ইপেপার । আজ সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
চুয়াডাঙ্গার তিতুদহে টিসিবি ও ভিজিএফের কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে রফিকুল ইসলাম খুন

প্রশাসনের উদাসীনতা, ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের মাতব্বরিকেই দুষছেন এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় ভিজিএফের কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক (৫০) নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে স্থানীয়রা। নিহত রফিকুল ইসলাম রফিক তিতুদহ গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ভিজিএফ-এর কার্ড নিয়ে এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি, জামায়াত ও বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। ইউনিয়নে মাত্র ১ হাজার ৬৫০টি কার্ড বরাদ্দ এসেছিল। সেই কার্ড ভাগাভাগি করতে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বৈঠকের উদ্যোগ নেন। আমন্ত্রণ জানানো হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা, জামায়াত ও বিএনপিকে। তবে বৈঠকের আগেই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন গ্রুপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ বাধে। এসময় প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে রফিকসহ তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এরপরই উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি আঘাতে ঘটনাস্থলেই ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রফিক নিহত হন। আহত হন রফিকের ভাই শফিকসহ অন্তত ৮ জন।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) কনক কুমার দাস জানান, ‘দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে সংঘর্ষের মূল কারণ উদ্ঘাটনে থানা পুলিশ ও ডিবি টিম কাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

এদিকে, দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত জানান, ‘বিএনপি একটা বড় দল। এখানে নেতৃত্বের লড়াই থাকবে, মতভেদ থাকবে। তাই বলে কাউকে মেরে ফেলতে হবে, এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিবে দল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘সম্পূর্ণ দোষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের। তারা স্থানীয় রাজনীতি বোঝে না।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যেখানে এক রকম অসন্তোষ অবস্থা রয়েছে, সেখানে কেন কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে বসাবসি হবে। আর যদি সেটাই হয়, তাহলে কেন এই সমস্যার বিষয়ে জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়নি। শৃঙ্খলা রাখতে জেলার নেতা বসে এটি সমাধান করতেন। ইউএনও ও প্রশাসকের মাতব্বরির কারণে এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে গেল।’

নিহত রফিকুল ইসলাম রফিকের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী ন্যায়ের পক্ষে থেকেছে সবসময়। তিনি গ্রামবাসীর কথা ভাবতেন, গ্রামবাসীর পক্ষে ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করায় তার ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে। আমি স্বামী হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।’

নিহত রফিকুল ইসলাম রফিকের ছেলে মো. রাব্বি বলেন, ‘তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন টোটন, তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার তসলিমুজ্জামান সাগর, ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রিপন হোসেনসহ আশপাশের গ্রামের ২০ জনের অধিক সন্ত্রাসী বাহিনী সকাল সাড়ে ১০টার সময় পরিকল্পিতভাবে আমার বাবার ওপর হামলা চালায়। তিতুদহ বাজারের পাশে আমার বাবাকে একা পেয়ে তারা রামদা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে বাবার মুখে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।’

নিহত রফিকুল ইসলামের ভাই একই ঘটনায় জখম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে সব থেকে বেশি কোপ মেরেছে শরিফ মিয়ার ছেলে সাগর। আর ভাইকে সব থেকে বেশি কুপিয়েছে মিলন। সেখানেই ভাই মারা যায়।’ ঘটনার বর্ণনায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সকালে আমি বাজার থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। এসময় দেখি মিলন, সাগরসহ তাদের লোকজন আমার ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি দৌঁড়ে ঠেকাতে গেলে তারা আমাকেও কোপ মারে। আমার সামনেই আমার ভাইকে তারা কুপিয়ে হত্যা করেছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘বসার বিষয়ে কোনো ব্যাপার আমার জানা নেই। আজকে বসার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক বলতে পারবেন। এটা আমার জানা নেই। ভিজিএফ-এর কার্ড এসেছে, ওই ইউনিয়নে ১৬৫০টি কার্ড বরাদ্দ আসছে। এটা নিয়ে হয়ত অসন্তোষ ছিল। এটা নিয়ে ওনারা স্থানীয়ভাবে মীীমাংসার জন্য বসতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি সে সময় সেখানে বিএনপির ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড সভাপতি-সম্পাদক দুটি পক্ষ ছিল, যাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। যার ফলে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই জখম হয়ে মারা যান, এবং তার ছোট ভাই শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন গুরুতর জখম হন।’
তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘তাদের কথা মতো আমি আজকে বসতে চেয়েছিলাম। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, বিএনপি এবং জামায়াত সবার বসার কথা ছিল। কেউ কেউ উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে বসার আগেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। আমি বসার আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম।’
আহতদের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রেসহ লাঠিসোটার আঘাতের জখম নিয়ে চারজন জরুরি বিভাগে আসেন। আহতদের মধ্যে শফিকুলের অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। অন্যদের জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া হয়।’

কেন তিতুদহ ইউনিয়নে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড:
পূর্ব বিরোধের জেরে এবং ভিজিএফ-এর পণ্য বিতরণে অনিয়মকে কেন্দ্র করে গত ২ মার্চ থেকে চুয়াডাঙ্গার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান ও সাবেক কমিটির মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যা স্থানীয় বিএনপির এই দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এরই জেরে গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় রাতেও।

জানা যায়, গত বুধবার তিতুদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। এসময় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। অভিযোগ, ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেনের পরিবারের সদস্যরা টিসিবির কার্ড ফটোকপি করে একাধিকবার পণ্য নিয়েছেন। বিষয়টি গ্রামবাসী বাঁধা দিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর কামাল হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেন, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক তার ওপর হামলার পরিকল্পনা করছেন।

৪ মার্চ সকালে কামাল হোসেন ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হলে উত্তেজিত গ্রামবাসী তাকে মারধরের চেষ্টা করে। তিনি পরিষদের ভেতরে আশ্রয় নিলে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে তাকে ঘেরাও করে রাখে। খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিককে জিম্মায় নেন। এসময় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে কিছুসময়ের মধ্যে রফিকুল ইসলাম রফিককে তার সর্মথকরা ইউএনও-এর জিম্মি থেকে এক প্রকার জোর করেই ছাড়িয়ে নেন।

এ ঘটনায় জেরে তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সাগর হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, তিনি চেয়ারম্যানের আসনে বসে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং সেই ছবি ফেসবুকে প্রচার করেছেন, যা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক সে সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর দুই মেম্বারের দুর্নীতি আমরা প্রকাশ্যে এনেছি বলেই তারা এখন গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণের চেষ্টা চালাচ্ছে। টিসিবির কার্ড নিয়েও আত্মসাৎ চলছে।’ তবে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া ‘বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে এর সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন।’ এই বিরোধ অবশেষে গতকালের হত্যাকাণ্ডে পরিণত হয়।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, ‘কোনোভাবেই এ রকম রক্তক্ষয়ী হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটত না, যদি প্রশাসন সঠিক দায়িত্ব পালন করত। এর আগেও যখন বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল, তখন প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় গণ্ডগোলের বিষয়ে সবই জানত প্রশাসন। প্রশাসন চাইলে, এটি এতোদূর অব্দি আসতো না। আগেই এই সমস্যার সমাধান করা যেতো।

ঘটনার দিন সকাল:
তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে ভিজিএফ-এর কার্ড বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে যাওয়ায় তা মেটাতে ও কার্ড বণ্টনের জন্য গতকাল শনিবার ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। যদিও তার ভাষ্যমতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে ইউএনও গণমাধ্যমের কাছে শনিবারের বৈঠক নিয়ে কিছুই জানেন না বলেই জানিয়েছিলেন। বৈঠকে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কমিটির দুটি গ্রুপের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও ইউনিয়ন জামায়াতের নেতাদেরও আমন্ত্রণ ছিল।
বৈঠকে অংশ নিতে সকাল ১০টার মধ্যে তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি হাজি খলিলুর রহমান, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বড়শলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুদ মাস্টার ও তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক উপস্থিত হন। এছাড়াও তাদের পক্ষে দর্শনা থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান শামীম উপস্থিত ছিলেন। এসময় পর্যন্ত রফিকুল ইসলাম রফিক পরিষদ প্রাঙ্গনে বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

একই সময়ে বৈঠকে অংশ নিতে তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম টোটন, টোটনের ছেলে দর্শনা থানা যুবদলের সদস্য আকাশ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রিপন লস্কর, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান তসলিমুজ্জামান সাগর ও তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক অন্তত ৫০ জন কর্মী-সর্মথক নিয়ে গিরিশনগর ও হুলিয়ামারী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দিকে যাচ্ছিলেন।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া ও তার সর্মথকরা গিরিশনগর থেকে তিতুদহ বাজার এলাকায় পৌঁছালে সেখানে রফিকুল ইসলাম রফিকের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এসময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার খবর পেয়ে হুলিয়ামারী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দিকে যাওয়া আবুল হাসেম টোটন ও তার সর্মথকরা সেখানে পৌঁছে যায়। একপর্যায়ে রফিকুল ইসলাম রফিকের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হামলার সময় রফিকুল ইসলাম রফিকের ভাই শফিকুল ইসলামসহ তাদের পক্ষের লোকজন সেখানে পৌঁছায়। এসময় উভয় পক্ষের আরও অন্তত ৮ জন জখম হন। হামলায় রফিকুল ইসলাম রফিকের মৃত্যু হলে মিলন মিয়া ও আবুল হাসেম টোটনের সমর্থকরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুকুল হোসেন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সময়ের সমীকরণকে এ ঘটনার বর্ণনা করেন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্ত সম্পন্নের পর পুলিশ লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। রাতে তারাবি নামাজ শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গার তিতুদহে টিসিবি ও ভিজিএফের কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে রফিকুল ইসলাম খুন

প্রশাসনের উদাসীনতা, ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের মাতব্বরিকেই দুষছেন এলাকাবাসী

আপলোড টাইম : ১০:০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় ভিজিএফের কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক (৫০) নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে স্থানীয়রা। নিহত রফিকুল ইসলাম রফিক তিতুদহ গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ভিজিএফ-এর কার্ড নিয়ে এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি, জামায়াত ও বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। ইউনিয়নে মাত্র ১ হাজার ৬৫০টি কার্ড বরাদ্দ এসেছিল। সেই কার্ড ভাগাভাগি করতে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বৈঠকের উদ্যোগ নেন। আমন্ত্রণ জানানো হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা, জামায়াত ও বিএনপিকে। তবে বৈঠকের আগেই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন গ্রুপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ বাধে। এসময় প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে রফিকসহ তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এরপরই উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি আঘাতে ঘটনাস্থলেই ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রফিক নিহত হন। আহত হন রফিকের ভাই শফিকসহ অন্তত ৮ জন।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) কনক কুমার দাস জানান, ‘দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে সংঘর্ষের মূল কারণ উদ্ঘাটনে থানা পুলিশ ও ডিবি টিম কাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

এদিকে, দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত জানান, ‘বিএনপি একটা বড় দল। এখানে নেতৃত্বের লড়াই থাকবে, মতভেদ থাকবে। তাই বলে কাউকে মেরে ফেলতে হবে, এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিবে দল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘সম্পূর্ণ দোষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের। তারা স্থানীয় রাজনীতি বোঝে না।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যেখানে এক রকম অসন্তোষ অবস্থা রয়েছে, সেখানে কেন কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে বসাবসি হবে। আর যদি সেটাই হয়, তাহলে কেন এই সমস্যার বিষয়ে জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়নি। শৃঙ্খলা রাখতে জেলার নেতা বসে এটি সমাধান করতেন। ইউএনও ও প্রশাসকের মাতব্বরির কারণে এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে গেল।’

নিহত রফিকুল ইসলাম রফিকের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী ন্যায়ের পক্ষে থেকেছে সবসময়। তিনি গ্রামবাসীর কথা ভাবতেন, গ্রামবাসীর পক্ষে ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করায় তার ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে। আমি স্বামী হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।’

নিহত রফিকুল ইসলাম রফিকের ছেলে মো. রাব্বি বলেন, ‘তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন টোটন, তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার তসলিমুজ্জামান সাগর, ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রিপন হোসেনসহ আশপাশের গ্রামের ২০ জনের অধিক সন্ত্রাসী বাহিনী সকাল সাড়ে ১০টার সময় পরিকল্পিতভাবে আমার বাবার ওপর হামলা চালায়। তিতুদহ বাজারের পাশে আমার বাবাকে একা পেয়ে তারা রামদা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে বাবার মুখে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।’

নিহত রফিকুল ইসলামের ভাই একই ঘটনায় জখম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে সব থেকে বেশি কোপ মেরেছে শরিফ মিয়ার ছেলে সাগর। আর ভাইকে সব থেকে বেশি কুপিয়েছে মিলন। সেখানেই ভাই মারা যায়।’ ঘটনার বর্ণনায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সকালে আমি বাজার থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। এসময় দেখি মিলন, সাগরসহ তাদের লোকজন আমার ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি দৌঁড়ে ঠেকাতে গেলে তারা আমাকেও কোপ মারে। আমার সামনেই আমার ভাইকে তারা কুপিয়ে হত্যা করেছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘বসার বিষয়ে কোনো ব্যাপার আমার জানা নেই। আজকে বসার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক বলতে পারবেন। এটা আমার জানা নেই। ভিজিএফ-এর কার্ড এসেছে, ওই ইউনিয়নে ১৬৫০টি কার্ড বরাদ্দ আসছে। এটা নিয়ে হয়ত অসন্তোষ ছিল। এটা নিয়ে ওনারা স্থানীয়ভাবে মীীমাংসার জন্য বসতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি সে সময় সেখানে বিএনপির ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড সভাপতি-সম্পাদক দুটি পক্ষ ছিল, যাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। যার ফলে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই জখম হয়ে মারা যান, এবং তার ছোট ভাই শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন গুরুতর জখম হন।’
তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘তাদের কথা মতো আমি আজকে বসতে চেয়েছিলাম। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, বিএনপি এবং জামায়াত সবার বসার কথা ছিল। কেউ কেউ উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে বসার আগেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। আমি বসার আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম।’
আহতদের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রেসহ লাঠিসোটার আঘাতের জখম নিয়ে চারজন জরুরি বিভাগে আসেন। আহতদের মধ্যে শফিকুলের অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। অন্যদের জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া হয়।’

কেন তিতুদহ ইউনিয়নে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড:
পূর্ব বিরোধের জেরে এবং ভিজিএফ-এর পণ্য বিতরণে অনিয়মকে কেন্দ্র করে গত ২ মার্চ থেকে চুয়াডাঙ্গার তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান ও সাবেক কমিটির মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যা স্থানীয় বিএনপির এই দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এরই জেরে গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় রাতেও।

জানা যায়, গত বুধবার তিতুদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। এসময় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। অভিযোগ, ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেনের পরিবারের সদস্যরা টিসিবির কার্ড ফটোকপি করে একাধিকবার পণ্য নিয়েছেন। বিষয়টি গ্রামবাসী বাঁধা দিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর কামাল হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেন, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক তার ওপর হামলার পরিকল্পনা করছেন।

৪ মার্চ সকালে কামাল হোসেন ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হলে উত্তেজিত গ্রামবাসী তাকে মারধরের চেষ্টা করে। তিনি পরিষদের ভেতরে আশ্রয় নিলে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে তাকে ঘেরাও করে রাখে। খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিককে জিম্মায় নেন। এসময় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে কিছুসময়ের মধ্যে রফিকুল ইসলাম রফিককে তার সর্মথকরা ইউএনও-এর জিম্মি থেকে এক প্রকার জোর করেই ছাড়িয়ে নেন।

এ ঘটনায় জেরে তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সাগর হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, তিনি চেয়ারম্যানের আসনে বসে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং সেই ছবি ফেসবুকে প্রচার করেছেন, যা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক সে সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর দুই মেম্বারের দুর্নীতি আমরা প্রকাশ্যে এনেছি বলেই তারা এখন গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণের চেষ্টা চালাচ্ছে। টিসিবির কার্ড নিয়েও আত্মসাৎ চলছে।’ তবে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া ‘বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে এর সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন।’ এই বিরোধ অবশেষে গতকালের হত্যাকাণ্ডে পরিণত হয়।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, ‘কোনোভাবেই এ রকম রক্তক্ষয়ী হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটত না, যদি প্রশাসন সঠিক দায়িত্ব পালন করত। এর আগেও যখন বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল, তখন প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় গণ্ডগোলের বিষয়ে সবই জানত প্রশাসন। প্রশাসন চাইলে, এটি এতোদূর অব্দি আসতো না। আগেই এই সমস্যার সমাধান করা যেতো।

ঘটনার দিন সকাল:
তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে ভিজিএফ-এর কার্ড বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে যাওয়ায় তা মেটাতে ও কার্ড বণ্টনের জন্য গতকাল শনিবার ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। যদিও তার ভাষ্যমতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে ইউএনও গণমাধ্যমের কাছে শনিবারের বৈঠক নিয়ে কিছুই জানেন না বলেই জানিয়েছিলেন। বৈঠকে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কমিটির দুটি গ্রুপের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও ইউনিয়ন জামায়াতের নেতাদেরও আমন্ত্রণ ছিল।
বৈঠকে অংশ নিতে সকাল ১০টার মধ্যে তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি হাজি খলিলুর রহমান, তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বড়শলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুদ মাস্টার ও তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক উপস্থিত হন। এছাড়াও তাদের পক্ষে দর্শনা থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান শামীম উপস্থিত ছিলেন। এসময় পর্যন্ত রফিকুল ইসলাম রফিক পরিষদ প্রাঙ্গনে বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

একই সময়ে বৈঠকে অংশ নিতে তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম টোটন, টোটনের ছেলে দর্শনা থানা যুবদলের সদস্য আকাশ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রিপন লস্কর, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান তসলিমুজ্জামান সাগর ও তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক অন্তত ৫০ জন কর্মী-সর্মথক নিয়ে গিরিশনগর ও হুলিয়ামারী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দিকে যাচ্ছিলেন।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিলন মিয়া ও তার সর্মথকরা গিরিশনগর থেকে তিতুদহ বাজার এলাকায় পৌঁছালে সেখানে রফিকুল ইসলাম রফিকের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এসময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার খবর পেয়ে হুলিয়ামারী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দিকে যাওয়া আবুল হাসেম টোটন ও তার সর্মথকরা সেখানে পৌঁছে যায়। একপর্যায়ে রফিকুল ইসলাম রফিকের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হামলার সময় রফিকুল ইসলাম রফিকের ভাই শফিকুল ইসলামসহ তাদের পক্ষের লোকজন সেখানে পৌঁছায়। এসময় উভয় পক্ষের আরও অন্তত ৮ জন জখম হন। হামলায় রফিকুল ইসলাম রফিকের মৃত্যু হলে মিলন মিয়া ও আবুল হাসেম টোটনের সমর্থকরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুকুল হোসেন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সময়ের সমীকরণকে এ ঘটনার বর্ণনা করেন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্ত সম্পন্নের পর পুলিশ লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। রাতে তারাবি নামাজ শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।