ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

পায়ে হেঁটে সারাদেশে আলমডাঙ্গার আকাশ

৯৫ দিনে অতিক্রম করেছেন ৪২০০ কিলোমিটার পথ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে

স্বপ্ন আর সংকল্প যদি দৃঢ় হয়, তবে পথ যত কঠিনই হোক, জয় করা সম্ভব। তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চুয়াডাঙ্গার আকাশ আলী। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই যুবক পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ঘুরেছেন। নিজের সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেই ৯৫ দিনে তিনি পাড়ি দিয়েছেন ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ। পায়ে হেঁটে সারাদেশ ভ্রমণকারী আকাশের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে। বাবা শরিফুল ইসলাম একজন কৃষক। চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় আকাশ বর্তমানে আলমডাঙ্গা খাসকররা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই তার ভ্রমণের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। তবে পায়ে হেঁটে পুরো দেশ ভ্রমণের স্বপ্ন তার মাথায় আসে বাংলাদেশি যুবক হিসেবে পঞ্চম এভারেস্ট জয়ী বাবর আলী সম্পর্কে জানার পর। এই যাত্রায় বাবর আলীই তার অনুপ্রেরণা।

আকাশ গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে পাঁচটায় নিজের বাড়ি থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। তার লক্ষ্য ছিল কোনো যানবাহন ব্যবহার না করে শুধু হেঁটে পুরো দেশের সবকয়টি জেলা ঘুরে দেখা। প্রথম দিনেই তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুর পৌঁছান, যা ছিল তার জীবনের প্রথম বড় পদযাত্রা। এরপর একে একে কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা অতিক্রম করেন।

প্রথম ১৩ দিন অর্থাৎ ১৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ১০টি জেলা পাড়ি দেন। পথে থাকতে হয়েছে কখনো মসজিদ, মাদরাসা, কখনো সরকারি ভবন, সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলো ও হোটেলে। অনেক জায়গায় স্থানীয়দের সাহায্যও পেয়েছেন, আবার কখনো কখনো এক দিনের খাবারে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ১২০ টাকা। এই দীর্ঘ ভ্রমণে তিনি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন। সম্পূর্ণ পদযাত্রায় ৬০ জনেরও বেশি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং জেলার ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেন। ভ্রমণের পাশাপাশি আকাশ আলী একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন দেশের মানুষের কাছে, ‘মাদক ছাড়ো, দক্ষ হও, সমৃদ্ধির পথে আগাও।’

তার মতে, দেশের তরুণ সমাজ যদি মাদককে না বলে এবং নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তোলে, তাহলে তারা জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। প্রতিটি জেলাতেই তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিশেষ করে তরুণদের সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি তার এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন

আকাশ জানান, তার ভ্রমণের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ ছিল বান্দরবান থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত যাত্রা। এই পথে তিনি একদিনে ৬৫ কিলোমিটার হেঁটেছেন, যা তার জন্য সবচেয়ে দীর্ঘ একদিনের পদযাত্রা ছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলেও তার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে চট্টগ্রাম। পাহাড়, সমুদ্র, ঐতিহাসিক স্থান-সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য্যে তিনি মুগ্ধ। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতার বিবেচনায় রাজশাহী জেলা তার সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে আকাশ শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান। তার ইচ্ছে, একদিন তিনি হেঁটেই এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবেন। তবে এ জন্য অর্থ ও স্পন্সর প্রয়োজন, যা এখনো তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি ভ্রমণটি সম্পন্ন করেন দুই ধাপে। প্রথম ভ্রমণ শেষ করার পর ১ ডিসেম্বর থেকে আকাশ আবারও যাত্রা শুরু করেন। ১ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই যাত্রায় তিনি অন্য ৫৪টি জেলা ভ্রমণ করেন। পদযাত্রায় ঢাকায় একদিন অবস্থান করলেও তিনি মূলত ব্যস্ত ছিলেন তার নির্ধারিত ভ্রমণসূচি বাস্তবায়নে। এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আকাশকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অর্থ ও সুযোগ-সুবিধার অভাব সত্ত্বেও তিনি নিজের প্রচেষ্টায় এই ব্যতিক্রমী কাজ সম্পন্ন করেছেন। তবে তার মতো ভ্রমণপ্রেমীদের যদি সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে তারা আরও বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে।
আকাশের এই দীর্ঘ পদযাত্রা কেবল তার ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণের একটি ধাপ নয়, বরং এটি দেশের তরুণ সমাজের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বর্তমান প্রজন্ম যেখানে প্রযুক্তি ও ভার্চ্যুয়াল জগতে সীমাবদ্ধ, সেখানে আকাশ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে, বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে জীবনকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম অনেক তরুণের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এদিকে, গতকাল সোমবার অদম্য এই যুবক আকাশ আলী দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। এসময় তাকে শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হয়। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন তাকে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেরাব্বিন সানভী, রুদ্র রাসেল ও মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার নাজমুল ইসলাম।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

পায়ে হেঁটে সারাদেশে আলমডাঙ্গার আকাশ

৯৫ দিনে অতিক্রম করেছেন ৪২০০ কিলোমিটার পথ

আপলোড টাইম : ০২:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

স্বপ্ন আর সংকল্প যদি দৃঢ় হয়, তবে পথ যত কঠিনই হোক, জয় করা সম্ভব। তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চুয়াডাঙ্গার আকাশ আলী। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই যুবক পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ঘুরেছেন। নিজের সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেই ৯৫ দিনে তিনি পাড়ি দিয়েছেন ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ। পায়ে হেঁটে সারাদেশ ভ্রমণকারী আকাশের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে। বাবা শরিফুল ইসলাম একজন কৃষক। চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় আকাশ বর্তমানে আলমডাঙ্গা খাসকররা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই তার ভ্রমণের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। তবে পায়ে হেঁটে পুরো দেশ ভ্রমণের স্বপ্ন তার মাথায় আসে বাংলাদেশি যুবক হিসেবে পঞ্চম এভারেস্ট জয়ী বাবর আলী সম্পর্কে জানার পর। এই যাত্রায় বাবর আলীই তার অনুপ্রেরণা।

আকাশ গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে পাঁচটায় নিজের বাড়ি থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। তার লক্ষ্য ছিল কোনো যানবাহন ব্যবহার না করে শুধু হেঁটে পুরো দেশের সবকয়টি জেলা ঘুরে দেখা। প্রথম দিনেই তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুর পৌঁছান, যা ছিল তার জীবনের প্রথম বড় পদযাত্রা। এরপর একে একে কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা অতিক্রম করেন।

প্রথম ১৩ দিন অর্থাৎ ১৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ১০টি জেলা পাড়ি দেন। পথে থাকতে হয়েছে কখনো মসজিদ, মাদরাসা, কখনো সরকারি ভবন, সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলো ও হোটেলে। অনেক জায়গায় স্থানীয়দের সাহায্যও পেয়েছেন, আবার কখনো কখনো এক দিনের খাবারে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ১২০ টাকা। এই দীর্ঘ ভ্রমণে তিনি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন। সম্পূর্ণ পদযাত্রায় ৬০ জনেরও বেশি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং জেলার ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেন। ভ্রমণের পাশাপাশি আকাশ আলী একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন দেশের মানুষের কাছে, ‘মাদক ছাড়ো, দক্ষ হও, সমৃদ্ধির পথে আগাও।’

তার মতে, দেশের তরুণ সমাজ যদি মাদককে না বলে এবং নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তোলে, তাহলে তারা জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। প্রতিটি জেলাতেই তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিশেষ করে তরুণদের সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি তার এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন

আকাশ জানান, তার ভ্রমণের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ ছিল বান্দরবান থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত যাত্রা। এই পথে তিনি একদিনে ৬৫ কিলোমিটার হেঁটেছেন, যা তার জন্য সবচেয়ে দীর্ঘ একদিনের পদযাত্রা ছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলেও তার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে চট্টগ্রাম। পাহাড়, সমুদ্র, ঐতিহাসিক স্থান-সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য্যে তিনি মুগ্ধ। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতার বিবেচনায় রাজশাহী জেলা তার সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে আকাশ শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান। তার ইচ্ছে, একদিন তিনি হেঁটেই এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবেন। তবে এ জন্য অর্থ ও স্পন্সর প্রয়োজন, যা এখনো তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি ভ্রমণটি সম্পন্ন করেন দুই ধাপে। প্রথম ভ্রমণ শেষ করার পর ১ ডিসেম্বর থেকে আকাশ আবারও যাত্রা শুরু করেন। ১ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই যাত্রায় তিনি অন্য ৫৪টি জেলা ভ্রমণ করেন। পদযাত্রায় ঢাকায় একদিন অবস্থান করলেও তিনি মূলত ব্যস্ত ছিলেন তার নির্ধারিত ভ্রমণসূচি বাস্তবায়নে। এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আকাশকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অর্থ ও সুযোগ-সুবিধার অভাব সত্ত্বেও তিনি নিজের প্রচেষ্টায় এই ব্যতিক্রমী কাজ সম্পন্ন করেছেন। তবে তার মতো ভ্রমণপ্রেমীদের যদি সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে তারা আরও বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে।
আকাশের এই দীর্ঘ পদযাত্রা কেবল তার ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণের একটি ধাপ নয়, বরং এটি দেশের তরুণ সমাজের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বর্তমান প্রজন্ম যেখানে প্রযুক্তি ও ভার্চ্যুয়াল জগতে সীমাবদ্ধ, সেখানে আকাশ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে, বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে জীবনকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম অনেক তরুণের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এদিকে, গতকাল সোমবার অদম্য এই যুবক আকাশ আলী দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। এসময় তাকে শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হয়। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন তাকে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেরাব্বিন সানভী, রুদ্র রাসেল ও মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার নাজমুল ইসলাম।