ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

বন্ধ হচ্ছে শিল্প-কারখানা: পরিস্থিতি সামলাতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট এবং সার্বিক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে। শেষ দুই বছরে অর্থাভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর আমদানি বন্ধ করে দেয় স্বৈরাচারী সরকার। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম ব্যর্থতার কারণে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। নিজস্ব জেনারেটরের বিদ্যুতে কারখানা চালু রাখতে গিয়ে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান। স্বৈরাচারের শেষ বছরে অর্থনীতির কোনো সূচকই ইতিবাচক ছিল না। রিজার্ভ নেমে যায় বিপজ্জনক সীমানার কাছাকাছি। প্রায় ১৫ বছরের এই ব্যর্থতার কুফল এখন দেখা দিতে শুরু করেছে। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক কারখানা। বেকার হয়ে পড়ছে হাজারও শ্রমিক-কর্মচারী। বিষয়টি গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে। একটি সংবাদপত্রে খবর আসছে, গত সাত মাসে কত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেল বা কত হাজার শ্রমিক বেকার হলো। এসব খবরে বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের বঞ্চনা, তাদের দুর্দশার নানা চিত্র এবং জুলাই বিপ্লবের পর কোনো কোনো কারখানায় হামলা লুটপাটের মতো বিষয়ও তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু কারখানাগুলো বন্ধের পেছনের কারণ সেভাবে উঠে আসছে না। বড় বড় শিল্প মালিকদের আওয়ামী তোষণ ও সুবিধা ভোগ, ব্যাংক ঋণ নিয়ে তা শিল্প খাতে ব্যবহার না করে বিদেশে পাচারের কাহিনী অনুক্ত থেকে যাচ্ছে। এতে মনে হতে পারে, শিল্প বন্ধ হওয়া অন্তর্র্বতী সরকারের ব্যর্থতা। যেমন- বেক্সিমকো গ্রুপের ১৪টি কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা। এসব কারখানার শ্রমিকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য সরকার এরই মধ্যে একটি তহবিলও গঠন করেছে। ওই খবরে জানা যাচ্ছে, গত সাত মাসে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। প্রায় ৬২ হাজার কর্মচারী-শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। বেশির ভাগ শ্রমিক এখনো তার বকেয়া মজুরি ও সার্ভিস বেনিফিটের টাকা পাননি। খবরে কারখানা বন্ধের তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে আছে আর্থিক সঙ্কট ও ক্রয়াদেশ না থাকা; আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত মালিকদের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীর আত্মগোপনে থাকা। এর মধ্যে ক্রয়াদেশ না থাকার বিষয়টি সম্ভবত সব কারখানার ক্ষেত্রে যথার্থ নয়। কারণ, গত ৫ আগস্টের পর দেশে তৈরী পোশাকের ক্রয়াদেশ সার্বিকভাবে বেড়েছে। অন্য কারণগুলোর ক্ষেত্রেও অন্তর্র্বতী সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে দায়িত্বে থাকার কারণে সরকার দায় এড়াতে পারে না। অর্থনীতির সক্ষমতা এমন হতে হবে যাতে একটি কারখানাও বন্ধ না হয়, একজন শ্রমিকও বেকার না হন। যারা বেকার হয়েছেন তারা যেন, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন। দেখা যাচ্ছে, সরকারের কাজের স্বতঃস্ফূর্ততা অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যতই ব্যাহত হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ভিন্ন অবস্থান এবং প্রভাবশালী মহলের কায়েমি স্বার্থ টিকিয়ে রাখার চাপে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হয়। এমনকি পুরো দেশবাসীর কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র সংস্কারের কাজেও সরকার এগোতে পারছে না। এ অবস্থায় সরকার শিল্প খাতে সম্ভাব্য বিপর্যয় রোধ করুক, এটুকুই কাম্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বন্ধ হচ্ছে শিল্প-কারখানা: পরিস্থিতি সামলাতে হবে

আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট এবং সার্বিক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে। শেষ দুই বছরে অর্থাভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর আমদানি বন্ধ করে দেয় স্বৈরাচারী সরকার। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম ব্যর্থতার কারণে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। নিজস্ব জেনারেটরের বিদ্যুতে কারখানা চালু রাখতে গিয়ে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান। স্বৈরাচারের শেষ বছরে অর্থনীতির কোনো সূচকই ইতিবাচক ছিল না। রিজার্ভ নেমে যায় বিপজ্জনক সীমানার কাছাকাছি। প্রায় ১৫ বছরের এই ব্যর্থতার কুফল এখন দেখা দিতে শুরু করেছে। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক কারখানা। বেকার হয়ে পড়ছে হাজারও শ্রমিক-কর্মচারী। বিষয়টি গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে। একটি সংবাদপত্রে খবর আসছে, গত সাত মাসে কত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেল বা কত হাজার শ্রমিক বেকার হলো। এসব খবরে বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের বঞ্চনা, তাদের দুর্দশার নানা চিত্র এবং জুলাই বিপ্লবের পর কোনো কোনো কারখানায় হামলা লুটপাটের মতো বিষয়ও তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু কারখানাগুলো বন্ধের পেছনের কারণ সেভাবে উঠে আসছে না। বড় বড় শিল্প মালিকদের আওয়ামী তোষণ ও সুবিধা ভোগ, ব্যাংক ঋণ নিয়ে তা শিল্প খাতে ব্যবহার না করে বিদেশে পাচারের কাহিনী অনুক্ত থেকে যাচ্ছে। এতে মনে হতে পারে, শিল্প বন্ধ হওয়া অন্তর্র্বতী সরকারের ব্যর্থতা। যেমন- বেক্সিমকো গ্রুপের ১৪টি কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা। এসব কারখানার শ্রমিকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য সরকার এরই মধ্যে একটি তহবিলও গঠন করেছে। ওই খবরে জানা যাচ্ছে, গত সাত মাসে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। প্রায় ৬২ হাজার কর্মচারী-শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। বেশির ভাগ শ্রমিক এখনো তার বকেয়া মজুরি ও সার্ভিস বেনিফিটের টাকা পাননি। খবরে কারখানা বন্ধের তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে আছে আর্থিক সঙ্কট ও ক্রয়াদেশ না থাকা; আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত মালিকদের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীর আত্মগোপনে থাকা। এর মধ্যে ক্রয়াদেশ না থাকার বিষয়টি সম্ভবত সব কারখানার ক্ষেত্রে যথার্থ নয়। কারণ, গত ৫ আগস্টের পর দেশে তৈরী পোশাকের ক্রয়াদেশ সার্বিকভাবে বেড়েছে। অন্য কারণগুলোর ক্ষেত্রেও অন্তর্র্বতী সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে দায়িত্বে থাকার কারণে সরকার দায় এড়াতে পারে না। অর্থনীতির সক্ষমতা এমন হতে হবে যাতে একটি কারখানাও বন্ধ না হয়, একজন শ্রমিকও বেকার না হন। যারা বেকার হয়েছেন তারা যেন, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন। দেখা যাচ্ছে, সরকারের কাজের স্বতঃস্ফূর্ততা অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যতই ব্যাহত হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ভিন্ন অবস্থান এবং প্রভাবশালী মহলের কায়েমি স্বার্থ টিকিয়ে রাখার চাপে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হয়। এমনকি পুরো দেশবাসীর কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র সংস্কারের কাজেও সরকার এগোতে পারছে না। এ অবস্থায় সরকার শিল্প খাতে সম্ভাব্য বিপর্যয় রোধ করুক, এটুকুই কাম্য।