ইপেপার । আজ শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

জনভোগান্তির আরেক নাম ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেন প্রকল্প

৪ বছরেও শেষ হয়নি জমি অধিগ্রহণ, অগ্রগতি ৫ শতাংশ

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ১২:২০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • / ৫৭ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ-যশোর ৬ লেন প্রকল্প এখন দক্ষিণবঙ্গের মানুষের গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চার বছরেও জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জমি বুঝে পায়নি। এতে ওই সড়কে চলাচল করতে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্রিজ, ওভার ব্রিজ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতি থাকায় ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। ফলে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেন উন্নীতকরণ কাজ যথাসময়ে শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ৬ লেন রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ বাইপাস সড়কের আল হেরা স্কুল মোড়ে ওভার ব্রিজের কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজে কোনো গতি নেই। পাইলিং, লোড টেস্ট ও কিছু কালভার্ট তৈরির পর তা পড়ে আছে। সবমিলিয়ে কাজে অগ্রগতির হার মাত্র ৫ শতাংশ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ ঝিনাইদহ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১-এর আওতায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার ৬ লেন রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) অনুমোদন দেয়া হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আগামী ২০২৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের যে হালহকিকত, তাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী, চুটলিয়া ও ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকায় পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে ওভার ব্রিজের জন্য গার্ডার। চুটলিয়া মোড়ে লোড টেস্ট শেষ করা হয়েছে। তবে সড়ক তৈরির জন্য জমি এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ঝিনাইদহ ও যশোর জেলায় মোট ৩০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস থেকে যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার। সড়কে থাকবে একটি ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫টি কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস। এছাড়াও প্রকল্প করিডোরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তর করার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ডিজাইন করার কথা রয়েছে।
উইকেয়ার ফেজ-১ এর ঝিনাইদহ অংশের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মিলন আলী বলেন, জমি অধিগ্রহণ এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই কাজটি করতে সরকারের ছয়টি বিভাগ কাজ করছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জমি অধিগ্রহণ এখন চূড়ান্ত ধাপে। দ্রুত টাকা পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকল্প কর্মকর্তার অফিস থেকে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে টাকা পরিশোধ করা হলেও বৈদ্যুতিক পোল এখনো সরাতে পারেনি। ফলে কাজের অগ্রগতি থেমে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার (এলএও) প্রধান সহকারী আলাউদ্দীন জানান, সরকারের সব বিভাগ তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি করেছিল। গণপূর্ত বিভাগ সড়কের দুই পাশের স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের হিসাব জমা দিয়েছে। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় ৯০% ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়খালী বাজারের চাল ব্যবসায়ী খোকন হোসেন জানান, ৬ লেন রাস্তার কারণে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়খালী, তেঁতুলতলা, চুটলিয়া, দোকানঘর ও খয়েরতলা নামক স্থান দিয়ে যশোরগামী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল জানান, জমি অধিগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। অনেক সরকারি সংস্থা এর সাথে জড়িত থাকার কারণে প্রতিবেদন পেতে দেরি হয়েছে। তিনি জানান, দ্রুতই ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ প্রদান করা হবে। তিনি আরও জানান, ৬ লেন প্রকল্প চালু হলে ঝিনাইদহসহ মোংলা বন্দরের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জনভোগান্তির আরেক নাম ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেন প্রকল্প

৪ বছরেও শেষ হয়নি জমি অধিগ্রহণ, অগ্রগতি ৫ শতাংশ

আপলোড টাইম : ১২:২০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

ঝিনাইদহ-যশোর ৬ লেন প্রকল্প এখন দক্ষিণবঙ্গের মানুষের গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চার বছরেও জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জমি বুঝে পায়নি। এতে ওই সড়কে চলাচল করতে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্রিজ, ওভার ব্রিজ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতি থাকায় ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। ফলে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেন উন্নীতকরণ কাজ যথাসময়ে শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ৬ লেন রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ বাইপাস সড়কের আল হেরা স্কুল মোড়ে ওভার ব্রিজের কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজে কোনো গতি নেই। পাইলিং, লোড টেস্ট ও কিছু কালভার্ট তৈরির পর তা পড়ে আছে। সবমিলিয়ে কাজে অগ্রগতির হার মাত্র ৫ শতাংশ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ ঝিনাইদহ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১-এর আওতায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার ৬ লেন রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) অনুমোদন দেয়া হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আগামী ২০২৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের যে হালহকিকত, তাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী, চুটলিয়া ও ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকায় পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে ওভার ব্রিজের জন্য গার্ডার। চুটলিয়া মোড়ে লোড টেস্ট শেষ করা হয়েছে। তবে সড়ক তৈরির জন্য জমি এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ঝিনাইদহ ও যশোর জেলায় মোট ৩০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস থেকে যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার। সড়কে থাকবে একটি ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫টি কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস। এছাড়াও প্রকল্প করিডোরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তর করার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ডিজাইন করার কথা রয়েছে।
উইকেয়ার ফেজ-১ এর ঝিনাইদহ অংশের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মিলন আলী বলেন, জমি অধিগ্রহণ এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই কাজটি করতে সরকারের ছয়টি বিভাগ কাজ করছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জমি অধিগ্রহণ এখন চূড়ান্ত ধাপে। দ্রুত টাকা পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকল্প কর্মকর্তার অফিস থেকে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে টাকা পরিশোধ করা হলেও বৈদ্যুতিক পোল এখনো সরাতে পারেনি। ফলে কাজের অগ্রগতি থেমে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার (এলএও) প্রধান সহকারী আলাউদ্দীন জানান, সরকারের সব বিভাগ তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি করেছিল। গণপূর্ত বিভাগ সড়কের দুই পাশের স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের হিসাব জমা দিয়েছে। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় ৯০% ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়খালী বাজারের চাল ব্যবসায়ী খোকন হোসেন জানান, ৬ লেন রাস্তার কারণে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়খালী, তেঁতুলতলা, চুটলিয়া, দোকানঘর ও খয়েরতলা নামক স্থান দিয়ে যশোরগামী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল জানান, জমি অধিগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। অনেক সরকারি সংস্থা এর সাথে জড়িত থাকার কারণে প্রতিবেদন পেতে দেরি হয়েছে। তিনি জানান, দ্রুতই ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ প্রদান করা হবে। তিনি আরও জানান, ৬ লেন প্রকল্প চালু হলে ঝিনাইদহসহ মোংলা বন্দরের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে।