি খামসেদ হোসেন জানান, শহর এলাকায় দুই’শ থেকে আড়াইশ পুকুরে মাছের চাষ হয় কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে চাষিদের কোন খোঁজ খবর নেয় না মৎস্য কর্মকর্তারা। ফলে পরার্মশের অভাবে অনেক সময় লোকসানের মুখে পড়তে হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছের রেনু সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ ও দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। অনেক সময় রেনু রোগাটে হয়ে মারাও যায়। তখন চাষিরা ক্ষতিগুস্থ হয়। সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের মৎস্য চাষি হাফিজুল ইসলামের মতো আরো অনেক চাষি জানান, এক বিঘা পুকুরে ৮ হাজার মনোসেক্স মাছ আবাদ করে মাছ বিক্রি করে পরামর্শের অভাবে লাভবান হচ্ছে না চাষিরা। ফিড কোম্পানি থেকে মাছের বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে মাছের উৎপাদনও বাড়ে না। বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী বিজয় কুমার হালদার জানান, সদর উপজেলার একমাত্র রেণু পোনা উৎপাদনকারী খামারটি বন্ধ থাকার কারণে আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করতে হয়। আর এ জন্য আমাদের ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত টাকা। সময়মতো রেণু পোনা না পাওয়ার কারণে মৎস্য চাষে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। মেহেরপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান মানিক জানান, দীর্ঘদিন ধরে হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। রেনু ও পোনা উৎপাদনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। মেহেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মেছবাউল হক জানান, তৃণমূল পর্যায়ে চাষিদের মাছের রেনু ও পোনা সরবরাহ ব্যহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বললেন, মৎস চাষিরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে ২৮ বছর ধরে মাছের রেনু উৎপাদন বন্ধ

আপলোড টাইম : ১০:৪২:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

Meherpur Fish Farm Photo (5)মেহেরপুর থেকে মেহের আমজাদ: মেহেরপুর সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে মাছের রেণু সরবরাহ করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলা হলেও দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রেনু উৎপাদন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার মৎস্য চাষিরা। সরকারি হ্যাচারি থেকে রেনু পোনা না পাওয়ায় জেলার মৎস চাষীদের অন্য জেলা থেকে পোনা সংগ্রহ করে মৎস চাষ করতে হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার চাষিরা। ১৯৭৯ সালে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে শহরের শেষ প্রান্তে ১০ দশমিক ৭৫ একর এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় খামারটি। সরকারের লক্ষ্য ছিল এ খামারে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি মাছের রেনু ও পোনা মাছ চাষীদের মধ্যে সরবরাহ, মিশ্র মাছ চাষ প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষের সাথে মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া। সেই লক্ষে হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনের জন্য এখানে ৮ টি পুকুরও খোঁড়া হয়। জেলার মৎস্য চাষীদের অভিযোগ জেলা মৎস্য বিভাগের উদাসিনতার কারনে ১৯৮৭ সাল থেকে রেনু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে সরকারি এই খামারটিতে। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে রেনু সংগ্রহ করে মাছের চাষ করতে হচ্ছে মৎস চাষীদের। এতে তাদের খরচ বেড়ে দিগুণ হচ্ছে। অন্যদিকে নিম্নমানের রেনু হওয়ায় পরার্মশের অভাবে ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে চাষিরা। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় পুকুর রয়েছে ৫ হাজার ১৩৫টি। মাছের বার্ষিক চাহিদা ১২ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন। ২ লক্ষ রেনু পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। নদীতে অবমুক্ত পোনার পরিমান ৫.১৬ মেট্রিক টন। মেহেরপুর শহরের মৎস্য চাষি খামসেদ হোসেন জানান, শহর এলাকায় দুই’শ থেকে আড়াইশ পুকুরে মাছের চাষ হয় কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে চাষিদের কোন খোঁজ খবর নেয় না মৎস্য কর্মকর্তারা। ফলে পরার্মশের অভাবে অনেক সময় লোকসানের মুখে পড়তে হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছের রেনু সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ ও দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। অনেক সময় রেনু রোগাটে হয়ে মারাও যায়। তখন চাষিরা ক্ষতিগুস্থ হয়। সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের মৎস্য চাষি হাফিজুল ইসলামের মতো আরো অনেক চাষি জানান, এক বিঘা পুকুরে ৮ হাজার মনোসেক্স মাছ আবাদ করে মাছ বিক্রি করে পরামর্শের অভাবে লাভবান হচ্ছে না চাষিরা। ফিড কোম্পানি থেকে মাছের বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে মাছের উৎপাদনও বাড়ে না। বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী বিজয় কুমার হালদার জানান, সদর উপজেলার একমাত্র রেণু পোনা উৎপাদনকারী খামারটি বন্ধ থাকার কারণে আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করতে হয়। আর এ জন্য আমাদের ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত টাকা। সময়মতো রেণু পোনা না পাওয়ার কারণে মৎস্য চাষে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। মেহেরপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান মানিক জানান, দীর্ঘদিন ধরে হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। রেনু ও পোনা উৎপাদনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। মেহেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মেছবাউল হক জানান, তৃণমূল পর্যায়ে চাষিদের মাছের রেনু ও পোনা সরবরাহ ব্যহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বললেন, মৎস চাষিরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।