ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

শান্তি ও সম্প্রীতি আমাদের সম্পদ;দেশে সন্ত্রাসবাদের উপাদান নেই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ একটি মধ্যপন্থী মুসলিম দেশের পরিচিতি পেয়েছে। এ দেশের মাটি, পরিবেশ ও আবহাওয়ায় চরমপন্থার উপাদান নেই। শত শত বছরে এর লক্ষণ দেখা যায়নি। সহনশীল এ জাতিকে অসহিষ্ণু উগ্রধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিত্রিত করার বেপরোয়া এক তৎপরতা দেখা গেছে বিগত তিন দশকে। বিশেষ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকার অনন্ত যুদ্ধের সময়কালে এ দেশকে নেতিবাচক চিত্রায়ন করা হয়। একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং আধিপত্যবাদী শক্তি এ অপপ্রচার করে বিপুল ফায়দা তুলেছে। অন্যদিকে এর মাশুল গুনতে হয়েছে পুরো জাতিকে। সন্ত্রাসবাদ বলতে যা বোঝানো হয়, প্রকৃত বাস্তবতায় তার বৈশিষ্টগুলো যে আমাদের দেশে অনুপস্থিত তা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকেও উঠে আসছে।
সিডনিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের (আইইপি) বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক বা জিটিআই প্রকাশ করে। টেরর বা সন্ত্রাস পরিমাপে প্রতিষ্ঠানটি এর সংজ্ঞা নিরূপণ করেছে। রাষ্ট্র বা অরাষ্ট্রীয় কোনো সঙ্ঘশক্তি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় অথবা সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে আতঙ্ক ছড়িয়ে, দমনের মাধ্যমে বা ভীতি প্রদর্শন করে কোনো লক্ষ্য অর্জনের কায়দা হলো সন্ত্রাস। এমনটি করতে গিয়ে সম্পদ ধ্বংস ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। আইইপি ১৬৩টি দেশে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করেছে। জিটিআই প্রস্তুতে ১০ স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছে। নম্বর বেশি পাওয়া মানে সে দেশে রাষ্ট্র বা অরাষ্ট্রীয় সঙ্ঘ মন্দ লক্ষ্য অর্জন হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বা দেশটিতে সন্ত্রাসের উপস্থিতি রয়েছে।
২০২৫ সালের জিটিআই সূচকে বাংলাদেশ ৩ দশমিক শূন্য ৩ নম্বর পেয়ে বিশ্বে ৩৫তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। শ্রীলঙ্কা ও ভুটান শূন্য স্কোর নিয়ে তালিকায় পুরো শীর্ষে রয়েছে। অথচ শ্রীলঙ্কা গৃহযুদ্ধ পার করেছে বেশি দিন হয়নি। ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তালিকার শেষের দিকে। ভারতের অর্জিত স্কোর আমাদের দ্বিগুণের বেশি ৬ দশমিক ৪১। দেশটিতে ধর্মীয় কারণে দমনপীড়ন ও ভীতি প্রদর্শনের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বিশ্বের অন্য কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই মাত্রার সাম্প্রদায়িক পীড়ন নেই। সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানরা রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও অরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন উগ্রধর্মীয় সংগঠনের আক্রমণে লক্ষ্যবস্তু হন। বাড়িঘর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদ ও সম্পদহানির শিকার হন। বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উগ্র কর্মকাণ্ড কখনো বিস্তৃত পরিসরে দেখা যায়নি। তার পরও বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী দেশ হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস লক্ষ করা গেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের মাত্রা ভারতের চেয়েও বেশি। তবে এগুলো ধর্মের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও বিচ্ছিন্নতবাদের উৎস থেকে সৃষ্ট।
সন্ত্রাসের জন্য আইইপি যে ধরনের রাষ্ট্র ও অরাষ্ট্রীয় সঙ্ঘের লক্ষণ বৈশিষ্ট্য বলে; সেই অর্থে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কোনো সংগঠন নেই। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী তা একেবারে বিদায় নিয়েছে। তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে সেগুলো বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের সাথে মিলিয়ে দেখানোর অপচেষ্টা তীব্র মাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ও এর মিডিয়া এবং দেশীয় একশ্রেণীর গণমাধ্যম বিশেষ উদ্দেশে এই অপকর্ম করে থাকে। এমন অপচেষ্টা রুখতে হবে আমাদের।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

শান্তি ও সম্প্রীতি আমাদের সম্পদ;দেশে সন্ত্রাসবাদের উপাদান নেই

আপলোড টাইম : ০৪:৪৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ একটি মধ্যপন্থী মুসলিম দেশের পরিচিতি পেয়েছে। এ দেশের মাটি, পরিবেশ ও আবহাওয়ায় চরমপন্থার উপাদান নেই। শত শত বছরে এর লক্ষণ দেখা যায়নি। সহনশীল এ জাতিকে অসহিষ্ণু উগ্রধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিত্রিত করার বেপরোয়া এক তৎপরতা দেখা গেছে বিগত তিন দশকে। বিশেষ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকার অনন্ত যুদ্ধের সময়কালে এ দেশকে নেতিবাচক চিত্রায়ন করা হয়। একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং আধিপত্যবাদী শক্তি এ অপপ্রচার করে বিপুল ফায়দা তুলেছে। অন্যদিকে এর মাশুল গুনতে হয়েছে পুরো জাতিকে। সন্ত্রাসবাদ বলতে যা বোঝানো হয়, প্রকৃত বাস্তবতায় তার বৈশিষ্টগুলো যে আমাদের দেশে অনুপস্থিত তা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকেও উঠে আসছে।
সিডনিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের (আইইপি) বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক বা জিটিআই প্রকাশ করে। টেরর বা সন্ত্রাস পরিমাপে প্রতিষ্ঠানটি এর সংজ্ঞা নিরূপণ করেছে। রাষ্ট্র বা অরাষ্ট্রীয় কোনো সঙ্ঘশক্তি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় অথবা সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে আতঙ্ক ছড়িয়ে, দমনের মাধ্যমে বা ভীতি প্রদর্শন করে কোনো লক্ষ্য অর্জনের কায়দা হলো সন্ত্রাস। এমনটি করতে গিয়ে সম্পদ ধ্বংস ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। আইইপি ১৬৩টি দেশে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করেছে। জিটিআই প্রস্তুতে ১০ স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছে। নম্বর বেশি পাওয়া মানে সে দেশে রাষ্ট্র বা অরাষ্ট্রীয় সঙ্ঘ মন্দ লক্ষ্য অর্জন হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বা দেশটিতে সন্ত্রাসের উপস্থিতি রয়েছে।
২০২৫ সালের জিটিআই সূচকে বাংলাদেশ ৩ দশমিক শূন্য ৩ নম্বর পেয়ে বিশ্বে ৩৫তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। শ্রীলঙ্কা ও ভুটান শূন্য স্কোর নিয়ে তালিকায় পুরো শীর্ষে রয়েছে। অথচ শ্রীলঙ্কা গৃহযুদ্ধ পার করেছে বেশি দিন হয়নি। ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তালিকার শেষের দিকে। ভারতের অর্জিত স্কোর আমাদের দ্বিগুণের বেশি ৬ দশমিক ৪১। দেশটিতে ধর্মীয় কারণে দমনপীড়ন ও ভীতি প্রদর্শনের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বিশ্বের অন্য কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই মাত্রার সাম্প্রদায়িক পীড়ন নেই। সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানরা রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও অরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন উগ্রধর্মীয় সংগঠনের আক্রমণে লক্ষ্যবস্তু হন। বাড়িঘর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদ ও সম্পদহানির শিকার হন। বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উগ্র কর্মকাণ্ড কখনো বিস্তৃত পরিসরে দেখা যায়নি। তার পরও বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদী দেশ হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস লক্ষ করা গেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের মাত্রা ভারতের চেয়েও বেশি। তবে এগুলো ধর্মের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও বিচ্ছিন্নতবাদের উৎস থেকে সৃষ্ট।
সন্ত্রাসের জন্য আইইপি যে ধরনের রাষ্ট্র ও অরাষ্ট্রীয় সঙ্ঘের লক্ষণ বৈশিষ্ট্য বলে; সেই অর্থে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কোনো সংগঠন নেই। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী তা একেবারে বিদায় নিয়েছে। তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে সেগুলো বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের সাথে মিলিয়ে দেখানোর অপচেষ্টা তীব্র মাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ও এর মিডিয়া এবং দেশীয় একশ্রেণীর গণমাধ্যম বিশেষ উদ্দেশে এই অপকর্ম করে থাকে। এমন অপচেষ্টা রুখতে হবে আমাদের।