শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবেই
স্কাই নিউজকে ড. ইউনূস
- আপলোড টাইম : ০৯:৫২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
- / ২১ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সেটা তার উপস্থিতিতে হোক কিংবা অনুপস্থিতিতেই হোক। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি এ কথা বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সব প্রমাণ রয়েছে। যদিও তিনি এখন বাংলাদেশে নেই। তবে উপস্থিতিতে হোক বা অনুপস্থিতিতে হোক তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবেই। শুধু শেখ হাসিনা নন, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই তার পরিবারের সদস্য, সহযোগীদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারতকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ, তবে নয়াদিল্লির কাছ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব আসেনি।
স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়, হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ রয়েছে, পাশাপাশি গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের গণহত্যার অভিযোগও আছে। গত ৫ আগস্ট বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা পালিয়ে বর্তমানে ভারতে আছেন। তার বিরুদ্ধে গোপন আটককেন্দ্রের নেটওয়ার্ক পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ নামে এসব গোপন আটক কেন্দ্রে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন এবং কয়েক জনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
সম্প্রতি ড. ইউনূস একটি কুখ্যাত গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেছেন, যা আয়নাঘর নামে পরিচিত। তিনি বলেন, আপনার দেখার বা অনুভবের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বীভত্স আর কিছু হতে পারে না। এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস জানান, এসব অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারা এবং এর পরিসর কতটা তা নিয়ে কাজ করতে সময় লাগছে। তবে তারা সবাই এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল। পুরো সরকারই এর সঙ্গে জড়িত ছিল। এ কারণে, আপনি আলাদা করে বলতে পারবেন না কে নিজ স্বার্থে এটি করছিল বা কে নির্দেশ পালন করছিল, এটিকে সমর্থন না করলেও কে এর সঙ্গে জড়িত ছিল।
শেখ হাসিনা, সামরিক বাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধেও জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়ন পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার আগের কয়েক দিনে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে কি না বা তার আমলেই তা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংযত প্রত্যাশা রাখতে বলেছেন। কারণ বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, কেউ শাস্তি পাবে, কেউ বিচার প্রক্রিয়ায় থাকবে, আবার কেউ হয়তো অধরাই থেকে যাবে। যদিও ড. ইউনূস জানান, ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন এবং তিনি নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় এ বিষয়টির নিষ্পত্তি করে যেতে চান।
দেশের রাজনৈতিক সংকট সামলানোর পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূস দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তেও মনোযোগ দিচ্ছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। অধ্যাপক ইউনূস জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাটি গুরুতর। তিনি বাংলাদেশে প্রচুর সম্পদ রেখে গেছেন এবং সবকিছু তদন্ত করা হবে।