ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় পৃথক স্থানে জমি নিয়ে দ্ব ন্দ্ব; আহত ১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদার পৃথকস্থানে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তিনটি ঘটনায় উভয়পক্ষের ১৩জন জখম হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৃথক সময়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পরিবারের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। দামুড়হুদার ছোট দুধপাতিলার ঘটনায় আহতরা হয়েছেন, গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আনছার আলী (৬৫), লোকমান আলী স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৩০), জামিউল ইসলাম (৩০) ও লুবনা (১৪) আহত হয়। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের আবুল কাশেমের ছেলে রফিক উদ্দিন (৬৫), রফিকের স্ত্রী নাসিমা খাতুন (৫৫), রফিকের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (২৫), রফিকের ভাই মোসলেন উদ্দিনসহ (৩০) মোট সাতজন জখম হন। সদর উপজেলার বসু ভাণ্ডারদহের ঘটনায় আহতরা হলেন, হাবিল মল্লিকের দুই ছেলে মেজবার (৫৫) ও মাহাবুলের (৪৫), এবং মেজবানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন (৩৫)। এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে আরো তিনজন জখম হন। তারা হলেন, ইউনিয়নের রংপুর গ্রামের মৃত মকছেদের ছেলে ইন্তাজুল (৬০) এবং তাঁর দুই ছেলে সুজন (১৭), শুভ (১৬)।

জানা গেছে, দামুড়হুদার ছোট দুধপাতিলা গ্রামে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রফিক উদ্দীন ও আনসার আলী দুই পক্ষোর মধ্যে মধ্যে সংঘর্ষে ৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪ বছর আগে ছোট দুধপাতিলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মহিউদ্দিন কাজীর কাছ থেকে তরিকুল ইসলাম তার বাড়ির জমির সঙ্গে ২ কাটা জমি ১০ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। কিন্তু আবুল কাশেমের বড় ছেলে মহিউদ্দিন কাজী তার ভাইদের না জানিয়ে আনছার আলীর ছেলে তরিকুল ইসলামের কাছে জমিটি বিক্রি করেন, যা নিয়ে রফিক উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে মামলা করেন।

এদিকে, গত সোমবার ছোট দুধপাতিলা গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে আনছার আলী, তার ছেলে লোকমান আলী ও জামিরুল ইসলাম রেলওয়ে জমির দুটি চটকা গাছ কাটছিলেন। এ গাছ কাটার অভিযোগে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ বিষয়টি বন বিভাগকে জানায় এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছটি রেলওয়ের জমিতে অবস্থিত বলে নিশ্চিত হন। এর পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয় আনছার আলী ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আনছার আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা রফিক উদ্দিনকে ধরে নিয়ে কাঠের বাটাম দিয়ে মারপিট করে আহত করেন। এরপর গতকাল বিকেল ৫টার দিকে আনছার আলী, লোকমান আলীসহ ২৫/৩০ জনের একটি দল রফিক উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা পরিবারের সদস্যদের মারপিট ও কুপিয়ে জখম করে। এছাড়া, বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ ঘটনায় সেলিনা খাতুন জানান, আনছার আলীর বাড়ি থেকে হামলাকারীরা নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৬ ভরি স্বর্ণাংকার লুট করে নিয়ে গেছে। এছাড়া তাদের বাড়িতে হামলা করে একটি মোটর সাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, সেলাই মেশিন, ৫টি সিলিং ফ্যান, ড্রেসিং টেবিল, সোকেস, গোয়ল ঘর, রান্না ঘর, ঘরের ধান ও চালের ড্রাম, হাড়ি-কুড়ি খাবার, পিয়াজ, আসবারপত্রও গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, সদর উপজেলার বসু ভাণ্ডারদহে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গতকাল সকালে হাবিল মল্লিকের দুই ছেলে মেজবার ও মাহাবুল মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে মেজবান ও মাহাবুলসহ দুই পরিবারের তিনজন আহত হন।

অপরদিকে, খাদিমপুর ইউনিয়নে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে একই পরিবারের তিনজন জখম হন। পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

দামুড়হুদার জমি নিয়ে দ্বন্দের ঘটনা সম্পর্কে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ তদন্ত টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে থানায় কোনো অভিযাগে হয়নি। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানূগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘দুই ভাইয়ের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দের জেরে এ মারামারির ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষই আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে এবং থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দুটি এজাহার ভুক্ত করাসহ আইনানূগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটার দিকে দামুড়হুদায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই পক্ষের ছয়জন জখম অবস্থায় জরুরি বিভাগে আসেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। অপর তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় পৃথক স্থানে জমি নিয়ে দ্ব ন্দ্ব; আহত ১৩

আপলোড টাইম : ০৮:৪৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদার পৃথকস্থানে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তিনটি ঘটনায় উভয়পক্ষের ১৩জন জখম হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৃথক সময়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পরিবারের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। দামুড়হুদার ছোট দুধপাতিলার ঘটনায় আহতরা হয়েছেন, গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আনছার আলী (৬৫), লোকমান আলী স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৩০), জামিউল ইসলাম (৩০) ও লুবনা (১৪) আহত হয়। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের আবুল কাশেমের ছেলে রফিক উদ্দিন (৬৫), রফিকের স্ত্রী নাসিমা খাতুন (৫৫), রফিকের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (২৫), রফিকের ভাই মোসলেন উদ্দিনসহ (৩০) মোট সাতজন জখম হন। সদর উপজেলার বসু ভাণ্ডারদহের ঘটনায় আহতরা হলেন, হাবিল মল্লিকের দুই ছেলে মেজবার (৫৫) ও মাহাবুলের (৪৫), এবং মেজবানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন (৩৫)। এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে আরো তিনজন জখম হন। তারা হলেন, ইউনিয়নের রংপুর গ্রামের মৃত মকছেদের ছেলে ইন্তাজুল (৬০) এবং তাঁর দুই ছেলে সুজন (১৭), শুভ (১৬)।

জানা গেছে, দামুড়হুদার ছোট দুধপাতিলা গ্রামে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রফিক উদ্দীন ও আনসার আলী দুই পক্ষোর মধ্যে মধ্যে সংঘর্ষে ৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪ বছর আগে ছোট দুধপাতিলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মহিউদ্দিন কাজীর কাছ থেকে তরিকুল ইসলাম তার বাড়ির জমির সঙ্গে ২ কাটা জমি ১০ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। কিন্তু আবুল কাশেমের বড় ছেলে মহিউদ্দিন কাজী তার ভাইদের না জানিয়ে আনছার আলীর ছেলে তরিকুল ইসলামের কাছে জমিটি বিক্রি করেন, যা নিয়ে রফিক উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে মামলা করেন।

এদিকে, গত সোমবার ছোট দুধপাতিলা গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে আনছার আলী, তার ছেলে লোকমান আলী ও জামিরুল ইসলাম রেলওয়ে জমির দুটি চটকা গাছ কাটছিলেন। এ গাছ কাটার অভিযোগে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ বিষয়টি বন বিভাগকে জানায় এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছটি রেলওয়ের জমিতে অবস্থিত বলে নিশ্চিত হন। এর পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয় আনছার আলী ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আনছার আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা রফিক উদ্দিনকে ধরে নিয়ে কাঠের বাটাম দিয়ে মারপিট করে আহত করেন। এরপর গতকাল বিকেল ৫টার দিকে আনছার আলী, লোকমান আলীসহ ২৫/৩০ জনের একটি দল রফিক উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা পরিবারের সদস্যদের মারপিট ও কুপিয়ে জখম করে। এছাড়া, বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ ঘটনায় সেলিনা খাতুন জানান, আনছার আলীর বাড়ি থেকে হামলাকারীরা নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৬ ভরি স্বর্ণাংকার লুট করে নিয়ে গেছে। এছাড়া তাদের বাড়িতে হামলা করে একটি মোটর সাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, সেলাই মেশিন, ৫টি সিলিং ফ্যান, ড্রেসিং টেবিল, সোকেস, গোয়ল ঘর, রান্না ঘর, ঘরের ধান ও চালের ড্রাম, হাড়ি-কুড়ি খাবার, পিয়াজ, আসবারপত্রও গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, সদর উপজেলার বসু ভাণ্ডারদহে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গতকাল সকালে হাবিল মল্লিকের দুই ছেলে মেজবার ও মাহাবুল মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে মেজবান ও মাহাবুলসহ দুই পরিবারের তিনজন আহত হন।

অপরদিকে, খাদিমপুর ইউনিয়নে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে একই পরিবারের তিনজন জখম হন। পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

দামুড়হুদার জমি নিয়ে দ্বন্দের ঘটনা সম্পর্কে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ তদন্ত টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে থানায় কোনো অভিযাগে হয়নি। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানূগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘দুই ভাইয়ের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দের জেরে এ মারামারির ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষই আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে এবং থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দুটি এজাহার ভুক্ত করাসহ আইনানূগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটার দিকে দামুড়হুদায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই পক্ষের ছয়জন জখম অবস্থায় জরুরি বিভাগে আসেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। অপর তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।’