চুয়াডাঙ্গায় বাবার বিরুদ্ধে নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ, এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ
- আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
- / ৬৫ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জাফরপুরে বাবার বিরুদ্ধে নিজের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘটনাটি নিয়ে পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযুক্তের বাড়ি ঘেরাও করে এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা ভুক্তভোগী কিশোরীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় এবং অভিযুক্ত বাবাকে হেফাজতে নেয়। পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগীর বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত পিতা জাফরপুর পাওয়ার হাউজপাড়ার সাবেক সেনা সদস্য ফকির মোহাম্মদের ছেলে এনামুল হক জনি (৪৫)।
এদিকে, গতকাল রাতে ভুক্তভোগী নাবালিকার মামা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ঘটনাটিকে ‘ধর্ষণ চেষ্টা’ বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে দিনব্যাপী আলোচনা থাকা ঘটনাটি সম্পর্কে স্থানীয়রা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নিজ মেয়েকে কয়েক মাস ধরে ধর্ষণসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রিনা খাতুন বলেন, ‘অভিযুক্ত এনামুল হক গত ডিসেম্বর মাস থেকে তার নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছিল। বিষয়টি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং ঘটনাটি যেন প্রকাশ না পায়, সে জন্য ভুক্তভোগীকে ভয়-ভীতি দেখানো হতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীর এক সহপাঠী বলেন, ‘আমার বান্ধবী কয়েকদিন ধরেই খুব চুপচাপ ছিল। দুই দিন আগে সে আমাকে জানায়, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে তার ওপর অত্যাচার করছে। আমি শুনে হতবাক হয়ে যাই। আজ (সোমবার) সকালে প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওর সঙ্গে দেখা হলে সে আবারও বিষয়টি জানায়। আমি আর চুপ থাকতে পারিনি, এলাকার কয়েকজনকে জানাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এমন নির্মমতা সহ্য করব না। নিজের মেয়ের সঙ্গে যে এমন আচরণ করতে পারে, সে সমাজের জন্য বিপজ্জনক। আমরা চাই দ্রুত তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’ গতকাল রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সদর থানা পুলিশের কর্তকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অভিযুক্তকে হেফাজতে নেয় এবং এলাকাবাসীকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হোসেন আলী বলেন, ‘মেয়েটি ওই লোকের আপন মেয়ে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এলাকাজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সন্ধ্যার দিকে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তের বাড়ি ঘেরাও করে এবং তার কঠোর শাস্তির দাবি জানায়। বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে ওই অভিযুক্তকে হেফাজতে নিই।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) রিপন কুমার দাশ বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মামা থানায় একটি ধর্ষণ চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।’ তিনি আরোও বলেন, ‘অভিযোটি তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের মহিলা পুলিশ সদস্য ভুক্তভোগীর থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। পরবর্তী আইনানূগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নারী পুলিশ সদস্য ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছে। সে যে বয়ান দেবে, তার ভিত্তিতেই মামলা গ্রহণ ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ওসি খালেদুর রহমান আরও জানিয়েছেন, ‘নির্যাতনের শিকার নাবালিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার মানসিক অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
এ ঘটনা সম্পর্কে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. মারুফ সরোয়ার বাবু বলেন, ‘যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে অভিযুক্ত পিতার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হতে পারে।’ তিনি সমাজের প্রত্যেককে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে কোনো শিশু নির্যাতনের শিকার হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযোগটি এজাহারভুক্ত হয়নি এবং ভুক্তভোগীর বক্তব্য গ্রহণসহ তা পর্যালোচনায় কাজ করছিলো পুলিশ।