ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে জটিলতা কাটছেই না

এবার এডহক কমিটির সিদ্ধান্তকে বিধি বহির্ভূত বলল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১২:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া নিয়ে নানা ঘটনা যেন থামছেই না। শিক্ষকদের আন্দোলনের পরও দাবি না মেনে পৌর কলেজের এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত উল্লেখ করে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে নাম পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজে এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পত্র এসেছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়েছে, ‘পৌর কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক শামীমা সুলতানা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি না হওয়ায় শামীমা সুলতানার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। এমতাবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ৪ এর উপধারা ২(র) ও (রর) ধারা মোতাবেক অত্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীমা সুলতানা-এর পরিবর্তে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম ০৫ (পাঁচ) জন শিক্ষকের মধ্যে হতে যেকোনো ০১ (একজন) শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে আগামী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত রেজ্যুলেশন, এমপিও শীটের কপি, দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত পত্র, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানপত্র ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ অধিভুক্তি নবায়নের কপিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

কলেজ সূত্র বলছে, অধ্যক্ষের অবসরজনিত শূন্যতা পূরণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ (এডহক কমিটি) সভা করে। গভর্নিং বডির সেই সভায় চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে বিষয়টির তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায় কলেজটির শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সিংহভাগ অংশ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দেয়।

আন্দোলনকারীরা শিক্ষকরা দাবি করেন, ‘নীতিমালা বহির্ভূতভাবে কলেজের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার ও যোগ্য শিক্ষককে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যহত থাকবে। শেষ পর্যন্ত সমাধান না হলে ওই শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট করেন বলেও জানা গেছে।’ তাদের দাবি ছিল, মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি এবং নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক নাজনীন আরা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হোক।’ তবে তাদের দাবি না মেনে এডহক কমিটি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ে পত্র পাঠায়। তবে শেষ পর্যন্ত এডহক কমিটির সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত বলে উল্লেখ করলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান স্যার আমাদের কারো কথা শোনেননি। আমরা আগেই বলেছিলাম, কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি নয়। তবে তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। আমাদের ‍যুক্তিকে তারা আবার আরেক যুক্তি দেখিয়েছিলেন। এখন কিন্তু আমাদের ভালোই লাগছে, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সিদ্দিকুর রহমান স্যারের বিশ্লেষণ ও জানায় ঘাটতি ছিল, তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে প্রমাণ পেল।’

আরেকজন শিক্ষক বলেন, ‘জেলা প্রশাসক একবার যদি আমাদের কথা শুনে বিবেচনা করতেন, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতেন, তাহলে এই জটিলতা হতো না। এমনিতেই ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত ১৭ দিন ধরে কলেজ বন্ধ ছিল। তবুও জেলা প্রশাসক নিজের জায়গায় অনড় ছিলেন। তিনি এবং সিদ্দিক স্যার সবকিছুই জানেন। তাহলে এখন এমন হলো কেন?’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো পত্রের বিষয়ে আমি এখনো জানি না। তবে যদি এ ধরনের পত্র এসে থাকে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে জটিলতা কাটছেই না

এবার এডহক কমিটির সিদ্ধান্তকে বিধি বহির্ভূত বলল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

আপলোড টাইম : ১২:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া নিয়ে নানা ঘটনা যেন থামছেই না। শিক্ষকদের আন্দোলনের পরও দাবি না মেনে পৌর কলেজের এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত উল্লেখ করে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে নাম পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজে এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পত্র এসেছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়েছে, ‘পৌর কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক শামীমা সুলতানা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি না হওয়ায় শামীমা সুলতানার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। এমতাবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ৪ এর উপধারা ২(র) ও (রর) ধারা মোতাবেক অত্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীমা সুলতানা-এর পরিবর্তে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম ০৫ (পাঁচ) জন শিক্ষকের মধ্যে হতে যেকোনো ০১ (একজন) শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে আগামী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত রেজ্যুলেশন, এমপিও শীটের কপি, দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত পত্র, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানপত্র ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ অধিভুক্তি নবায়নের কপিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

কলেজ সূত্র বলছে, অধ্যক্ষের অবসরজনিত শূন্যতা পূরণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ (এডহক কমিটি) সভা করে। গভর্নিং বডির সেই সভায় চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে বিষয়টির তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায় কলেজটির শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সিংহভাগ অংশ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দেয়।

আন্দোলনকারীরা শিক্ষকরা দাবি করেন, ‘নীতিমালা বহির্ভূতভাবে কলেজের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার ও যোগ্য শিক্ষককে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যহত থাকবে। শেষ পর্যন্ত সমাধান না হলে ওই শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট করেন বলেও জানা গেছে।’ তাদের দাবি ছিল, মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি এবং নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক নাজনীন আরা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হোক।’ তবে তাদের দাবি না মেনে এডহক কমিটি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ে পত্র পাঠায়। তবে শেষ পর্যন্ত এডহক কমিটির সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত বলে উল্লেখ করলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান স্যার আমাদের কারো কথা শোনেননি। আমরা আগেই বলেছিলাম, কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি নয়। তবে তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। আমাদের ‍যুক্তিকে তারা আবার আরেক যুক্তি দেখিয়েছিলেন। এখন কিন্তু আমাদের ভালোই লাগছে, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সিদ্দিকুর রহমান স্যারের বিশ্লেষণ ও জানায় ঘাটতি ছিল, তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে প্রমাণ পেল।’

আরেকজন শিক্ষক বলেন, ‘জেলা প্রশাসক একবার যদি আমাদের কথা শুনে বিবেচনা করতেন, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতেন, তাহলে এই জটিলতা হতো না। এমনিতেই ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত ১৭ দিন ধরে কলেজ বন্ধ ছিল। তবুও জেলা প্রশাসক নিজের জায়গায় অনড় ছিলেন। তিনি এবং সিদ্দিক স্যার সবকিছুই জানেন। তাহলে এখন এমন হলো কেন?’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো পত্রের বিষয়ে আমি এখনো জানি না। তবে যদি এ ধরনের পত্র এসে থাকে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’