৭ দফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটা মালিক সমিতির বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন
২ ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধে দীর্ঘ যানজট, চরম ভোগান্তি
- আপলোড টাইম : ১২:১৫:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
- / ১৩ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গায় ৭ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি দুই ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ফলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর হয়ে ওঠে উত্তাল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাক্টর ও ট্রাকযোগে শত শত ইটভাটার শ্রমিক ও মালিকগণ চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে সমবেত হতে থাকেন। এরপর দুপুর ১২টায় শ্রমিক ও মালিকদের সমন্বয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের শহীদ হাসান চত্বর মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এসময় চুয়াডাঙ্গা শহরের চারদিক থেকে আসা সংযোগ সড়কে যানবাহন ও সাধারণ পথচারীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে। পুরো শহর কার্যত ঘণ্টাব্যাপী যানজটের কবলে পড়ে। এরপর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদুর রহমানসহ ট্রাফিক পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকদের বুঝিয়ে যানজট নিরসন করা হয়। এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে রওনা দেয়। মিছিলটি চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ে পৌঁছালে আরেক দফা মালিক শ্রমিকরা অবস্থান ধর্মঘটের অংশ হিসেবে সড়কের ওপরে অবস্থান নেয়। সড়কে আবারও তৈরি হয় যানজট। এ দফায়ও মালিক শ্রমিকদের বুঝিয়ে সদর থানা ও ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসন করতে সক্ষম হন।
পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে প্রবেশ করেন। একই সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে শত শত ইটভাটা শ্রমিকরা ঢুকে পড়লে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জসমুদ্রে পরিণত হয়। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ক্লপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়া হয় তালা। এসময় শ্রমিক ও মালিকদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কার্যালয় চত্বর। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক নেতারা তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগানসহ ঝাঁঝালো বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাজা নাসির উদ্দিন শান্তি, চুয়াডাঙ্গা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মোতালেব, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আকুল ও কোষাধ্যক্ষ আবেদুদ্দোজা কেবল। এছাড়া শ্রমিক প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য দেন রায়হান উদ্দিন, জাকির হোসেন ও অর্ণি আক্তার। বিক্ষোভ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির নির্বাহী সদস্য হায়দার আলী ও আবুল হোসেন। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আলফাজ উদ্দিন লিটন ও মেহেদী খান।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বরাবর ৭ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আপনাদের যৌক্তিক দাবির বিষয়ে আমার পজিটিভ অবস্থান রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব, প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আমি আপনাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিটি পাঠিয়ে দেব।’
ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির ৭ দফা দাবিগুলো হলো- ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের জিগজাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও উক্ত আইনের ৮(৩)(ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় “দূরত্ব নির্দিষ্ট” করণের কারণে দেশের কিছু জিগজাগ ইটভাটার মালিকগণ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলন এবং ট্যানেল কিলন-এর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১০০০ মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারণ করেছে। সুতরাং আমাদের জিগজ্যাগ ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮ (৩) (ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দূরত্ব ৭০০ মিটার করে লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারীর মাধ্যমে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি। জিগজাগ ইটভাটায় কোনো প্রকার হয়রানি বা মোবাইল কোর্ট করা যাবে না, তা না হলে আমরা ভ্যাট টেক্স দেয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো। কোনো ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে বন্ধ করতে হবে।
মাটি কাটার জন্য ডিসির প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বিধান বাতিল করতে হবে। পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডিসি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি ইস্যু/নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলকভাবে জমা দেয়ার বিধান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া, ইটভাটাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার দাবি ও ইটভাটা পরিচালনায় দীর্ঘ মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘দাবিসমূহ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে আলোচনায় না বসলে ঈদের পরে ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বরাবর পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান করার সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।’