ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের গণহত্যা

হাসিনাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা

সমীকরণ প্রতিবেদন:
  • আপলোড টাইম : ০২:২১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

প্রায় এক যুগ আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ সারা দেশে হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। ৯ আসামির মধ্যে চারজন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। তাদের হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি ৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১২ মে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। যে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা হলেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার থাকা চার আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে গতকাল শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ প্রমুখ। শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের অভিযানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের সম্পৃক্ততা ছিল বলে দাবি করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সাংবাদিকদের তিনি জানান, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গণজাগরণ মঞ্চ শুধু অভিযানের পটভূমি তৈরিতেই নয়, বরং সরাসরি সহিংসতায়ও জড়িত ছিল। তদুপরি, ইমরান এইচ সরকার সে সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অভিযানের পরিকল্পনায় অংশ নেন। এসব কারণেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে এবং আদালতে তা উপস্থাপন করা হয়েছে।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, শাপলা চত্বরে হামলাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তবে তদন্ত শেষে তা প্রকাশ করা হবে। এ ঘটনায় দায়ী শীর্ষ পরিকল্পনাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করাই প্রধান লক্ষ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাইয়ে সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনা গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করে এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সময়ে গুমের অভিযোগেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে ট্রাইব্যুনালে। ইতোমধ্যে গণহত্যা ও গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানালেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি।

হত্যা, গণহত্যার বিভিন্ন অভিযোগের পাশাপাশি শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ জমা পড়ে গত অগাস্টে। হাসিনা ছাড়াও ট্রাইব্যুনালের বিতর্কিত সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, বিতর্কিত লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় সেখানে। বিতর্কিত ‘নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির’ বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম। বিতর্কিত ‘শাহবাগ’ আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশে সারাদেশ থেকে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। সেই সমাবেশে রাতের আধারে গণহত্যা চালায় হাসিনা সরকার। শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১। বাস্তবে সেখানে অসংখ্যা মানুষ মারা হয়েছে; গণহত্যা চালানো হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের গণহত্যা

হাসিনাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা

আপলোড টাইম : ০২:২১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

প্রায় এক যুগ আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ সারা দেশে হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। ৯ আসামির মধ্যে চারজন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। তাদের হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি ৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১২ মে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। যে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা হলেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার থাকা চার আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে গতকাল শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ প্রমুখ। শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের অভিযানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের সম্পৃক্ততা ছিল বলে দাবি করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সাংবাদিকদের তিনি জানান, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গণজাগরণ মঞ্চ শুধু অভিযানের পটভূমি তৈরিতেই নয়, বরং সরাসরি সহিংসতায়ও জড়িত ছিল। তদুপরি, ইমরান এইচ সরকার সে সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অভিযানের পরিকল্পনায় অংশ নেন। এসব কারণেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে এবং আদালতে তা উপস্থাপন করা হয়েছে।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, শাপলা চত্বরে হামলাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তবে তদন্ত শেষে তা প্রকাশ করা হবে। এ ঘটনায় দায়ী শীর্ষ পরিকল্পনাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করাই প্রধান লক্ষ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাইয়ে সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনা গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করে এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সময়ে গুমের অভিযোগেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে ট্রাইব্যুনালে। ইতোমধ্যে গণহত্যা ও গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানালেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি।

হত্যা, গণহত্যার বিভিন্ন অভিযোগের পাশাপাশি শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ জমা পড়ে গত অগাস্টে। হাসিনা ছাড়াও ট্রাইব্যুনালের বিতর্কিত সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, বিতর্কিত লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় সেখানে। বিতর্কিত ‘নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির’ বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম। বিতর্কিত ‘শাহবাগ’ আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশে সারাদেশ থেকে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। সেই সমাবেশে রাতের আধারে গণহত্যা চালায় হাসিনা সরকার। শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১। বাস্তবে সেখানে অসংখ্যা মানুষ মারা হয়েছে; গণহত্যা চালানো হয়েছে।