জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব গুতেরেসের ঢাকা সফর; মাইলফলক হয়ে থাকুক
- আপলোড টাইম : ০৩:১০:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
- / ৫৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ সফর দুটো কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী গণতন্ত্রে উত্তরণে আমূল সংস্কারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে দেশে। এর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কটে গভীর আবর্তে আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি, যার সমাধান সূত্র দরকার। হাসিনা সরকারের ভুলনীতিতে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি ও কার্যকর সংযুক্তি ঘটাতে পারলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান গতি পেতে পারে। গুতেরেসের সফর বাংলাদেশের সংস্কারকার্যক্রম এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় ইতিবাচক গতি পাবে, এমন আশা আমাদের সবার। স্বাধীনতার পর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক বাঁকে হাজির। মহাসুযোগ এসেছে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ গড়ে তোলায়। সে লক্ষ্যে ড. ইউনূস সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গঠিত হয়েছে ঐকমত্য কমিশন। গুতেরেস কমিশনের সাথে বৈঠক করে সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানবেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে জাতিসঙ্ঘ কিভাবে সাহায্য জোগাতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে। মিয়ানমার থেকে উৎখাত হয়ে বিপুল রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসাকে হাসিনা ব্যক্তিগত সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চেয়েছেন। একে তিনি দেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখেননি। তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। এ অবসরে বাংলাদেশের শত্রুরা ফায়দা তুলেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের কাজটি মোটেও এগোয়নি। ভাসানচরে তাদের পুনর্বাসনের মতো হঠকারী উদ্যোগ প্রত্যাবাসনকে আরো জটিলতায় ফেলেছে। গত কয়েক বছর থেকে তাদের জন্য বৈদেশিক সাহায্য কমতে শুরু করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর আমেরিকার উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসআইডি) তহবিল স্থগিতের পর পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ কোথা থেকে হবে তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন। মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ সময় রমজানে সফরটি করছেন তিনি। ড. ইউনূসের সাথে মিলে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে ইফতার করেছেন। এ ধরনের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে। বরাদ্দ সঙ্কুচিত হওয়ায় রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু খাবারের খরচ অর্ধেকের চেয়ে বেশি কমেছে। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বাংলাদেশের জন্য বিশাল বোঝা হচ্ছে। আশা করা যায়, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে।
ইতোমধ্যে রাখাইনে গুরুতর মানবিক পতন হয়েছে। সেখানকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে মানবিক সহায়তায় একটি করিডোর খোলা যায় কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ওই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ খাদ্য ও ওষুধ পাচ্ছেন না।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের এ সফরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশ্বসম্প্রদায়ের মনোযোগের কেন্দ্রে আসবে বলে আশা করা যায়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনায় ইস্যুগুলো গুরুত্ব পাবে। রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বাড়ানো এ সঙ্কটের টেকসই সমাধানে অগ্রগতি হবে।