ইপেপার । আজ শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

জীবননগরের ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা চলছে প্রশাসক দিয়ে

নাগরিক সেবা পেতে বিড়ম্বনায় সাধারণ জনগণ

জীবননগর অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১২:১৯:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • / ৩৮ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নবাসীর। এসব ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগপন্থি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। হামলা ও মামলার ভয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গা-ঢাকা দিয়েছেন তারা। পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা ওয়ারিশ সনদ, জন্ম ও মৃত্যুসনদসহ সংশোধিত জন্মনিবন্ধন পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চেয়ারম্যানদের পরিবর্তে ইউনিয়নগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও সঠিক সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ জনগণ। যার ফলে সেবাদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে জীবননগরের বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদে।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার কিছু দিন পর জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারমানেরা দায়িত্ব পালনে সমস্যায় পড়েন। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ও হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান দ্বারা পরিচালিত হচ্চে। বাকি ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরিবর্তে তাদের কক্ষ প্রশাসকের নাম থাকলেও চেয়ার ফাঁকা। কেউ নিজের অফিস শেষে সময় পেলে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন অথবা সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ইউনিয়নে অফিস করেন। যার ফলে সাধারণ জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমার ছেলের জন্য একটা নাগরিক সনদপত্র দরকার ছিল। সেটা আমি দুই দিন পর পেয়েছি। পরিষদে গিয়ে দেখি যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনি ইউনিয়ন পরিষদে নেই। পরিষদেও অন্য কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশাসক অফিস করেন সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন। একজন ব্যক্তির যদি দুটি দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তার পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। যার ফলে আমরা পরিষদের সেবা পেলেও যখন প্রয়োজন, তখন পাচ্ছি না।’

রায়পুর ইউনিয়নের বাড়ান্দি গ্রামের রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আওয়ামীপন্থি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নানা অপকর্ম করেছে। এখন তারা জনরোষে পড়ার ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে আমাদের। একটা নাগরিক সনদপত্র নিতে যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তার আর শেষ নেই। প্রশাসনের কাছে দাবি, জনগণের সেবা নিশ্চিতে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। সাধারণ জনগণের সেবা নিশ্চিতকরণে এ ইউনিয়নগুলোতে প্রশাসক নিয়োগে দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জীবননগরের ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা চলছে প্রশাসক দিয়ে

নাগরিক সেবা পেতে বিড়ম্বনায় সাধারণ জনগণ

আপলোড টাইম : ১২:১৯:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নবাসীর। এসব ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগপন্থি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। হামলা ও মামলার ভয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গা-ঢাকা দিয়েছেন তারা। পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা ওয়ারিশ সনদ, জন্ম ও মৃত্যুসনদসহ সংশোধিত জন্মনিবন্ধন পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চেয়ারম্যানদের পরিবর্তে ইউনিয়নগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও সঠিক সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ জনগণ। যার ফলে সেবাদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে জীবননগরের বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদে।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার কিছু দিন পর জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারমানেরা দায়িত্ব পালনে সমস্যায় পড়েন। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ও হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান দ্বারা পরিচালিত হচ্চে। বাকি ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরিবর্তে তাদের কক্ষ প্রশাসকের নাম থাকলেও চেয়ার ফাঁকা। কেউ নিজের অফিস শেষে সময় পেলে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন অথবা সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ইউনিয়নে অফিস করেন। যার ফলে সাধারণ জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমার ছেলের জন্য একটা নাগরিক সনদপত্র দরকার ছিল। সেটা আমি দুই দিন পর পেয়েছি। পরিষদে গিয়ে দেখি যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনি ইউনিয়ন পরিষদে নেই। পরিষদেও অন্য কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশাসক অফিস করেন সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন। একজন ব্যক্তির যদি দুটি দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তার পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। যার ফলে আমরা পরিষদের সেবা পেলেও যখন প্রয়োজন, তখন পাচ্ছি না।’

রায়পুর ইউনিয়নের বাড়ান্দি গ্রামের রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আওয়ামীপন্থি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নানা অপকর্ম করেছে। এখন তারা জনরোষে পড়ার ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে আমাদের। একটা নাগরিক সনদপত্র নিতে যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তার আর শেষ নেই। প্রশাসনের কাছে দাবি, জনগণের সেবা নিশ্চিতে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। সাধারণ জনগণের সেবা নিশ্চিতকরণে এ ইউনিয়নগুলোতে প্রশাসক নিয়োগে দেওয়া হয়েছে।