তারাবি নামাজের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল শনিবার প্রথম তারাবি ও শেষ রাতে সেহরির পর আজ শুরু হয়েছে রোজা। প্রথম তারাবিকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মুসল্লিরা পাঞ্জাবি-পাজামা ও টুপি পরে মসজিদে আসেন।

গতকাল তারাবির সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা মডেল মসজিদ, পৌর মডেল মসজিদ, বড় বাজার জামে মসজিদ, থানা মসজিদ, পৌরসভা জামে মসজিদ, জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান জামে মসজিদসহ শহরের বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নামাজের আগে প্রতিটি মসজিদেই ধর্মীয়, সামাজিক ও রমজানের তাৎপর্যসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বয়ান দেন ইমাম ও খতিবরা।

এশার নামাজের আগে কোর্ট জামে মসজিদে প্রথম তারাবির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন ইমাম রুহুল আমিন। তিনি বলেন, রমজান মাসের চাঁদ দেখার পর প্রথম তারাবির নামাজ ও ভোরে সেহরির পর রোজা শুরু হবে। শনিবার রাতে তারাবির নামাজ পড়তে হবে এবং শেষ রাতে সাহরি খেতে হবে। রমজান মাসের শেষ জুমাকে জুমাতুল বিদা হিসেবে পালন করা হয়। জুমাতুল বিদা দ্বারা রমজানের শেষ জুমা বোঝানো হয়। জুমাতুল বিদা রমজানের অন্যান্য জুমার মতোই ফজিলত রাখে।

প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, স্থানীয় মডেল মসজিদসহ পাড়া-মহল্লার মসজিদেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না প্রথম তারাবিতে। কোনো কোনো মসজিদে মুসল্লিরা মসজিদের আঙিনাতেও জায়নামাজ, চাদর ও পাটি বিছিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করেছে।

আলমডাঙ্গা পৌর শহরের প্রধান জামে মসজিদসহ উপজেলা মডেল মসজিদ, কাচারি জামে মসজিদ, দারুস সালাম জামে মসজিদ, থানা জামে মসজিদ, গবিন্দপুর, কোর্টপাড়া, বাবুপাড়া, আনন্দধাম, রাজিকাগঞ্জসহ অন্যান্য মসজিদে এশার নামাজের পর প্রথম তারাবি নামাজ আদায় করা হয়। প্রথম তারাবির সময়ে এসকল মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় দেখা গেছে। ইমাম হাফেজ মওলানা আকরাম হোসেন বলেন, ‘ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো সালাত, যা রোজার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন-রমজানে দিনে রোজা ও রাতে তারাবি নামাজ আদায় করলে, গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়।’

এছাড়াও গত রাতে প্রথম তারাবি নামাজ আদায়ের কেন্দ্রবিন্দুতে আসমানখালীর বিভিন্ন মসজিদতে মুসলমানদের ঢল দেখতে পাওয়া গেছে। পাঞ্জাবি-পাজামা পরে এবং জামায়নামাজ নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হন ধর্মপ্রাণ জনগণ। ভোগাইল বগাদী, মদীনাবাগ তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম, হাফেজ মাওলানা সেলিম রেজা বলেন, ‘দেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে। রোজার প্রথম দিন রবিবার।’ তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও রমজান মাসে মসজিদে খতমে তারাবী পড়ানোর বিশেষ নির্দেশনা ইসলামিক ফাউন্ডেশন জারি করেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, তারাবির নামাজে প্রথম ৬ রমজানে কোরআন শরীফের দেড় পারা করে এবং পরবর্তী ২১ দিন এক পারা করে পাঠ করা হবে। বগাদী, গাংপাড়া মসজিদের ইমাম হাফেজ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার রমজান শুরু হওয়ায়, আগামী ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।’

অপরদিকে, আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় দামুড়হুদায় গতকাল প্রথম তারাবি নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ায় গতকাল রাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রথম তারাবির নামাজ পড়েছে। শেষ রাতে সাহরি খেয়ে আজ থেকে রোজা রাখছেন।

দামুড়হুদায় তারাবির নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বলেন, ‘রাতে আমরা তারাবি নামাজ শেষ করেছি। আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন, তাহলে শেষ রাতে সাহরি খেয়ে রোজা রাখব। আল্লাহ তা’আলার হুকুম-আহকাম মেনে চলার চেষ্টা করব। আমরা রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা বলবো না, কারো গীবত করবো না, কারো সাথে ঝগড়া করবো না। সকলের সাথে সোহার্দপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে রোজা পালন করব। বেশি বেশি আল্লাহর কাছে মাফ চাইবো যাতে বিগত দিনের গুনাহ আল্লাহ মাফ করেন।’

দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের ইমাম একলাছুর রহমান বলেন, ‘মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে বাজারে যেসব খাবারের দোকান আছে, সেগুলো পর্দার সহিত রাখতে হবে এবং প্রকাশ্যে ধূমপান ও পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি রোজা থাকা অবস্থায় গালিগালাজ কিংবা পরনিন্দা করলে তার রোজা হালকা হয়ে যাবে। তাই আমরা চেষ্টা করব পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে রোজা পালন করার।’

অন্যদিকে, জীবননগরেও প্রথম তারাবির নামাজের মধ্যদিয়ে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। তারাবির নামাজ আদায়ের পর, শেষ রাতে সেহরি খেয়ে আজ রোজা রাখছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ইতিমধ্যে রোজার আমেজ বিরাজ করছে জীবননগর উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে। গতকাল রমজানের প্রথম তারাবির নামাজে মসজিদে মুসলমানদের ঢল নেমেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জীবননগর উপজেলার মডেল মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়। রাত ৮টায় নামাজ শুরু হলেও, তার অনেক আগেই মুসল্লিরা পাঞ্জাবি-পাজামা পরে জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে হাজির হয়। অন্যান্য মসজিদেও মুসল্লিদের ভিড় ছিল। এতটাই ভিড়, কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। রমজানের আগমনে সবার মধ্যে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাস, আনন্দ বিরাজ করছে ছোট থেকে সব বয়সের মানুষের মধ্যে।