নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ; প্রত্যাশা সুস্থ ধারার রাজনীতি
- আপলোড টাইম : ০৯:৪৯:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতার অল্প দিনের মধ্যে বাংলাদেশ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। স্বাধীন দেশে ক্ষমতাসীনদের বিপরীতে বিরোধী ভাবধারার রাজনৈতিক নেতাকর্মীর জন্য রাজনীতি করা ও নির্বাচনে বিজয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। লক্ষণীয়, দেশের সূচনালগ্নেই একদলীয় ব্যবস্থার উত্থান ঘটে। ফলে ৫৩ বছরে সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এ দেশে দলীয় সুস্থ রাজনীতির চর্চা হয়নি বললেই চলে। ৫ আগস্টের পরও জাতীয় জীবনে এ শূন্যতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের পতন আন্দোলনে সামনে থাকা ছাত্র নেতৃত্বের প্রতি জনমানুষের প্রত্যাশার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। তারা চান ছাত্ররা এ দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি দিয়ে এই শূন্যতা পূরণ করুক। ছাত্ররা ইতোমধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের সূচনা করেছে। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথচলা শুরু। ইতোমধ্যে ১৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০ উপজেলায় কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ কিছু শর্ত পূরণে দলটি প্রাথমিক কাজ করছে। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটিও কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ মঞ্চগুলো থেকে ফ্যাসিবাদের বিলোপে সংগ্রাম জারির পাশাপাশি এনসিপিকে একটি কার্যকর জাতীয় রাজনৈতিক দলে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম এগিয়ে নেবেন তারা। ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশবাসীর দুর্বিষহ জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতাকে নতুন দলের যাত্রাকালে এর নেতৃত্ব উল্লেখ করেছেন। মূলত জাতিকে বিভিন্ন বর্গে বিভক্ত করে হাসিনা স্বৈরশাসন চালাতে পেরেছেন। এনসিপির ভাষ্যমতে, জাতিকে আর বিভক্ত করা যাবে না। অতীতের ইস্যু নিয়ে বিভাজন করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করা হবে না। এনসিপির কর্মসূচি হবে ভবিষ্যৎমুখী, তাদের মনোযোগের কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ সবার আগে’। নবগঠিত দলটি কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করতে পেরেছে। জাতি এখন এর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে লক্ষ করছে। দেশের রাজনৈতিক পরিসরে আমাদের যেসব সঙ্কট রয়েছে; দলটিকে সাফল্য পেতে হলে সেগুলো অতিক্রম করতে হবে। রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চার নজির তৈরি করতে হবে। দলীয় তহবিল নিয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অস্বচ্ছতা রয়েছে। দলীয় পদ ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার ও দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক নেতারা। এতে রমরমা বাণিজ্য হয়। এই পেশিশক্তি ব্যবহার করে দলে অবস্থান পোক্ত করেন সুযোগসন্ধানীরা। দলের খরচ জোগানোর সাথে এর একটি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মূল সংগঠন সহযোগী ছাত্রসংগঠনকে ব্যবহার করে হীন ক্ষমতার স্বার্থে। চরদখলের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় ক্যাডারদের ফাও খাওয়া, চাঁদবাজি করা ও প্রতিপক্ষের অধিকার হরণকে নিজেদের অধিকার মনে করে। এ সংস্কৃতির কারণে দলে মন্দ লোকের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ে। তাদের দুর্নীতি অনিয়ম দেখে হতাশ মেধাবীরা রাজনীতিতে আসতে চান না। নতুন দলের নেতৃত্ব যদি প্রচলিত সব রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক দিকগুলো পরিহার করতে পারে; তাতে জনগণ গত শুক্রবার আত্মপ্রকাশ হওয়া দলকে আন্তরিক স্বাগত জানাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই এবং মেধাবীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হবেন। নবগঠিত এনসিপি বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদলে ভূমিকা রাখবে- দেশের পরিবর্তনকামী নাগরিকের এটিই প্রত্যাশা।