চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে প্রথম রোজার ইফতার বাজারে রোজাদারদের ভিড়
চমকপ্রদ খাবারের পসরায় জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু, কাবাব
- আপলোড টাইম : ১০:১৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
- / ৫৩ বার পড়া হয়েছে
অপেক্ষা সন্ধ্যা নামার, কিন্তু মন্থর বিকেল শেষই হতে চায় না। কাজ শেষে ঘরে ফেরা মানুষের ঘড়ি দেখায় সময় পার হয় এক মিনিট এক মিনিট করে। দুপুরের পর থেকেই সব ব্যস্ততা গিয়ে জড়ো হতে শুরু করে ইফতারির দোকানগুলোতে। সূর্যাস্তের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বিভিন্ন সড়কের পাশে রমজানের ৩০ দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে তৈরি হওয়া দোকানগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। ফলের দোকানেও ক্রেতাদের তাড়াহুড়ো দেখা যায় এদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এদিকে তেলের মধ্যে টগবগিয়ে ওঠা চপ, পেঁয়াজু আর বেগুনির দামে ক্রেতাদের সন্তষ্টি থাকলেও ফল কিনে দাম দিতে পকেট ফাঁকা হওয়ার অভিযোগ অনেকের।
গতকাল রোববার প্রথম রোজার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার, কোর্ট মোড়সহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা ইফতারির দোকান ঘুরে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে। সারাদিন রোজার পর ইফতারিতে সকলরেই প্রথম পছন্দ বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফলের শরবত। পৌর শহরের শান্তিপাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন ফল কিনতে এসেছিলেন বড় বাজারে। তিনি বলেন, ‘ছেলে রোজা রেখেছে, একটি তরমুজ কিনতে বলেছে। বাজার ঘুরে বড় সাইজের তরমুজ চোখেই পড়েনি। কিন্তু ছোট ছোট তরমুজগুলোর দামও অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। ১২০ টাকার নিচে সবথেকে ছোট তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝারি সাইজের তরমুজের দাম বলছে ৩০০ টাকা।’
শহরের বড় বাজারপাড়ার বাসিন্দা সালমান আলী। তিনি বলেন, ‘আমি দিনমজুর, ১০০ টাকার মধ্যে একটি তরমুজ কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মাঝারি সাইজের একটি তরমুজের দাম বলছে ২৫০ টাকা। ১২০ টাকার নিচে কোনো তরমুজই নেই, আর এই টাকায় যে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে তাও একেবারে ছোট।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এটি ব্যবসায়ীদের একটি কৌশল, কারণ রোজার পরেই দেখা যাবে বিভিন্ন জেলায় তরমুজ কেটে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। তাহলে কেন এখন তরমুজের দাম এত বেশি হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান চালানো উচিৎ, যেন রোজার সময় ব্যবসায়ীরা এভাবে ব্যবসা না করেন, এবং কৃষকেরা সব সময় তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পান।’
শহরের কোর্ট মোড়ে শুধুমাত্র রমজান মাসের জন্য স্থায়ী হয়েছে কয়েকটি ইফতারির দোকান। কথা হয় এসব দোকানের বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। স্থানীয় বাসিন্দা রাব্বি নামের এক যুবক বলেন, ‘বাড়িতে শরবত তৈরি হলেও আলুরচপ, পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন ভাজা-পোড়া ইফতার আইটেমের জন্য বাইরের দোকানই ভরসা। বিভিন্ন আকার ও প্রকারভেদে চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, টিকিয়া ইত্যাদি ৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস। তিনজনের জন্য ১০০ টাকায় পর্যাপ্ত ইফতার কেনা যায়।’
এদিকে, অন্যান্য বছরের মতো এবারও পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতেই মেহেরপুরের অলিগলিতে সরগরম হয়ে উঠেছে ইফতার বাজার। গতকাল প্রথম রোজা শুরু করেন বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। দিনশেষে ইফতারের মধ্যদিয়ে ভাঙা হবে সেই রোজা। রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ ইফতার আয়োজনকে ঘিরে মেহেরপুরে জমে উঠেছে ইফতারের বাজার। হোটেল থেকে শুরু করে মোড় ও গলির মুখের স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানে ইফতার কিনতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই অলিগলি থেকে হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসেছে জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু, কাবাবসহ নানা চমকপ্রদ ও স্বাদের খাবারের পসরা। প্রথম রোজা হওয়ায় ইফতারির জন্য পছন্দের খাবার কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন রোজাদারেরা।
তবে ইফতার সামগ্রী কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বাজারে ৫০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজের পিঁয়াজু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। ৫০ টাকা কেজি দরের বেগুন দিয়ে তৈরি বেগুনি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। ১১০ টাকা কেজি দরের ছোলা ঘুগনি হয়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। এরপরেও বরাবরের মতই রমজানের প্রথম দিনে মেহেরপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়কের দু’পাশে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা ইফতার সামগ্রীর দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এসব দোকানে বিক্রির জন্য চপ প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় বাজারে এর দাম কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম কমলেও তেল, বেসন ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পিঁয়াজু ও বেগুনির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।