ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

গুলশানে বিউটি পার্লারে আগুন, চার জনের মত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৩২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

ছেলে সৌদি আরব যাবে। বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর জন্য আগের দিন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে মিরন জমাদ্দার (৪৫) তার শ্যালক হিরন তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় থাকার জন্য ছেলে মুনিম গুলশানের শাহজাদপুরের ক-৮৪/ডি, মজুমদার ভিলার চতুর্থ তলায় সৌদিয়া হোটেলে একটি কক্ষ বুকিং দিয়ে রাখেন। শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে মিরন গতকাল সেখানে ওঠেন। বেলা ১২টার দিকে তিনি বাইরে থেকে নাশতা সেরে এসে শ্যালককেও নাশতা সারতে পাঠান। শ্যালক নাশতা সেরে ঐ ভবনের সামনে এসে দেখেন নিচতলা থেকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে ও তীব্র ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ সময় তিনি তার ভগ্নীপতিকে কল দেন। ফোন রিসিভ করেই ওপার থেকে মিরন চিত্কার করে বলতে থাকেন, ‘চারদিকে খালি ধোঁয়া। আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। দাঁড়াতে পারছি না।’ এর পরই মোবাইল ফোনের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। আগুনের খবর শুনে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নেভায়। এরপর তারা তল্লাশি চালিয়ে ঐ ভবনের ছয় তলার সিঁড়ির দরজার কাছ থেকে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। এর মধ্যে মিরনের পরিচয় শনাক্ত হয়। তার বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার দারুল হুদা বটতলা। বাকি তিন জনের নাম-পরিচয় গতকাল সোমবার রাত পর‌্যন্ত শনাক্ত হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, যারা মারা গেছে তারা সবাই পুরুষ। সিঁড়ির দরজায় তালা মারা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আগুন থেকে বাঁচার জন্য তারা ছাদে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ছাদের দরজাতে তালাবদ্ধ থাকার কারণে তারা উঠতে পারেননি। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে তারা সেখানেই মারা গেছেন।
মজুমদার ভিলার মালিক জহিরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বিদেশে থাকেন। তার ভাই পারভেজ মজুমদার বাড়িটি দেখাশোনা করেন। পারভেজের স্ত্রী ভবনটির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত বিউটি পার্লারের মালিক। সেখানে আগুন লাগার পরপরই পারভেজের স্ত্রীসহ কয়েক জন নিচে নেমে আসেন। এর একটু পরই নিচে নেমে আসেন হোটেলটির ম্যানেজার ও কর্মচারীরা। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবনের তৃতীয় তলা থেকে পাশের ভবনের দোতলায় তিন থেকে চার জন লাফিয়ে পড়ে। তারা সবাই কমবেশি আহত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোনের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান বলেন, ‘অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে ঘটনাস্থলে চার জনের মত্যু হয়েছে। আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যেই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। ভবন থেকে চার জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী ভবনটি তৈরি করা হয়নি। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না এবং সিঁড়িগুলো ছিল সরু। কীভাবে আগুন লেগেছিল, তা তদন্তের পর জানা যাবে। এদিকে, গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, মরদেহের শরীরে কোনো পোড়ার ক্ষত নেই। সম্ভবত ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তারা মারা গেছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

গুলশানে বিউটি পার্লারে আগুন, চার জনের মত্যু

আপলোড টাইম : ০৩:৩২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

ছেলে সৌদি আরব যাবে। বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর জন্য আগের দিন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে মিরন জমাদ্দার (৪৫) তার শ্যালক হিরন তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় থাকার জন্য ছেলে মুনিম গুলশানের শাহজাদপুরের ক-৮৪/ডি, মজুমদার ভিলার চতুর্থ তলায় সৌদিয়া হোটেলে একটি কক্ষ বুকিং দিয়ে রাখেন। শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে মিরন গতকাল সেখানে ওঠেন। বেলা ১২টার দিকে তিনি বাইরে থেকে নাশতা সেরে এসে শ্যালককেও নাশতা সারতে পাঠান। শ্যালক নাশতা সেরে ঐ ভবনের সামনে এসে দেখেন নিচতলা থেকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে ও তীব্র ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ সময় তিনি তার ভগ্নীপতিকে কল দেন। ফোন রিসিভ করেই ওপার থেকে মিরন চিত্কার করে বলতে থাকেন, ‘চারদিকে খালি ধোঁয়া। আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। দাঁড়াতে পারছি না।’ এর পরই মোবাইল ফোনের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। আগুনের খবর শুনে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নেভায়। এরপর তারা তল্লাশি চালিয়ে ঐ ভবনের ছয় তলার সিঁড়ির দরজার কাছ থেকে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। এর মধ্যে মিরনের পরিচয় শনাক্ত হয়। তার বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার দারুল হুদা বটতলা। বাকি তিন জনের নাম-পরিচয় গতকাল সোমবার রাত পর‌্যন্ত শনাক্ত হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, যারা মারা গেছে তারা সবাই পুরুষ। সিঁড়ির দরজায় তালা মারা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আগুন থেকে বাঁচার জন্য তারা ছাদে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ছাদের দরজাতে তালাবদ্ধ থাকার কারণে তারা উঠতে পারেননি। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে তারা সেখানেই মারা গেছেন।
মজুমদার ভিলার মালিক জহিরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বিদেশে থাকেন। তার ভাই পারভেজ মজুমদার বাড়িটি দেখাশোনা করেন। পারভেজের স্ত্রী ভবনটির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত বিউটি পার্লারের মালিক। সেখানে আগুন লাগার পরপরই পারভেজের স্ত্রীসহ কয়েক জন নিচে নেমে আসেন। এর একটু পরই নিচে নেমে আসেন হোটেলটির ম্যানেজার ও কর্মচারীরা। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবনের তৃতীয় তলা থেকে পাশের ভবনের দোতলায় তিন থেকে চার জন লাফিয়ে পড়ে। তারা সবাই কমবেশি আহত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোনের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান বলেন, ‘অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে ঘটনাস্থলে চার জনের মত্যু হয়েছে। আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যেই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। ভবন থেকে চার জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী ভবনটি তৈরি করা হয়নি। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না এবং সিঁড়িগুলো ছিল সরু। কীভাবে আগুন লেগেছিল, তা তদন্তের পর জানা যাবে। এদিকে, গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, মরদেহের শরীরে কোনো পোড়ার ক্ষত নেই। সম্ভবত ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তারা মারা গেছেন।