চুয়াডাঙ্গায় মৃদু তাপদাহ, প্রখর রোদের তাপে জনজীবন বিপর্যস্ত
রোজাদারদের কষ্ট চরমে, শ্রমজীবীদের কমেছে আয়
গরমে রোজাদারদের বিশেষ পরামর্শ দিলেন ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন
- আপলোড টাইম : ১০:১৯:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
- / ১৪ বার পড়া হয়েছে
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপদাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ২৬ শতাংশ। চলতি মৌসুমে এটিই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। একইসঙ্গে গতকাল সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র বলছে, মার্চের শুরু থেকেই জেলার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে দিনের বেলায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলেও রাতে ঠাণ্ডার অনুভূতি ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে দিন ও রাতের উভয় সময়েই গরমের দাপট বাড়ছে।
এদিকে, প্রচণ্ড রোদের কারণে চুয়াডাঙ্গা শহরসহ গ্রামাঞ্চলেও গরমের তীব্রতা বাড়ছে। দিনভর রোদে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ ও রোজাদাররা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা আলমগীর হাসান বলেন, ‘এই প্রচণ্ড গরমে বাইরে বের হলেই শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণা পাচ্ছে, কিন্তু রোজা থাকায় পানি বা শরবত খেতে পারছি না। বাজার করতে এসে মনে হচ্ছে, শরীর যেন রোদের তাপে পুড়ে যাচ্ছে।’
জীবননগর উপজেলা শহরের ইজিবাইক চালক আমির হোসেন বলেন, ‘সকালের দিকে কিছু যাত্রী পেলেও দুপুরের দিকে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। কড়া রোদের কারণে মানুষ বাইরে বের হতে চায় না। ফলে আমাদের আয় কমে যাচ্ছে। দিনে ৮০০-৯০০ টাকা আয় হতো, এখন সেটা ৫০০ টাকার নিচে নেমে গেছে।’
অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে স্বস্তির খোঁজে অনেকেই নানা উপায় অবলম্বন করছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক ডিপ টিউবওয়েলের পানিতে গোসল করছেন অনেকে। কেউ কেউ গরম থেকে মুক্তি পেতে মাথায় পানি ঢালছেন বা ভিজে গামছা ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে, চলমান তাপদাহের মধ্যে রোজাদারদের শারীরিক ঝুঁকি বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমে পানিশূন্যতা, লবণ-শূন্যতা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘তীব্র গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়, এতে লবণ ও পানি দুটোর ঘাটতি দেখা দেয়। রোজাদারদের ক্ষেত্রে এটি আরও বিপজ্জনক হতে পারে। তাই সেহরি ও ইফতারে প্রচুর পানি পান করা জরুরি। পাশাপাশি শরবত, ডাবের পানি ও লবণযুক্ত পানীয় গ্রহণ করলে শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোজাদারদের উচিত সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা, হালকা সুতি কাপড় পরা এবং বেশি ঘামের কারণে শরীরের পানিশূন্যতা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা পালন করবেন।’ তিনি পরামর্শ দেন, যদি কোনো রোজাদারের মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, বমি বমি ভাব বা প্রস্রাব কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়, তাহলে দ্রুত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে ইফতারের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ের হোটেল ব্যবসায়ী মিঠুন হোসেন বলেন, ‘রমজানের কারণে এমনিতেই দিনের বেলায় শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার ওপর এই অসহনীয় গরম! দোকানে ফ্যান চালিয়েও ঠিকভাবে থাকা যাচ্ছে না।’ আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকায় গরমের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ‘তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন এরকমই থাকবে। দিনের বেলা রোদে না বের হওয়া, ছাতা ব্যবহার করা ও প্রচুর পানি পান করা উচিত। বিশেষ করে রোজাদারদের উচিত ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকা এবং প্রয়োজনে শরীর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করা।’